বরগুনায় একাধিক প্রার্থী নিয়ে বিপাকে আ.লীগ
আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে বরগুনার একাধিক প্রার্থী নিয়ে বিপাকে পড়েছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে যোগ্য প্রার্থীর সংকটে রয়েছে বিএনপি। এখন পর্যন্ত পৌরসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক না হলেও ডিসেম্বরে পৌরসভা নির্বাচনের কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আর এবারই দলীয়ভাবে নির্বাচন হতে যাওয়ায়, দলের মনোনয়ন পেতে জেলা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন বরগুনা পৌরসভাগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
বরগুনার ছয়টি উপজেলায় মোট চারটি পৌরসভা রয়েছে। এর মধ্যে বরগুনা ও আমতলী পৌরসভাকে প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত করা হয়েছে। পাথরঘাটা পৌরসভাকে উন্নীত করা হয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণির পৌরসভায় এবং বেতাগী পৌরসভাটি হচ্ছে তৃতীয় শ্রেণির পৌরসভা। বর্তমানে পাথরঘাটা পৌরসভায় বিএনপি সমর্থিত মেয়র এবং বাকি তিনটি পৌরসভায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থীত মেয়র।
পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত না হওয়ায় প্রায় দুই ডজন প্রার্থী দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। আসন্ন পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বরগুনার সকল পৌরসভার রাস্তার মোড়ে-মোড়ে এমন কি অলিগলিও ছেয়ে গেছে এসব প্রার্থীদের ছবি সম্বলিত ডিজিটাল ব্যানার ও ফেস্টুনে।
এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে মেয়র প্রার্থীরা অংশগ্রহণের পাশাপাশি ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিভিন্ন তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রার্থীদের এমন তৎপরতায় ভোটারদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
এবারের পৌর নির্বাচনে এসব প্রার্থীদের নিয়ে পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে চায়ের দোকানেও চলছে বিচার বিশ্লেষণ। কোন দল থেকে কে পাবেন মনোনয়ন। এদের মাঝে কে হবেন আগামীর পৌরপিতা। পৌর এলাকায় এসব নিয়ে এখন আলোচনার ঝড় বইছে।
অন্যদিকে, সচেতন মহল মনে করেন দলীয় মনোনয়নের উপরেই নির্ভর করছে এসব প্রার্থীদের জয়-পরাজয়। এছাড়া বরগুনার পৌরসভাগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই নিজ দলের মূল প্রতিদ্বন্দ্বি।
বরগুনা পৌরসভা : প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভার বর্তমান মেয়র জেলা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহদাত হোসেন। বরগুনার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংস্কার, রাস্তা-ঘাট ও ড্রেন-কালভার্ট সংস্কার এবং প্রশস্তকরণ, সার্কিট হাউজ ঈদগাহ মাঠ, নাথপট্টি লেক ও টাউন হল চত্বরে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাগানিয়া ভাস্কর্য, অগ্নি ঝরা একাত্তর, নির্মাণ এবং বরগুনা পৌরসভার ক্রোক ব্রিজ থেকে টাউন হল চত্বর পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার ব্যস্ততম সড়কটিকে দুই লেনে উন্নীত করা ছাড়াও পৌর শহরে অনেক সৌন্দর্য বর্ধক কাজ করে বরগুনা পৌরসভাকে একটি অধুনিক পৌরসভায় রুপান্তর করেছেন তিনি। তার এ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জন্য আসন্ন পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌঁড়ে অন্য প্রার্থীদের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে রয়েছেন তিনি।
এছাড়া প্রচারণায় নেমেছেন বরগুনা পৌরসভার সাবেক মেয়র, বরগুনা জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি অ্যাড. মো. শাহজাহান, বরগুনা জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি অ্যাড. মো. কামরুল আহসান মহারাজ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. হুমায়ূন করীর। জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরগুনা পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. রইসুল আলম রিপন।
এছাড়া বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী পৌর বিএনপির সভাপতি অ্যাড. মো. নুরুল আমিনের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে তিনি এখনো প্রচার-প্রচারণা শুরু করেননি। এছাড়াও সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বরগুনার কৃতি সাংবাদিক সোহেল হাফিজ।
আমতলী পৌরসভা : গত পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে আমতলী পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয় আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মতিয়ার রহমান। তার হাত ধরেই এ পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মর্যাদা লাভ করে।
মেয়র মো. মতিয়ার রহমানে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য এবারও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তার। তিনি ছাড়াও সাবেক মেয়র নাজমুল আহসান নান্নু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. এম এ কাদের, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গাজী সামছুল হক, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আমতলী পৌরসভার প্যানেল মেয়র জি এম মুছা রয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে।
আর বিএনপি প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন আমতলী পৌর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক তুহিন মৃধা। তিনি গত নির্বাচনেও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন।
বেতাগী পৌরসভা : তৃতীয় শ্রেণির এ পৌরসভার বর্তমান মেয়র বেতাগী উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সাবেক সদস্য মো. আলতাফ হোসেন বিশ্বাস।
গত পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে বেতাগী উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. শাহজাহান কবীরকে পরাজিত করে তৃতীয় শ্রেণির এ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পরে তিনি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নানাভাবে বিতর্কিত হন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের গ্রুপিং এর কারণে তিনি তার দলীয় পদটিও হারান। এসবের কারণে আসন্ন পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে তার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। যার কারণে তিনি আসন্ন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।
মো. আলতাফ হোসেন বিশ্বাস ছাড়াও বেতাগী পৌরসভার সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আবুল কাশেম, বেতাগী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাকসুদুর রহমান ফোরকান, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. খলিলুর রহমান প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন।
এছাড়াও বিএনপি প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে নির্বাচনী মাঠে আছেন বেতাগী পৌর বিএনপি যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. জাহাঙ্গীর কবীর ও মো. হুমায়ূন কবীর এবং, কেন্দ্রীয় যুব দলের সদস্য মো. কামারুজ্জামান মিলন। এছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির নাসির উদ্দীন পিযুষ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হাফেজ মাহবুবুর রহমান রয়েছেন।
পাথরঘাটা পৌরসভা : দ্বিতীয় শ্রেণির এই পৌরসভার বর্তমান মেয়র মল্লিক মো. আইউব। গত নির্বাচনে তিনি বিএনপির সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থীত প্রার্থী আনোয়ার হোসেন আকনকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনিও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নানাভাবে বিতর্কিত হন। তার বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি, টেন্ডার ও পৌর তহবিলের অর্থ আত্মসাতসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে অনাস্থা দিয়েছিল পাথরঘাটা পৌরসভার সকল কাউন্সিলররা। এসবের কারণে সংবাদ শিরনামও হয়েছিলেন তিনি।
এমন কর্মকাণ্ডে তার প্রতি আস্থা হারিয়েছেন জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরাও। যার কারণে আসন্ন পৌর নির্বাচনে বিএনপি থেকে তার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা কম। দলীয় মনোনয়ন না পেলে তিনি আসন্ন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন এমন গুঞ্জণও শোনা যাচ্ছে।
এছাড়াও ছোট্ট এ পৌরসভায় আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের তিনজন প্রার্থী দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় নির্বাচনী মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তারা হচ্ছেন, পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন আকন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. মো. জাবির হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. বেলায়েত হোসেন।
এছাড়াও নির্বাচনী মাঠে আছেন, পাথরঘাটা পৌর বিএনরি যুগ্ম-আহ্বায়ক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাড. খন্দকার মাহবুবুর রহমানের স্নেহভাজন অ্যাড. মো. মুনিরুজ্জামান সবুজ, পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মরিয়ম চৌধুরী জেবু, এবং জেলা বিএনপির সদস্য ও পাথরঘাটা পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. সাহাবুদ্দীন সাকু। আর সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন চৌধুরী মো. মুনির।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সম্পর্কে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীল কবীর জাগো নিউজকে জানান, কেন্দ্র থেকে কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত তারা কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি। কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পরই তারা প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করবেন বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক মোল্লা জাগো নিউজকে জানান, পৌর নির্বাচনে বিএনপিতে প্রার্থী সংকট নেই। ইতোমধ্যেই বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এখন শুধু কেন্দ্রীয় নির্দেশনা আর সিদ্ধান্তের ব্যাপার মাত্র। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এআরএ/এমএস