শেরপুরের ৬ ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত
বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পানিতে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে পানিবৃদ্ধির ফলে শেরপুর সদর উপজেলার চরাঞ্চলের চরপক্ষীমারী, চরমোচারিয়া, বেতমারী-ঘুঘুরাকান্দি, রৌহা, লছমনপুর ও বলাইরচর ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।
ব্রহ্মপুত্র নদের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের পুরাতন ভাঙনের অংশ দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করায় এসব গ্রামের অধিকাংশ রোপা আমন ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এতে কৃষকরা দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন।
রোববার শেরপুর-জামালপুর সড়কের পোড়ার দোকান কজওয়ের ওপর দিয়ে আধা ফুট উচ্চতায় বন্যার পানি প্রবাহিত হয়। এতে ওই সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছেন, বন্যার পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী কুলুরচর এবং ৬ নং চর ও ৭ নং চরে নদী ভাঙন সৃষ্টি হওয়ায় বসতভিটাসহ ৬২টি ঘর নদীগর্ভে বিলীণ হয়েছে। নিচু এলাকায় বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার পানিবন্দি মানুষদের নৌকা এবং কলার ভেলা ছাড়া যাতায়াতের কোনো উপায় নেই।
চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আকবর আলী জানান, তার ইউনিয়নের সাত পাইকা গ্রামের ৫ শতাধিক একর জমির রোপা আমন ধান এখন কয়েক ফুট পানির নিচে। তলিয়ে গেছে অনেক সবজি বাগানও। বন্যায় সব গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কুলুরচর এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে ৫৬টি বসতঘর ভিটাসহ নদীগর্ভে চলে গেছে।
তিনি বলেন, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার জন্য বিষয়টি লিখিতভাবে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
কামারের চর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, তার ইউনিয়নের ৬ নং চর, ৭ নং চর, পয়োস্তীর চর ও গোয়ালের চর গ্রামের অধিকাংশ নিচু এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে গেছে। রোপা আমন ধান ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ৬ নং চরের ৩টি বাড়ি এবং ৭ নং চরের বড় বাড়ি এলাকা ব্রহ্মপুত্র নদের গ্রাসে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরো জানান, নদীর ভাঙনের তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পাবে। বন্যা কবলিত অঞ্চলসমূহের জন্য ত্রাণ সামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পর্যবেক্ষক (গ্যাজ রিডার) মো. রইছ উদ্দিন জানিয়েছেন, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। শেরপুর ফেরিঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ সে.মি. পানি বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ দশমিক ৬০ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।
শেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পিকন কুমার সাহা জানান, প্রথম দফা পাহাড়ি ঢলে সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে ১ হাজার ২৩৬ হেক্টর জমির আমন আবাদ সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এবার ব্রহ্মপুত্র নদের পানিবৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়নের প্রায় ২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির আমন আবাদ ও ১৫০ হেক্টর জমির সবজির আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে, এখনও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করা হয়নি। তবে পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে সামনে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
হাকিম বাবুল/এমএএস/আরআইপি