মির্জাপুরে বালুতে একাট্টা যুবলীগ-বিএনপি
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে যুবলীগ নেতা আবু সাঈদ, বিএনপি নেতা সহিদুর মৃধা, কুব্বত আলী মৃধা, ছালাম মৃধা, রজব মৃধা, শাহ আলম মৃধার ছত্রছায়ায় নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে। জানা গেছে, প্রায় দেড় মাস ধরে নদী থেকে খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে এ বালু তোলা হচ্ছে। ফলে নদী তীরবর্তী ফসলি জমি, বসত ঘর, কাঠবাগান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবাদ করলে সংশ্লিষ্ট জমি ও বাড়ির মালিকদের বালু উত্তোলনকারীরা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় শনিবার ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে ইদ্রিস মৃধা ও শামছুল মিয়া বালু উত্তোলনকারীদের নাম উল্লেখ করে মির্জাপুর থানায় পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এলাকাবাসী জানান, উপজেলার বংশাই নদীতে বর্ষার পানি আসার পর থেকে মির্জাপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) যুবলীগ নেতা আবু সাইদ মিয়া, বিএনপি নেতা সহিদুর মৃধা, কুব্বত আলী মৃধা, ছালাম মৃধা, রজব মৃধা, শাহ আলম মৃধার নেতৃত্বে উপজেলার বংশাই নদীর গোড়াইল ও চাকলেশ্বর এলাকায় খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলা শুরু করেন।
গত ২৪ ও ২৬ জুন ভ্রাম্যমাণ আদালতের দুই বিচারক মির্জাপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সেলিম রেজা খননযন্ত্র ও ট্রলারের ছয়জন এবং মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুম আহাম্মেদ ১৪ জনকে দু`দফায় ১৫ দিন করে কারাদণ্ড দিলে বালু তোলা বন্ধ থাকে।
পরে এক সপ্তাহ পর পুনরায় চারটি খননযন্ত্র দিয়ে প্রতিদিন বালু তোলা শুরু হয়। ফলে নদী তীরবর্তী ফসলি জমি ও বসত বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হতে থাকে। বালু উত্তোলনকারীদের ভয়ে এলাকার কেউই মুখ খোলার সাহস পাননা।
সর্বশেষ গত শুক্রবার সন্ধায় গোড়াইল ও চাকলেশ্বর গ্রামে বংশাই নদীর তীরবর্তী এলাকায় খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলা শুরু করলে ফসলি জমি ও কাঠবাগান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এছাড়া দুইটি বসত বাড়িও হুমকির মুখে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্তরা এর প্রতিবাদ করলে বালু উত্তোলনকারীরা তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেন।
পরে শনিবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন দলবদ্ধভাবে খননযন্ত্র ও বালু বহনকারী ট্রলারের মালিকদের ধাওয়া করেন। এতে বালু উত্তোলনকারীরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে ক্ষতিগ্রস্তরা সেখান থেকে চলে যান। পরে ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে চাকলেশ্বর গ্রামের ইদ্রিস আলী মৃধা ও গোড়াইল গ্রামের শামসুল মিয়া আবু সাইদকে প্রধান আসামি করে ছয়জনকে আসামি করে মির্জাপুর থানায় পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ করেন।
শনিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে বালু উত্তোলনকারীদের ধাওয়া করার পর খননযন্ত্র ও বালু বহনকারী ট্রলার ত্রিমোহন এলাকায় অবস্থিত সাইদ মিয়ার নদী তীরবর্তী ইট ভাটার কাছে অপেক্ষমান রাখা হয়েছে। এছাড়া বালু তোলার ফলে নদী তীরে অবস্থিত বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালন লাইনের খুঁটিও হুমকিতে রয়েছে।
ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে শামসুল মিয়ার স্ত্রী রূপভানু জাগো নিউজকে বলেন, নদীগর্ভে ঘর যাওয়ার আশঙ্কায় একটি ঘর সকালে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছি। বাকি বসত ঘর, গরু রাখার ঘরটিও সরানোর চেষ্টা করছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ইদ্রিস আলী মৃধা জাগো নিউজকে জানান, খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলার ফলে তার ৪৫ শতাংশ জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়া একটি কাঠবাগানের ২৭৫টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নদীগর্ভে যাওয়ায় জমি ও গাছসহ প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর প্রতিবাদ করলে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আবু সাইদ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, আমার কোনো ড্রেজার (খননযন্ত্র) নেই। তিনিসহ বিএনপি নেতা সহিদুর মৃধা, কুব্বত আলী মৃধা, রজব মৃধা, শাহ আলম মৃধা, কালিয়াকৈরের মিল্টন, হাটুভাঙ্গা এলাকার কবীর শিকদারসহ সকলকে সঙ্গে রেখেই বালু উত্তোলন করি।
মির্জাপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইন উদ্দিন অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. সেলিম রেজা জাগো নিউজকে জানান, তিনি প্রশিক্ষণে রয়েছেন। কর্মস্থলে ফিরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুম আহাম্মেদ জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এমজেড/পিআর