নানান সমস্যার বেড়াজালে রাঙামাটির চিকিৎসা সেবা


প্রকাশিত: ০২:১৬ পিএম, ২৯ জুলাই ২০১৫

নানা সমস্যার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে রাঙামাটি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। পাশাপাশি কর্মরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দায়িত্বে অবহেলাসহ এ বিভাগের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। এসব কারণে রাঙামাটিতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা। সেবা থেকে বঞ্চিত এলাকার সাধারণ লোকজন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালসহ জেলার গোটা স্বাস্থ্য বিভাগ চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মরত চিকিৎসক, সেবা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। পাশাপাশি কর্মরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দায়িত্বে অবহেলাসহ রয়েছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।

অভিযোগে জানা যায়, চিকিৎসকরা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেন না। অধিক সময় ব্যস্ত থাকেন প্রাইভেট চেম্বারে বাণিজ্যিক চিকিৎসা নিয়ে। শহর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে ডাক্তারদের প্রাইভেট চেম্বার ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার। হাসপাতালে রোগিদের জন্য পর্যাপ্ত সরকারি বরাদ্দ থাকলেও রোগিদের উন্নত খাবার পরিবশন করা হয় না। তাতে সব সময় হয় নয়-ছয়। স্বাস্থ্যকর্মীরা কর্মস্থল গিয়ে সেবা দেন না। অনেকে ঘরে বসেই বেতন-ভাতা তোলেন।

বিনামূল্যে পাওয়া সরকারি ওষুধ কালোবাজারে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ফার্মেসিগুলোতে। ফলে বেহাল দশায় রাঙামাটি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এমন অবস্থায় ইতোমধ্যে চালু হয়েছে জেনারেল হাসপাতালের করনারি বিভাগের বহুতল ভবনে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাস।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, লোকবল, ওষুধ, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল। জেনারেল হাসপাতালসহ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে শতাধিক ডাক্তারের পদ শূন্য। শূন্য পড়ে আছে নার্সের বহুসংখ্যক পদ। ডাক্তার ও নার্স শূন্যতাসহ লোকবল স্বল্পতার কারণে জেলার সবকটি উপজেলায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। ওষুধ সঙ্কট প্রকট। আ্যাম্বুলেন্স, এক্সরে ও ইসিজি মেশিন নেই জেনারেল হাসপাতালে। অন্যদিকে কর্মরত ডাক্তার ও নার্সরা নিয়মিত কর্মস্থলে থাকেন না।

দেখা গেছে, বর্তমানে জেলা সদরের জেনারেল হাসপাতালসহ উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও অ্যাম্বুলেন্সের অভাব। হাসপাতালে যে অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে তা রোগি পরিবহনের উপযোগী নয়। উপজেলাগুলোতে জলপথে দ্রুত চলাচল উপযোগী বিশেষ অ্যাম্বুলেন্স নেই। একশ শয্যাবিশিষ্ট রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে অত্যাধুনিক চিকিৎসার যন্ত্রপাতি ও ব্লাডব্যাংকের অভাবে রোগিরা সঠিক চিকিৎসা পান না। জেলায় কোনোরকম জটিল রোগের চিকিৎসা এবং অস্ত্রপোচারের ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিনিয়ত জটিল রোগিদের চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ জেলার বাইরে পাঠানো হয়। অনেক রোগিকে উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে অকালে মৃত্যুবরণ করতে হচ্ছে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, বর্তমানে জেলায় অনুমোদিত ১৭৫ চিকিৎসক পদে মাত্র ৭৪ চিকিৎসক কর্মরত আছেন। ১০১ চিকিৎসক পদ শূন্য। এছাড়া নার্স ৩৫টি, মেডিকেল টেকনোলজির ফার্মাসিস্ট ২৮টি, স্যানিটারি ৮টি এবং ডেন্টালের ৭টি, ল্যাব ৫টি, রেডিওলোজির ৪টি পদসহ স্বাস্থ্য বিভাগের বিপুলসংখ্যক পদ খালি রয়েছে।

অপর একটি সূত্র জানায়, জেলা সদরের জেনারেল হাসপাতালসহ উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ওষুধ সঙ্কট, বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের জন্য এক্সরে, ইসিজিসহ প্রভৃতির পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধা না থাকায় রোগিদের রোগ নির্ণয়ে যেতে হচ্ছে জেলা শহরের বিভিন্ন ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে। এছাড়া হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোর অপরিচ্ছন্নতার কারণে রোগিরা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে চান না। হাসপাতালে রোগিদের জন্য যে খাবার দেয়া হয় সেগুলো অত্যন্ত নিম্নমানের। অন্যদিকে পার্বত্য জেলায় ম্যালেরিয়া আক্রান্ত, মৃত্যুর ঝুঁকি এবং হার কমাতে ৫ বছর মেয়াদে যে প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন নানা অনিয়মের কারণে সেটিরও কাঙ্খিত সাফল্য আসেনি।

এছাড়া জেলার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবার মানোন্নয়নে রাঙ্গামাটি জেলা সদরে আরেকটি দশ শয্যার নতুন হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হলেও গত এক দশকে সেটি নির্মিত হয়নি। জেলা পরিষদ ২০০৫ সালে শহরের পুরাতন হাসপাতালকে দশ শয্যার নতুন হাসপাতালে উন্নীত করে একটি নতুন হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা নিলেও তা আজো আলোর মুখ দেখেনি।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. স্নেহ কান্তি চাকমা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সমস্যার কথা স্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, জেনারেল হাসপাতালসহ জেলায় স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবার মান বাড়াতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। জেনারেল হাসপাতালের সম্প্রসারণ কাজ চলছে। হাসপাতালে বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শিগগিরই স্বাস্থ্য বিভাগে লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হবে।

এমজেড/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।