নীলফামারীতে ভিক্ষুকদের ব্যতিক্রমধর্মী আপ্যায়ন


প্রকাশিত: ০১:৪২ পিএম, ২৭ জুলাই ২০১৫

ধনীর বাড়ির বিয়ে অথবা অন্য কোনো অনুষ্ঠানের দাওয়াতপত্র না পেয়েও ভিক্ষুকরা ছুটে যান। দুটো ভাত তরকারির জন্য ঠেলাঠেলি কিংবা গলা ধাক্কা খেতে হয় তাদের। কখনো বা দাওয়াতি মেহমানদের খাবারের পর যদি খাবার থাকে তাহলে তাদের  দুই মুঠো খাবার জোটে পলিথিনের প্যাকেটে। পলিথিনের প্যাকেটে কখনো ভাত-ডাল দেয়া হলেও তাতে থাকে না মাংস। এভাবেই হাত পেতে জীবন-জীবিকা চলে তাদের।

তবে এবার রীতিমতো দাওয়াত দিয়ে ডেকে এনে বিশাল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে টেবিল-চেয়ারে বসিয়ে খাওয়ানো হলো নীলফামারীর ভিক্ষুকদের। শুধু সন্মানের সঙ্গে খাওয়ানো নয় তাদের সকলের হাতে একটি করে রজনীগন্ধা দিয়ে তাদের বরণ করা হয়।
 
সোমবার  দুপুরে নীলফামারীর শিল্প প্রতিষ্ঠান নীলসাগর গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ান আহসান হাবিব লেলিন এমন একটি ব্যতিক্রমধর্মী দাওয়াতের আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে উপজেলার ভিক্ষাবৃত্তি পরিহারকারী দেড় হাজার নারী পুরুষের প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়।

নীলসাগর গ্রুপের কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের অনুভব সেভিংস অ্যান্ড কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের ক্যাম্পাসে এই আয়োজন করা হয়।

এই আয়োজনে ওই উপজেলার দেড় হাজার ভিক্ষাবৃত্তি পরিহারকারীদের সঙ্গে উপস্থিত হয়েছিলেন নীলফামারী-৪ আসনের সংসদ সদস্য বিরোধী দলীয় হুইপ আলহাজ্ব শওকত চৌধুরী, কিশোরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান রশিদুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান, র্যাব ও পুলিশ বাহিনীর দুইটি ইউনিট ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন স্থরের মানুষজন।


অনুষ্ঠানে আসা উপজেলার রনচণ্ডি গ্রামের আমজাদ হোসেন (৬৫) বলেন, যখন ভিক্ষা করতাম তখন কোনো দাওয়াত বাড়িতে চিঠির মাধ্যমে দাওয়াত পাইনি। পেটের ভোগের তাগিদে ওই সব দাওয়াতি অনুষ্ঠানে ছুটে যেতাম। পেতাম গালমন্দ ও গলা ধাক্কা। কেউবা দিতো মেহমানদের খাওয়া শেষে পড়ে থাকা ভাত ডালের পলিথিনের একটা প্যাকেট। কোন দিন টেবিল চেয়ারে বসে পোলাও মাংস খাওয়ার ভাগ্যে জুটেনি। আজ এমন খাওয়া খেলাম যা জন্মের পরে বাপ দাদারাও আমাকে খাওয়াতে পারেনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন যখন দাওয়াত পত্র নিয়ে এই দাওয়াতি অনুষ্ঠানে এলাম তখন আমাকেসহ অন্য যে ভিক্ষুকরা এসেছে তাদের একটি করে হাতে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন নীলসাগর গ্রুপের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তখন ভাবছিলাম এটাকি স্বপ্ন দেখছি না বাস্তবতা।

সরেজমিনে দেখা যায়  চেয়ার টেবিলে প্লেট গ্লাস এক সময়ের এই ভিক্ষুকদের পোলাও, বুটের ডাল, মুরগির রোষ্ট, গরুমাংস, খাসিরমাংস, ডিম, সালাত, লেবু,দই মিষ্টি ও কোল্ডডিংকস খেতে।
 
দাওয়াত খেতে আসা কিশোরগঞ্জ সরকারপাড়ার মৃত মহিমুদ্দিনের বিধবা স্ত্রী আবাদন বেওয়া (৬০) বলেন, মোর জীবনে এতো ভালা খাওয়া দেখোনি। আইজ শুধু দেখাদেখি নোহায়। দেখিনু আর খানু। আইজ মোর জীবন সার্থক হইল বাহে।

শিল্প প্রতিষ্ঠান নীলসাগর গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আহসান হাবিব লেলিন বলেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে উপজেলা পরিষদ কর্তৃক ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল এক বছর আগে।

এ জন্য উপজেলা পরিষদ তাদের বিভিন্নভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করেছে। তিনি বলেন এদের নিয়ে চিন্তা করলাম যে এই উপজেলার প্রায় দেড় হাজার ভিক্ষুক ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিলেও এদের তো কোনো বিয়ে বাড়ি অথবা বড় কোনো অনুষ্ঠানে কেউ দাওয়াত করে খাওয়াননি। তাই এই আয়োজন করেছি। ভাবছি প্রতি বছর এদের একদিন করে এ ভাবে দাওয়াত করে খাওয়াবো।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এই উপজেলা ভিক্ষাবৃত্তি পরিহারকারী গরিব ও ভিক্ষুকদের জন্য নীলসাগর গ্রুপ যে ব্যবস্থা করেছেন তা সত্যিই একটি ভালো উদ্যোগ এবং দেশের একটি মডেল হওয়ার মতো ঘটনা।

তিনি বলেন ২০১৪ সালের ৫ জুলাই কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হয়। সে সময় থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় দেড় হাজার নারী পুরুষ ভিক্ষুককে ছাগল গরু ভেড়া,হাঁস মুরগি এবং ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য নগদ ৫ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়। এ ছাড়া একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে তাদের সদস্য করে তাদের পুনর্বাসন করে দেয়া হয়েছে। এতে তারা আজ সকলে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়ে নিজেরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে।

জাহেদুল ইসলাম/এসকেডি/এমআরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।