রাজউকের চার শীর্ষ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চার শীর্ষস্থানীয় প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে নামে বেনামে একাধিক প্লট নেওয়া, সুবিধার বিনিময়ে বেশি দামে বুলডোজার ক্রয়, ঠিকাদারদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।
বুধবার গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বরাবর লেখা আবেদনে এই অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। সংসদীয় কমিটির সভাপতির কার্যালয়ের কর্মকর্তারা অভিযোগপত্র পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কমিটির সভাপতি দবিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, আমি এখনো অভিযোগটি দেখিনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তা নিয়ে কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে কমিটির একজন সদস্য জানান, কমিটির কাছে রাজউক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আগেও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও কোন কাজে আসেনি। এনিয়ে কমিটির একাধিক বৈঠকে ক্ষোভও প্রকাশ করা হয়েছে।
লিখিত আবেদনে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (প্রকল্প) আনোয়ার হোসেন, পূর্বাচল প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক উজ্জল কুমার মল্লিক, মেকানিক্যাল সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহ দিদারুল আলম শামীম ও উত্তরা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রায়হানুল ফেরদৌসের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, প্রধান প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বিগত জোট সরকার আমলে রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পসহ অধিকাংশ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপি-জামায়াতের আস্থাভাজন হওয়ায় তাকে বিভিন্ন প্রকল্পের পিডি বানানো হয়েছিল। বর্তমানে তিনি সরকারের ঘনিষ্ঠ সেজে প্রভাব বিস্তার করছেন। তিনি পূর্বাচলের পিডি থাকাকালীন সময়ে মাটি ভরাটের কাজে মোটা অংকের কমিশনের বিনিময়ে কোটি কোটি টাকার বিল পরিশোধ করেন।
পূর্বাচলের গাজীপুর অংশে মাটির কাজে কনসালটেন্ট এর নামে প্রিসেকশন ঘাপলা করে ফলস মেজারমেন্ট এর নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি পূর্বাচল লিংক রোডে ইতিপূর্বে ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ না করিয়েই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এরপর নতুন ঠিকাদার আতাউর রহমান খানকে দিয়ে কাজ করিয়ে অপকর্ম ঢাকার চেষ্টা করছেন।
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে মেকানিক্যাল সার্কেলের আওতায় একটি বিল্ডিং ভাঙ্গার মেশিন বুলডোজার কেনা হয়। মেশিনটি ১০ কোটি টাকায় সরবরাহ দেখিয়ে প্রায় এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি ও তার সিন্ডিকেটের প্রকৌশলীরা। বর্তমানে এর বাজার দর অনেক কম হওয়ায় এ নিয়ে পূর্তমন্ত্রী অসেন্তাষও প্রকাশ করেছেন।
তার উত্তরাসহ বিভিন্ন প্রকল্পে একাধিক প্লট রয়েছে নামে বেনামে। তিনি প্রায়ই থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও জাপানসহ বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করেন। তার সহযোগী পূর্বাচল প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক উজ্জল কুমার মল্লিক, মেকানিক্যাল সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহ দিদারুল আলম শামীম ও উত্তরা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রায়হানুল ফেরদৌস এর দুর্নীতি ও চক্রান্তে রাজউকের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে ধীরগতি হওয়ায় সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
এছাড়া মেকানিক্যাল সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দিদারুল আলম শামীমের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত কোটায় নামে বেনামে প্রায় ২০টি প্লট হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগে দাবি করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা হয়েও মালিবাগে ব্যক্তিগত অফিস খুলে সেখানে তিনি লোকজনকে দিয়ে নকশা অনুমোদন করিয়ে দেওয়ার ব্যবসা শুরু করেছেন।
নকশা পাসে অনিয়ম ও জালিয়াতির কারণে ওয়ান ইলেভেনের সরকার আমলে রাজউকে পরিচালিত টাস্কফোর্স তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সুপারিশ করলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
অভিযোগে বলা হয়েছে, পূর্বাচল প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক উজ্জল কুমার বিকাশের বিরুদ্ধেও নামে বেনামে একাধিক প্লট নেওয়া, পূর্তমন্ত্রীর এলাকার লোক হওয়ায় মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন পরিচয় দিয়ে প্রকল্প পরিচালকের উপর খবরদারি করা, পূর্বাচল প্রকল্পের এপিপিসহ বিভিন্ন সংশোধনের নামে তার কাছের দুই থেকে তিনজন ঠিকাদারকে ব্যাপক সুবিধা পাইয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ঠিকাদারদের অবৈধ সুবিধা দিয়ে তিনি রাজধানীতে ফ্লাট ও গাড়ি উপঢৌকন নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এইচএস/এসএইচএস/আরআইপি