বিমানবন্দর ছিল জেএমবির প্রধান টার্গেট

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:০৩ এএম, ২৮ মার্চ ২০১৫

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হামলাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপর্ণ স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেছিল জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর মতো জেএমবি সদস্যরা নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিতে চেয়েছিল। মাসখানেক আগে বিমানবন্দরের অদূরে দক্ষিণখানে বাসা ভাড়া নিয়ে পরীক্ষিত সদস্যদের একত্রিত করছিলেন জেএমবির এহসার সদস্য আ. রাজ্জাক হায়দার ওরফে মামুন। নাশকতার জন্য গ্রেনেডসহ পর্যাপ্ত বিস্ফোরকও সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। কিন্তু একটি মোবাইল কল তার নাশকতার এ পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

প্রায় দেড় মাস আগে সন্দেহজনক ওই মোবাইল কল ট্র্যাকিংয়ের পর র‍্যাবের গোয়েন্দারা পিছু নেয় জেএমবির চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমীর এবং এহসার সদস্য আ. রাজ্জাক হায়দার ওরফে মামুনের। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাজধানীর দক্ষিণখান থেকে মামুন ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেএমবির নাশকতার এই পরিকল্পনার কথা জানতে পেরেছে র‍্যাব।

র‍্যাব ইন্টেলিন্স উইংয়ের একটি সূত্র বলেছে, চট্টগ্রামের পাহাড়ে জেএমবির অস্ত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অভিযানের সময় গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া মোবাইল ফোনের ওই সূত্র ধরেই সন্ধান মেলে মামুনের। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাজধানীর দক্ষিণখানে পূর্ব মোল্লারটেক প্রেমবাগান এলাকায় অভিযান চালিয়ে র্যাব জেএমবির চার সদস্যকে গ্রেফতার করে।

মামুন ছাড়া গ্রেফতার হওয়া অপর তিনজন হলেন জেএমবির নওগাঁ জেলার আমীর এবং গায়েরে এহসার সদস্য জিয়াউল বারী ওরফে ডালিম, জেএমবির দিনাজপুর জেলার আমীর ও এহসার সদস্য মো. কোরবান আলী ওরফে মোহাম্মদ আলী ওরফে হাঞ্জালা, জেএমবির রংপুর জেলার অর্থ সম্পাদক ও গায়েরে এহসার সদস্য মো. মোফাজ্জল হোসেন।

র‍্যাব সদস্যরা এ সময় তাদের কাছ থেকে আর্জেস গ্রেনেড, হাতবোমা, পেট্রলবোমা ও বিপুল পরিমাণ শক্তিশালী বিস্ফোরক উদ্ধার করে। বৃহস্পতিবার রাতের ওই অভিযানে অংশ নেয়া র‍্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে মামুন গ্রেনেড বিস্ফোরণের হুমকি দিয়েছিলেন। গ্রেনেড হাতে তেড়ে এসেছিলেন র‍্যাব সদস্যদের দিকে। প্রায় ঘণ্টাখানেক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির পর তাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে কৌশলে গ্রেফতার করা হয়।

র‍্যাব ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ বলেন, গ্রেফতারকৃত জেএমবি সদস্যরা চলতি মাসেই বাংলাদেশ বিমানের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুর রবের প্রেমবাগান এলাকার ৩ নম্বর বাড়িটি ভাড়া নেয়। পরিকল্পিতভাবে রাজধানীতে বড় ধরনের নাশকতা করার জন্য ওই বাড়িটি ভাড়া নিয়ে একত্রিত হয়েছিল তারা।

শুক্রবার সকালে দক্ষিণখানের মোল্লারটেক প্রেমবাগান এলাকার ওই বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিচয় গোপন করে চলতি মাসেই ওপরে টিনশেড দুই রুমের ওই বাড়িটি সাত হাজার টাকায় ভাড়া নেন আ. রাজ্জাক হায়দার ওরফে মামুন। বাড়িতে গ্রেফতার চারজন ছাড়া অন্য কেউ ছিলেন না। এমনকি ঘরে একটি মাত্র চৌকি ছাড়া কোনো আসবাবপত্রও দেখা যায়নি। রান্নাঘরে একটি গ্যাসের চুলা, তার ওপর পাতিলে ভাত ও মেঝেতে রান্না করা মুরগির মাংসের তরকারি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল চাল, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন ধরনের মসলা।

টিনশেড ওই বাড়ির দুটি কক্ষে থাকতেন জেএমবি সদস্যরা। একটি কক্ষে শুধু একটি কাঠের চৌকি। উদ্ধার বিস্ফোরকগুলো সেখানে রাখা ছিল। পাশের কক্ষের দেয়ালে ঝুলছিল একটি সবুজ রঙের পাঞ্জাবি ও সাদা পাজামা।

বাড়িটির মালিক বাংলাদেশ বিমানের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুর রউফের স্ত্রী হুসনে আরা বেগম ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে পাশেই একই ধরনের একটি আধাপাকা বাসায় থাকেন। হুসনে আরা বেগম জানান, গ্রেফতারকৃতদের একজন নিজেকে মামুন এবং গার্মেন্ট ব্যবসায়ী পরিচয়ে বাড়িটি ভাড়া নেন। ওই সময় তিনি জানান, তিনি তার পরিবার নিয়েই ওই বাসায় থাকবেন। তবে স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হওয়ায় এখনই তিনি আসবেন না। এপ্রিল মাসের শেষদিকে তিনি ঢাকায় আসবেন।

র‍্যাব সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে তাদের নাশকতার একটি পরিকল্পনার ছক পাওয়া গেছে। এর মধ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ স্থাপনায় হামলা করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছিল তারা। পরিকল্পনা অনুযায়ী হামলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর মতো জেএমবি সদস্যরাও নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিতে চেয়েছিল। এজন্য তারা বিমানবন্দরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় নতুন করে ঘাঁটি তৈরি করেন। এর আগে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) বিমানবন্দরে ড্রোন হামলার পরিকল্পনা করে। তবে তার আগেই গোয়েন্দাদের ফাঁদে পড়ে জঙ্গিরা।

অভিযানে বিস্ফোরকসহ উদ্ধারকৃত সরঞ্জাম : র্যাব সদস্যরা ওই বাড়ি থেকে একটি তাজা আর্জেস গ্রেনেড, ৩৪টি নন-ইলেকট্রিক ডেটোনেটর, ১৪টি ইলেকট্রিক ডেটোনেটর, ৩০ মিটার করডেক্স, আড়াই কেজি স্পি­ন্টার, আধা কেজি গানপাউডার, এক কেজি প্লাস্টিক এক্সপ্লোসভ, চয়টি বড় ককটেল, ২৪টি ছোট ককটেল, ১২টি পেট্রলবোমা, দুই কেজি কাচের মার্বেল, আধা কেজি সালফিউরিক এসিড, একটি ডেটোনেটর বক্স, এক বান্ডেল ইলেক্ট্রনিক তারসহ অস্ত্র প্রশিক্ষণের বই ও নাম সংবলিত বিপুল পরিমাণ জিহাদি বই উদ্ধার করে র্যাব সদস্যরা। সূত্র : যুগান্তর

বিএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।