টানা চতুর্থবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে স্কটল্যান্ড। তারা অবশ্য সুখবর পেয়েছে আরও। স্কটল্যান্ডের মেয়েরাও আসন্ন নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে। এখন চাইলে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবে তারা।
স্কটল্যান্ড এই বাড়তি প্রেরণা নিয়ে বিশ্বকাপেও দারুণ কিছু করে দেখাতে মরিয়ে থাকবে। বাছাই পর্বে দারুণ করা দলটির চাওয়া থাকবে অন্তত সুপার এইটে খেলার। এজন্য অবশ্য তাদের কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের সঙ্গে একই গ্রুপে আছে তারা।
রিজিওনাল ধাপ পেরিয়ে সাত দলের মধ্যে নেমে আসে ইউরোপিয়ান কোয়ালিফায়ার। রাউন্ড রবিন লিগের মাধ্যমে শীর্ষে থাকা দুই দল জায়গা করে নেওয়ার নিয়ম ছিল। যেখানে আয়ারল্যান্ডকে দুইয়ে রেখে শীর্ষে থেকে শেষ করে স্কটল্যান্ড। তারা আইরিশদের টুর্নামেন্টের মুখোমুখি লড়াইয়ে হারিয়েছিল।
স্কটল্যান্ডকে ম্যাচ জেতাতে পারেন বোলার ব্র্যাড কোরি। ২৫ বছর বয়সী এই পেসার বাছাই পর্বেও ছিলেন দুর্দান্ত। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে কেবল ১৩ রানে পাঁচ উইকেট নেন তিনি। স্কটিশ কোনো বোলারের সেটিই সেরা বোলিং ফিগার। ৬ ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীও ছিলেন তিনি।
ব্যাট হাতে স্কটল্যান্ডের ভরসা হতে পারেন ওলি হেয়ার্স ও রিচি বেরিংটন। দু’জনই বাছাই পর্বে টুর্নামেন্টের প্রথম ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন। ৬ ম্যাচে সমান ২৪৮ রান করেন তারা। বিশ্বকাপেও তাদের কাছ থেকে দারুণ কিছু চাইবে স্কটল্যান্ড।
৪ জুন ইংল্যান্ডের সঙ্গে বড় ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে স্কটল্যান্ডের বিশ্বকাপ মিশন। ৭ জুন নামিবিয়া ও ৯ জুন ওমানের মুখোমুখি হবে তারা। গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে স্কটল্যান্ড লড়বে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, ১৬ জুন।
জন্ম: ৩ এপ্রিল, ১৯৮৭ (প্রিটোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা), বয়স: ৩৭
দলে ভূমিকা: অলরাউন্ডার
ব্যাকগ্রাউন্ড
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়াতে জন্ম। রিচি বেরিংটনের বেড়ে ওঠা অবশ্য স্কটল্যান্ডেই। দেশটির বয়সভিত্তিক পর্যায়ের প্রায় সব ধাপেই খেলেছেন তিনি। ১৭ বছর বয়সে ২০০৬ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়ে যান। এর দু’বছর পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে অভিষেক হয় তার।
এরপর লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে এখন স্কটল্যান্ডের অধিনায়কও হয়েছেন বেরিংটন। তার নেতৃত্বেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাবে স্কটিশরা।
অধিনায়কত্ব ও সাফল্য
২০২২ সালের জুনে কাইল কোয়েৎজারের পর অধিনায়কত্ব পান তিনি। তার জন্য পরীক্ষার বড় মঞ্চ হতে যাচ্ছে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
এর আগেও অবশ্য স্কটল্যান্ডকে সাফল্যের পথ দেখিয়েছেন রিচে বেরিংটন। ২০১২ সালে প্রথম আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশকে হারায় স্কটল্যান্ড। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওই টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৫৬ বলে সেঞ্চুরি করে দলকে জয় এনে দিতে দিতে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি।
ব্যাটিংয়ের সঙ্গে পেস বোলিংটাও মাঝেমধ্যে করেন বেরিংটন। এখন অবধি স্কটল্যান্ডের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে ৮৭ ম্যাচে মাঠে নেমেছেন তিনি। ৩১.৮৭ গড় ও ১৩২ স্ট্রাইক রেটে ২০৪০ রান করেছেন বেরিংটন। ২৮টি উইকেটও আছে তার ঝুঁলিতে।
স্কটল্যান্ডকে ১৬টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে সমান ৮টি করে জয় ও হার পেয়েছেন বেরিংটন। তার নেতৃত্বেই এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছে স্কটিশরা। এর আগে একটি সুসংবাদও পেয়েছে তারা, দেশটির মেয়েরাও খেলবে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বাড়তি প্রেরণা হিসেবে কাজে লাগিয়ে ২০ দলের বিশ্বকাপে নিজেদেরও আলাদা করে চেনাতে চাইবে বেরিংটনের দল।
জন্ম: ১৫ মে, ১৯৭৩ (পিটারমারিৎজবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকা)। বয়স: ৫১
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট, লিস্ট-এ, টি-টোয়েন্টি সবই খেলেছেন ডগ ওয়াটসন; কিন্তু কখনোই তার খেলা হয়নি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। দক্ষিণ আফ্রিকান এই ক্রিকেটার পরে নাম করেছেন কোচ হিসেবে। তার তত্ত্ববধানে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলবে স্কটল্যান্ড, দলটিকে এতদূর নিয়ে আসার পেছনেও ভূমিকা রেখেছেন তিনি।
১৩৯টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে ৩৬.৮০ গড়ে ৭৬৯২ রান করেছেন তিনি। লিস্ট-এ ক্রিকেটে ১৩৬ ম্যাচে ৪৩৫৩ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। টি-টোয়েন্টিতে ১৩ ম্যাচে করেছেন ৩০৩ রান। ২০০৯ সালে খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি টানেন তিনি।
এরপর থেকে বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট ও ঘরোয়া লিগের দলগুলোর সঙ্গে কাজ করেন ওয়াটসন। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের সঙ্গে কাজ করেছেন আইপিএলে। নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডের কোচ ছিলেন ২০২২ সালের জুনে। ওখান থেকে অন্তবর্তী দায়িত্ব পালন করেন কিউইদের জাতীয় ক্রিকেট দলের সঙ্গে।
২০২৩ সালে অল্প সময়ের জন্য ওয়াটসনকে নিয়োগ দেয় স্কটল্যান্ড। তখন তার দায়িত্ব ছিল ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব পার করা। তাতে দারুণভাবে সফল হন তিনি। শেষ অবধি ওয়ানডে বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে না পারলেও জিম্বাবুয়ের ওই বাছাই পর্বে তারা হারায় আয়ারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রকে।
পরের বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ঠিকই জায়গা করে নিয়েছে তারা। হয়েছিল ইউরোপিয়ান অঞ্চলের বাছাই পর্বের চ্যাম্পিয়নও। এরপর এ বছরের মার্চে তাকে স্থায়ী কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয় স্কটল্যান্ড ক্রিকেট।
রিচি বেরিংটন (অধিনায়ক), ম্যাথু ক্রস, ব্র্যাড কুরি, ক্রিস গ্রিভস, ওলি হেয়ার্স, জ্যাক জার্ভিস, মাইকেল জোন্স, ব্র্যান্ডন ম্যাকমুলেন, জর্জ মানসি, সাফিয়ান শরিফ, ক্রিস সোল, চার্লি টিয়ার, মার্ক ওয়াট, ব্র্যাড হুইল।
(প্রথম পর্ব: গ্রুপ পর্ব), (দ্বিতীয় পর্ব: সুপার এইট, সুপার টেন)
কেনসিংটন ওভাল, বার্বাডোজ
স্কটল্যান্ড 90/0 (10 ওভার)
ইংল্যান্ড 0/0 (0.0 ওভার)
ফল: বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত
কেনসিংটন ওভাল, বার্বাডোজ
নামিবিয়া 155/9 (20.0 ওভার)
স্কটল্যান্ড 157/5 (18.3 ওভার )
ফল: স্কটল্যান্ড ৫ উইকেটে জয়ী
স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়াম, অ্যান্টিগা
ওমান 150/ 7 (20.0 ওভার)
স্কটল্যান্ড 153/3 (13.1 ওভার)
ফল: স্কোল্যান্ড ৭ উইকেটে জয়ী।
ড্যারেন স্যামি ক্রিকেট গ্রাউন্ড, সেন্ট লুসিয়া
স্কটল্যান্ড 180/5 (20 ওভার)
অস্ট্রেলিয়া 186/5 (19.4 ওভার)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৫ উইকেটে জয়ী