টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আগেও খেলা হয়েছিল পাপুয়া নিউগিনির। এমনকি সেবার বাংলাদেশের মুখোমুখিও হয়েছিল তারা। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ওই ম্যাচে ৮৮ রানে জয় পায় বাংলাদেশ, যেটি এখনও টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রানের ব্যবধানে জয়। ওই জয় বাংলাদেশকে অনিশ্চিয়তা কাটিয়ে নিয়ে গিয়েছিল পরের রাউন্ডে।
মাঝে এক বিশ্বকাপ বিরতি দিয়ে আবারও ফিরছে পাপুয়া নিউগিনি। এবার তারা বিশ্বকাপ খেলতে আসছে নিজেদের অঞ্চলের বাছাই পর্বে সেরা হয়ে। আগেরবার বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি তারা। এবার নিশ্চিতভাবেই ওই স্বাদ পেতে চাইবে তারা।
পাপুয়া নিউগিনির অধিনায়ক হিসেবে এবারও থাকছেন ৩৭ বছর বয়সী আসাদ ভালা। ওয়ানডেতে অলরাউন্ডার র্যাংকিংয়ে তিনি আছেন চার নম্বরে। ব্যাটে-বলে তার ওপর নির্ভর করবে দল। ৫৬ ম্যাচ খেলে ১৬১৮ রান করা ওপেনার টনি উরাও দলের জন্য নির্ভরতার জায়গা। টি-টোয়েন্টিতে তার আছে সেঞ্চুরিও।
উগান্ডার সবসময়ের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী ৩০ বছর বয়সী নরম্যান ভানুয়া। গত বছর ফিলিপাইনের বিপক্ষে ৯ রানে ৫ উইকেট নেওয়া কাবুয়া মোরিয়া আছেন এবারও। তারা থাকছেন বিশ্বকাপে। ২০২১ বিশ্বকাপ খেলা ১০ জনকে এবারও নিয়ে যাচ্ছে পাপুয়া নিউগিনি।
২০ দল নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য সব মহাদেশ থেকেই দল তুলে এনেছে আইসিসি। র্যাংকিংয়ে ২০তম পাপুয়া নিউগিনি এসেছে বাছাই পর্বের সেরা হয়ে। পাপুয়া নিউগিনি পূর্ব এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে একমাত্র দল হিসেবে বিশ্বকাপে আসছে। বাছাই পর্বে তারা একটি ম্যাচও হারেনি।
২ জুন স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলবে পাপুয়া নিউগিনি। ৬ জুন পাপুয়া নিউগিনি ও ১৪ জুন আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে তারা। শেষ ম্যাচে ২৪ জুন পাপুয়া নিউগিনির প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড।
জন্ম: ৫ আগস্ট, ১৯৮৭; বয়স: ৩৬
জাতীয় দলে ভূমিকা: অলরাউন্ডার
আসাদ ভালা পাপুয়া নিউগিনির ক্রিকেটে প্রতিষ্ঠিত হবেন, সেটি বোঝা গিয়েছিল তার অল্প বয়স থেকেই। ২০০৪ সালে বাংলাদেশের মাটিতে হওয়া অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দিয়ে শুরু হয় তার দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার। পরের বছরই অভিষেক হয় মূল জাতীয় দলের হয়ে।
এরপর থেকে ১৯ বছর পাপুয়া নিউগিনির হয়ে খেলছেন তিনি। অনেকদিন ধরে করছেন অধিনায়কত্বও। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও তার নেতৃত্বেই খেলতে যাবে পাপুয়া নিউগিনি।
২০০৫ সাল থেকে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে পাপুয়া নিউগিনির প্রতিনিধিত্ব করলেও আন্তর্জাতিক ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি খেলতে আসাদ ভালার অপেক্ষা ছিল বেশ লম্বা। কারণ তখনও এসব ম্যাচ খেলার মর্যাদাই অর্জন করতে পারেনি পাপুয়া নিউগিনি। ২০১৪ সালে হংকংয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ও পরের বছর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় তার।
২০১৮ সাল থেকে পাপুয়া নিউগিনির অধিনায়কত্বের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন ভালা। তার নেতৃত্বেই হারানো ওয়ানডে স্ট্যাটাস ফিরিয়ে আনে পাপুয়া নিউগিনি। এরপর ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো তাদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে, ওখানেও অধিনায়কত্ব করেন ভালা।
ভালার একটু আলাদা বৈচিত্র্যও আছে। বাঁ-হাতে ব্যাট করলেও বলটা করেন ডান হাতে। এখন পর্যন্ত পাপুয়া নিউগিনির হয়ে ৫৯ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মাঠে নেমেছেন তিনি। এর মধ্যে ৫৬ ইনিংস ব্যাট করে ২৬.৪৬ গড় ও ১১৮.৩৬ স্ট্রাইক রেটে ১২৪৪ রান করেছেন ভালা। বল হাতে পেয়েছেন ৩৪ উইকেট।
বড় দলগুলোর বিপক্ষে খুব বেশি খেলার সুযোগ না পেলেও নিয়মিতই টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে পাপুয়া নিউগিনি। বিশ্বকাপের আগে অবধি ৫৪ ম্যাচে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ভালা। এর মধ্যে ৩২টিতে জয় আর মাত্র ২১ ম্যাচে হেরেছে তার দল।
প্রায় ১৯ বছরের ক্যারিয়ারে নানা উত্থান-পতনেরই সাক্ষী হয়েছেন আসাদ ভালা। দেশের হয়ে খেলেছেন, নেতৃত্বও দিয়েছেন বিশ্বকাপের মঞ্চে। মাঝে এক বিশ্বকাপ বিরতি দিয়ে আবারও ফিরেছে তার দল। এই টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম জয় খুঁজে ফিরবে পাপুয়া নিউগিনি।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচেই সেঞ্চুরি হাঁকান ভালা। ২০১৫-১৭ আইসিসি কন্টিনেন্টাল কাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তিনি খেলেছিলেন ম্যাচ জেতানো ১২৪ রানের অপরাজিত ইনিংস। এরপর ২০১৮ সালে পাপুয়া নিউগিনির ক্রিকেট অ্যাওয়ার্ডে তাকে টনি এলি মেডেল দেয়া হয়। যা দেশটির বর্ষসেরা ক্রিকেটারের স্বীকৃতি।
জন্ম: ১৪ মে, ১৯৮৩ (হারারে, জিম্বাবুয়ে), বয়স: ৪১
কোচিং ক্যারিয়ার এবং অভিজ্ঞতা
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাতেন্দা তাইবুর অভিষেক হয়েছিল মাত্র ১৮ বছর বয়সে। তারও দুই বছর আগে খেলেছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট। অধিনায়কত্বের ভারও তার কাঁধে এসে পড়েছিল খুব দ্রুতই। ২০০৩ সালে সহ-অধিনায়ক হন।
পরের বছরই হিথ স্ট্রিক দায়িত্ব ছাড়লে হয়ে যান অধিনায়ক। তখন টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়সী অধিনায়ক ছিলেন তিনি। ২০১৯ সালে এসে তার চেয়ে ৮ দিন কম বয়সে অধিনায়কত্ব করে ওই রেকর্ড ভেঙে দেন আফগানিস্তানের রশিদ খান।
অল্প বয়সে অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর ওই দায়িত্ব বেশিদিন চালিয়ে যেতে পারেননি। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের নানা অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে এক বছর পরই নেতৃত্ব ছাড়তে হয় তাকে। এরপর জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট থেকে দুই বছরের বিরতি নেন তাইবু। ফিরে আসেন ২০০৭ সালে।
ক্রিকেট ক্যারিয়ারকেও খুব দ্রুতই বিদায় বলে দেন। ২৯ বছর বয়সে ক্রিকেট থেকে অবসরে যান। তখন কারণ হিসেবে তাইবু জানিয়েছিলেন, এখন চার্চে বেশি সময় দেন তিনি। এরপর অবশ্য আবারও ক্রিকেটে ফিরেছেন। কয়েক মাস আগে দায়িত্ব নিয়েছেন পাপুয়া নিউগিনি ক্রিকেট দলের। তার অধীনেই এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাবে তারা।
খেলোয়াড়ী জীবন
জিম্বাবুয়ের হয়ে ২৮টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ৩০.৩১ গড়ে ১৫৪৬ রান করেছেন তাইবু, আছে একটি সেঞ্চুরি। ওয়ানডেতে ১৫০ ম্যাচ খেলে ২ সেঞ্চুরিতে ৩৩৯৩ রান করেছিলেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার, এই ফরম্যাটে দুটি সেঞ্চুরিও হাঁকিয়েছেন।
জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেওয়ার পর কিছুদিন ইংল্যান্ডে কোচ হিসেবে কাজ করেন। এরপর বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও (বিকেএসপি) ব্যাটিং কোচ হিসেবে ছিলেন। এবার পাপুয়া নিউগিনিকে বিশ্বকাপে ভালো কিছু এনে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ ক্যারিয়ারে নানা উত্থান-পতনের সাক্ষী হওয়া তাইবুর!
আসাদ ভালা (অধিনায়ক), চার্লস আমিনি (সহ অধিনায়ক), আলেই নাও, চ্যাড সোপার, হিলা ভারে, হিরি হিরি, জ্যাক গার্ডেনার, জন কারিকো, কাবুয়া মোরেয়া, কিপ্লিং ডোরিগা, লেগা সিয়াকা, নরম্যান ভানুয়া, সেমা কামেয়া, সেসে বাউ ও টনি উরা।
ম্যাচ |
জয় |
হার |
টাই |
ফল হয়নি |
সর্বোচ্চ |
সর্বমিন্ন |
৩ |
০ |
৩ |
০ |
০ |
১৪৮ |
৯৭ |
স্কোর |
ওভার |
ফল |
প্রতিপক্ষ |
ভেন্যু |
তারিখ |
১৪৮ |
১৯.৩ |
পরাজয় |
স্কটল্যান্ড |
আল আমেরাত |
১৯ অক্টো. ২০২১ |
১২৯/৯ |
২০.০ |
পরাজয় |
ওমান |
আল আমেরাত |
১৭ অক্টো. ২০২১ |
৯৭ |
১৯.৩ |
পরাজয় |
বাংলাদেশ |
আল আমেরাত |
২১ অক্টো. ২০২১ |
নাম |
ম্যাচ |
রান |
সর্বোচ্চ |
গড় |
স্ট্রা. রেট |
১০০ |
৫০ |
৪ |
৬ |
আসাদ ভালা |
৩ |
৮০ |
৫৬ |
২৬.৬৬ |
১২৬.৯৮ |
০ |
১ |
৮ |
৩ |
কিপলিন ডরিগা |
৩ |
৬৪ |
৪৬* |
৩২.০০ |
১৩৬.১৭ |
০ |
০ |
৩ |
৩ |
এন ভানুয়া |
৩ |
৪৮ |
৪৭ |
১৬.০০ |
১১৭.০৭ |
০ |
০ |
২ |
২ |
সেসে বাউ |
৩ |
৪৪ |
২৪ |
১৪.৬৬ |
৭৭.১৯ |
০ |
০ |
৩ |
১ |
চার্লস আমিনি |
৩ |
৩৯ |
৩৭ |
১৩.০০ |
১২৫.৮০ |
০ |
০ |
৪ |
১ |
চাদ সপার |
২ |
২৭ |
১৬ |
১৩.৫০ |
১১৭.৩৯ |
০ |
০ |
১ |
২ |
কাবুয়া মোরেয়া |
৩ |
১৫ |
৬* |
১৫.০০ |
১০৭.১৪ |
০ |
০ |
০ |
১ |
লেগা সিয়াকা |
৩ |
১৪ |
৯ |
৪.৬৬ |
৫৩.৮৪ |
০ |
০ |
১ |
০ |
হিরি হিরি |
১ |
৮ |
৮ |
৮.০০ |
৫৩.৩৩ |
০ |
০ |
১ |
০ |
নোসিয়ানা পোকানা |
২ |
৬ |
৫* |
৬.০০ |
৫৪.৫৪ |
০ |
০ |
০ |
০ |
খেলোয়াড় |
ম্যাচ |
গড় |
রান |
উইকেট |
সেরা |
গড় |
ইক. রেট |
৪ |
৫ |
কাবুয়া মোরেয়া |
৩ |
১০.০ |
৭৫ |
৬ |
৪/৩১ |
১২.৫০ |
৭.৫০ |
১ |
০ |
চাস সপার |
২ |
৮.০ |
৭৭ |
৩ |
৩/২৪ |
২৫.৬৬ |
৯.৬২ |
০ |
০ |
সিমোন আতাই |
৩ |
৫.০ |
৩৫ |
২ |
১/৬ |
১৭.৫০ |
৭.০০ |
০ |
০ |
ড্যামিয়েন রাবু |
২ |
৭.০ |
৬৮ |
২ |
২/৪০ |
৩৪.০০ |
৯.৭১ |
০ |
০ |
আসাদ ভালা |
৩ |
৪.০ |
৩৭ |
২ |
২/২৬ |
১৮.৫০ |
৯.২৫ |
০ |
০ |
খেলোয়াড় |
ম্যাচ |
ডিসমিশল |
ক্যাচ |
স্ট্যাম্পিং |
চার্লস আমিনি |
৩ |
৩ |
৩ |
০ |
সেসে বাউ |
৩ |
৩ |
৩ |
০ |
লেগা সিয়াকা |
৩ |
৩ |
৩ |
০ |
হিরি হিরি |
১ |
১ |
১ |
০ |
কাবুয়া মোরেয়া |
৩ |
১ |
১ |
০ |
ড্যামিয়েন রাবু |
২ |
১ |
১ |
০ |
চাদ সপার |
২ |
১ |
১ |
০ |