কখনো খেলা হয়নি ওয়ানডে বিশ্বকাপ। তবে সবমিলিয়ে এবার তৃতীয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে ওমান। ২০১৬ সালে বিশ্বকাপে পথচলা শুরু হয়েছিল তাদের। এরপর প্রথম সহযোগী সদস্য দেশ হিসেবে ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে মিলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করে তারা।
বছর বিশেক আগেও ক্রিকেটের খুব একটা প্রচলন ছিল না ওমানে। তবে এখন চিত্র কিছুটা বদলেছে। অনেক অবকাঠামোই হয়েছে ক্রিকেটের। যদিও ওমানের দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটারেরেই শেকড় ভারত কিংবা পাকিস্তানে।
জিসান মাকসুদকে সরিয়ে এবারের বিশ্বকাপে নেতৃত্বে আনা হয়েছে আকিব ইলিয়াসকে। তিনিসহ মোট ৮ ক্রিকেটার আছেন, যাদের জন্ম পাকিস্তানে। এছাড়া তিনজন আছেন ভারতের।
বর্তমান অধিনায়ক আকিব ও সাবেক অধিনায়ক জিসানের দিকে ভরসা থাকবে টপ অর্ডারে। উইকেটরক্ষক ব্যাটার প্রতীক আথাভালে এবং আয়ান খান মিডল অর্ডারে খেলেন। বোলিং লাইনআপে পরিচিত মুখ হিসেবে আছেন বাঁ-হাতি পেসার বিলাল খান, সবশেষ বিপিএলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে খেলেছেন তিনি।
২০১৬ সালে ১৬ দলের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো খেলে ওমান। তিন ম্যাচ খেলে সেবার একটি জয় পেয়েছিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। তিন ম্যাচের একটি ছিল বাংলাদেশের সঙ্গে; তামিম ইকবাল সেঞ্চুরি করেছিলেন ওই ম্যাচে, যেটি এখনও টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশি কোনো ব্যাটারের একমাত্র সেঞ্চুরি।
২০২১ সালে স্বাগতিক হিসেবে বিশ্বকাপে সুযোগ পায় ওমান। প্রথম পর্বে ‘বি’ গ্রুপে ওমান প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় স্কটল্যান্ড, বাংলাদেশ ও পাপুয়া নিউগিনিকে। ১০ উইকেটে পাপুয়া নিউগিনিকে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করে তারা। তবে এরপর আর কোনো ম্যাচ জিততে পারেনি তারা।
৩ জুন নামিবিয়ার বিপক্ষে খেলবে ওমান। ৬ জুন অস্ট্রেলিয়া ও ৯ জুন স্কটল্যান্ডের মুখোমুখি হবে তারা। শেষ ম্যাচটি খেলতে অবশ্য লম্বা অপেক্ষাই করতে হবে। ২৪ জুন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ তাদের।
জন্ম: ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৯২ (শিয়ালকোট, পাকিস্তান)। বয়স: ৩১।
জাতীয় দলে ভূমিকা: টপ অর্ডার ব্যাটার
ব্যাকগ্রাউন্ড
আকিব ইলিয়াসের জন্ম পাকিস্তানের শিয়ালকোটে। তার জন্মের ছয় মাস পরই পুরো পরিবার চলে আসে ওমানে। এরপর মাস্কটেই বেড়ে উঠেন তিনি। তার বড় ভাই আদনান ইলিয়াস খেলেছেন ওমান জাতীয় দলের হয়ে। আকিভের পথও ছিল সেটিই। ২০১০ সালে যখন দুবাইয়ে পড়াশোনার জন্য যান, তখন সংযুক্ত আরব আমিরাত দলের সঙ্গে অনুশীলনের সুযোগ পেলেও ইলিয়াস বেছে নেন ওমানকে।
২০১৫ সালে হংকংয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয় ইলিয়াসের। তিন বছর পর কানাডার বিপক্ষে অভিষেক হয় লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে। ওয়ানডেতে ওমানের প্রথম সেঞ্চুরিটিও আসে তার ব্যাট থেকে। নেপালের বিপক্ষে ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ১০৮ বলে ১০৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
টপ অর্ডারে ব্যাটিংয়ের সঙ্গে বলও প্রায়ই হাতে নেন আকিব ইলিয়াস। এখন পর্যন্ত ওমানের হয়ে ৪৮ টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নেমে ১২৫.৫০ স্ট্রাইক রেট ও ২৯.৪০ গড়ে ১১৭৬ রান করেন তিনি। ৪৮ ম্যাচে ৩৭ উইকেটও আছে তার।
নেতৃত্ব
গত প্রায় তিন বছর ধরে সহ-অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পালন করছিলেন ইলিয়াস। এবারের বিশ্বকাপ সামনে রেখে তাকে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব। ২০১৬ সাল থেকে ওমানের অধিনায়কত্ব জিসান মাকসুদ স্কোয়াডে থাকলেও তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে নেতৃত্ব থেকে।
এমনিতে বিভিন্ন সময়ে ওমানকে সাতটি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন আকিব। এর মধ্যে ৪টিতে জয় পেয়েছে তার দল, হেরে গেছে তিনটিতে। এবার ২০ দলের বিশ্বকাপ হচ্ছে। ছোট দলগুলোর জন্য সুযোগও বেড়েছে বেশ। আকিভ ও তার দলের সামনে সুযোগ, বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদেরকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার।
জন্ম: ২৫ আগস্ট, ১৯৫২ বয়স: ৭১
শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটে বেশ বড় নাম ছিলেন দিলিপ মেন্ডিস। ব্যাটার হিসেবে ছিলেন আক্রমণাত্মক, রিস্টের জোর কাজে লাগিয়ে যে কোনো প্রতিপক্ষকেই গুঁড়িয়ে দিতে পারতেন। ক্যারিয়ারও ছিল বেশ সমৃদ্ধ।
১৯৭২ সালে স্কুলে থাকতেই প্রথমবার শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলেন দিলিপ মেন্ডিস। যদিও টেস্টে অভিষেক হয় ৩০ বছর বয়সে। শ্রীলঙ্কার টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার প্রথম দিককার সময়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার ছিলেন তিনি।
তার হাত ধরেই ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট ও সিরিজ জেতে শ্রীলঙ্কা। দেশের হয়ে সবমিলিয়ে ২৩টি টেস্ট খেলে ৪ সেঞ্চুরিতে ৩১.৬৪ গড়ে ১৩২৯ রান আসে তার ব্যাট থেকে। ৭৯ ওয়ানডেতে ২৩ গড়ে করেন ১৫২৭ রান।
এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ কোচ ওমানের দিলিপ মেন্ডিস। ফুটবলে যেন ওমানের সমস্ত মনোযোগ। তবে ২০১১ সালে ক্রিকেটে উন্নতি এবং দেশটিতে ভদ্রলোকের এই খেলা আরও জনপ্রিয় করার আশায় কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় লঙ্কান কিংবদন্তি ক্রিকেটার দিলিপ মেন্ডিসকে। সে থেকে টানা ১০ বছর ওমানের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
দীর্ঘ ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষে ক্রিকেটের সঙ্গেই বিভিন্ন সময় যুক্ত ছিলেন দিলিপ। তবে কোচিং পেশা নিয়ে খুব একটা কখনো ভাবেননি হয়তো। নয়তো ৬৯ বছর বয়সে মাত্র দুটি জাতীয় দলকে কি আর কোচিং করান? ওমানের কোচ হওয়ার আগে ১৯৯১-৯২ সালে শ্রীলঙ্কার কোচ ছিলেন তিনি।
এ যুগের অনেকেই হয়তো দিলিপ মেন্ডিসকে চিনবে না। তবে জয়াসুরিয়া, সাঙ্গাকারা, জয়াবর্ধনেদের আগে কম জনপ্রিয় ছিলেন না এই দিলিপ। অর্জুনা রানাতুঙ্গাদের আগের সময়ে তিনি ছিলেন লঙ্কার স্টার ক্রিকেটার।
শ্রীলঙ্কার প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। এর আগে, দলটির টেস্ট স্ট্যাটাস এনে দিতে তার ভূমিকা ছিল অপরিসীম। খেলোয়াড়ি জীবনে এত সফল দিলিপ শ্রীলঙ্কার ম্যানেজার হিসেবে পেয়েছিলেন বিশ্বকাপের ছোঁয়া। লঙ্কানদের ১৯৯৬ বিশ্বকাপজয়ী দলের ম্যানেজার ছিলেন তিনি।
এরপর ২০১১ সালে ওমান দলের কোচ হয়েও অনেক সাফল্য পেয়েছেন তিনি। ওমান প্রথমবার কোনো বৈশ্বিক আসরে (টি-টোয়েন্টি) সুযোগ করে নেয় তার অধীনেই। এবার তো তার অধীনে দলটি খেলবে টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। এছাড়াও এই বর্ষীয়ান কোচের হাত ধরেই ২০১৯ সালে তিন বছরের জন্য ওয়ানডে স্ট্যাটাস পায় ওমান।
এক দশকের বেশি সময় ধরে ওমান ক্রিকেটের সঙ্গে কাজ করছেন তিনি। তার অধীনেই যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাবে ওমান। দেশটির ক্রিকেট মাঠ তৈরি, খেলোয়াড় খোঁজা থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছুতেই জড়িয়ে আছে দিলিপের নাম।
তার অধীনেই ওয়ানডে স্ট্যাটাস পায় ওমান। এখন দেশটির ক্রিকেট অবকাঠামোর উন্নতিও হয়েছে বেশ। তার হাত ধরেই ২০ দলের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুর্দান্ত কিছু করে দেখাতে চাইবে শ্রীলঙ্কা।
আকিব ইলিয়াস (অধিনায়ক), জিশান মাকসুদ, কেশব প্রজাপতি, প্রতিক আথাভালে (উইকেটরক্ষক), আয়ান খান, শোয়েব খান, মোহাম্মাদ নাদিম, খালিদ কাইল, নাসিম খুশি, মেহরান খান, বিলাল খান, রাফিউল্লাহ, কালিমউল্লাহ, ফায়াজ বাট, শাকিল আহমেদ।
রিজার্ভ: যতিন্দর সিং, সময় শ্রিভাস্তাভ, সুফিয়ান মেহমুদ, জায় ওডেড্রা।
(প্রথম পর্ব: গ্রুপ পর্ব), (দ্বিতীয় পর্ব: সুপার এইট, সুপার টেন)