বিশ্বকাপ এলেই হুট করে যেন সামনে চলে আসে ডাচ চমক। নেদারল্যান্ডসের ম্যাচ মানেই একটা চাপা রোমাঞ্চ- কখন কী অঘটন ঘটে যায়! ফুটবলের জনপ্রিয়তায় ক্রিকেট খুব আলোচিত খেলা নয় নেদারল্যান্ডসে। কিন্তু প্রতিবারই বিশ্বমঞ্চে নিজেদের আলাদা করে চেনান দেশটির ক্রিকেটাররা।
এবার টানা তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে নেদারল্যান্ডস। সুখস্মৃতি সঙ্গী করেই এবার বিশ্বকাপে যাচ্ছে তারা। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দিয়েছিল তারা। এরপর গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ের মতো দলকে পেছনে ফেলে জায়গা করে নেয় মূল আসরে।
শুধু এটুকুতেই থামেনি, বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশকে হারিয়ে দেয় তারা। মজার বিষয়, এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুই দলই আছে তাদের গ্রুপে। আরও একবার নিশ্চয়ই ওয়ানডে বিশ্বকাপের পুনারাবৃত্তি করতে চাইবে তারা। দুই বছর আগে সুপার টুয়েলভে জায়গা করে নেওয়ার কারণেই এবারের বিশ্বকাপ নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল নেদারল্যান্ডসের।
এবারের বিশ্বকাপে দুই অভিজ্ঞ কলিন অ্যাকারম্যান এবং রুলফ ফন ডার মারউইকে ছাড়াই যেতে হবে নেদারল্যান্ডসকে। কাউন্টি ক্রিকেটে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এই দুই ক্রিকেটার বিশ্বকাপ যাচ্ছেন না।
বাকি ক্রিকেটাররা কাউন্টির ব্যস্ততা দূরে ঠেলেই আসছেন বিশ্বকাপে। নেদারল্যান্ডসের ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো খুব বেশি শক্তিশালী না হওয়ায় তাদের বিভিন্ন ক্লাবে ব্যস্ত থাকতে হয়। বিশ্বকাপ স্কোয়াডের মধ্যে থাকা ৭ জনের সবশেষ টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
নেদারল্যান্ডস যেদিন জেতে, তাদের সম্মিলিত পারফরম্যান্সই হয় ভরসা। তবুও আলাদা করে নজর রাখা যেতে পারে ওপেনার ম্যাক্স ও’দাউদের দিকে। টি-টোয়েন্টিতে দেশটির ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি রান তার। আছে বিগ হিটিংয়ের খ্যাতিও।
নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ৪ জুন বিশ্বকাপ শুরু হবে নেদারল্যান্ডসের। ৭ জুন বহুল আকাঙ্ক্ষিত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ। ১৩ জুন বাংলাদেশ ও ১৭ জুন তাদের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা।
জম্ম: ২৩ আগস্ট, ১৯৯৬; বয়স: ২৭
ওশেনিয়ার টোঙ্গাতে স্কট এডওয়ার্ডসের জম্ম হলেও তিনি বেড়ে উঠেছেন অস্ট্রেলিয়াতে। সেখানে তারা বাবা কাজ করতেন। পড়াশোনা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার এমাউস কলেজে। তার দাদী ডাচ হওয়াতে স্কটের রয়েছে দ্বৈত নাগরিকত্ব।
অনেকটা নাটকীয়ভাবে স্কটের ক্রিকেটে আসা। শিক্ষানবীস ইলেক্ট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ শুরু করছিলেন তিনি। কিন্তু পরবর্তীতে ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে বেছে নেন।
২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় স্কট এডওয়ার্ডসের। আইসিসি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে নামিবিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলেন তিনি।
২০২১ সালের জুনে ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব পান স্কট এডওয়ার্ডস। নেতৃত্ব পেয়েই ২০২১ সালের টি-২০ বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেন। তার নেতৃত্বে গত বছরের জুলাইতে টি-২০ বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের সেমিফাইনালে যুক্তরাষ্ট্রকে হারায়।
স্কট এডওয়ার্ডসে সবচেয়ে বড় সাফল্য দলকে বিশ্বকাপে পৌঁছে। বাছাই পর্বের বিশাল বৈতরণী পার হয়ে হয়েছে তাদের। তার নেতৃত্বে বাছাই পর্বে রানার্স আপ হয় নেদারল্যান্ডস। প্রতিপক্ষ ছিল সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে টানা তিন ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি।
ছোটো দলের খেলোয়াড় হলেও স্কট এডওয়ার্ডসের বেশ কিছু কীর্তি রয়েছে। সিরিজ ২০০ রান ও ১০ ডিসমিসাল করার রেকর্ড রয়েছে তারা। উইকেটরক্ষক হিসেবে এক সিরিজে সর্বোচ্চ রানের তালিকায় আছেন তিনি। টি-টেন ক্রিকেটে স্কটের রয়েছে দ্রুততম সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড। ৩৯ বলে ১৩৭ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।
এডওয়ার্ড স্পোর্টস ম্যানেজমেন্টে ডিয়াকিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।
কোচিং ক্যারিয়ারের শুরুটা তার গ্যারি কারস্টেন ক্রিকেট একাডেমিতে। রায়ান কুক ওখানে হেড কোচ ছিলেন। পরে হোবার্ট হারিকেন্স, দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গে কাজ করেছেন। এখন তিনি দায়িত্বে আছেন নেদারল্যান্ডস ক্রিকেট দলের। তার অধীনে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাবে ডাচরা।
স্বীকৃত ক্রিকেট কখনো খেলা হয়নি রায়ান কুকের। গ্যারি কারস্টেন একাডেমিতে কোচ হিসেবেই প্রথম নাম করেন। পরে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব পান। এই দায়িত্ব ছেড়ে যাওয়ার পর নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে যোগ দেন তিনি।
তাদের তখনকার কোচ রায়ান ক্যাম্পবেল শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার পরিবর্তে শুরুতে কুককে ভারপ্রাপ্ত কোচ করে নেদারল্যান্ডস। দলটির হয়ে সাফল্যও ধরা দেয়। ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম পর্ব পেরিয়ে সুপার টুয়েলভে জায়গা করে নেয়।
শুধু এটুকুতেই থামেনি, সুপার টুয়েলভে হারায় জিম্বাবুয়ে ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ওই সাফল্যের ধারা ধরে রেখে ২০২৩ সালে ১০ দলের ওয়ানডে বিশ্বকাপেও জায়গা করে নেয় ডাচরা। এই টুর্নামেন্টে তারা দক্ষিণ আফ্রিকার পাশাপাশি হারায় বাংলাদেশকে।
নেদারল্যান্ডসের কোচ থাকাকালীনই এসএ টি-টোয়েন্টিতে সানরাইজার্স ইস্টার্ন ক্যাফের হয়ে ফিল্ডিং কোচ হিসেবে কাজ করেন। তার দল হয়ে যায় চ্যাম্পিয়ন। কাজ করেন একই ফ্র্যাঞ্চাইজির আইপিএল দলেও। তবে ডাচদের দায়িত্ব ছেড়ে যাননি কুক। তার হাত ধরেই আরও একটি বিশ্বকাপ রাঙানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।
স্কট এডওয়ার্ডস (অধিনায়ক), আরিয়ান দত্ত, বাস ডি লিডি, ড্যানিয়েল ডোরাম, ফ্রেড ক্লাসেন, কাইল ক্লেইন, লোগান ফন বিক, ম্যাক্স ও’দাউদ, মাইকেল লেভিট, পল ফন মিকেরেন, সাইব্র্যান্ড এনঙ্গেলব্রেখট, তেজা নিদামানুরু, টিম প্রিঙ্গল, বিক্রম সিং এবং ওয়েসলি বারেসি।
গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়াম, টেক্সাস
নেপাল 106/10 (19.2 ওভার)
নেদারল্যান্ডস 109/4 (18.4 ওভার)
ফল: নেদারল্যান্ডস ৬ উইকেটে জয়ী
নাসাউ কাউন্টি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম, নিউ ইয়র্ক
নেদারল্যান্ডস 103/9 (20.0 ওভার )
দক্ষিণ আফ্রিকা 106/6 (18.5 ওভার )
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৪ উইকেটে জয়ী
অ্যারনোস ভ্যালে স্টেডিয়াম, সেন্ট ভিনসেন্ট
বাংলাদেশ 159/5 ( 20 ওভার )
নেদারল্যান্ডস 134/8 ( 20 ওভার )
ফল: বাংলাদেশ ২৫ রানে জয়ী
ড্যারেন স্যামি ক্রিকেট গ্রাউন্ড, সেন্ট লুসিয়া
শ্রীলংকা 201/6 (20 ওভার)
নেদারল্যান্ডস 118/10 (16.4 ওভার)
ফল: শ্রীলঙ্কা ৮৩ রানে জয়ী।