২০১৪ সালে বাংলাদেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ওই টুর্নামেন্টে জায়গা করে নিয়েছিল নেপালও। বাছাই পর্ব পার করার পর তাদের সংবর্ধনার ছবিগুলো এখনও ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যায়। রীতিমতো বীরোচিতভাবে বরণ করে নেওয়া হয়েছিল তখনকার ক্রিকেটারদের।
১০ বছর পর আবারও বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে নেপাল। এবারের স্কোয়াডে থাকা অনেকেরই ক্রিকেটের স্বপ্ন বোনা হয়েছিল ২০১৪ বিশ্বকাপের সময়, তারা এবার নিজেরাই যাবেন নেপালের প্রতিনিধিত্ব করতে। দেশটি কেমন করবে? অন্তত চমক দেখানোর মতো কিছু করার চাওয়া তো থাকবে নিশ্চিতভাবেই।
নেপালের সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের তারুণ্য। বয়স ২৫ পেরিয়েছে দলটিতে এমন ক্রিকেটার খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন। বেশির ভাগ ক্রিকেটারেরই বয়স ২০-২২ বছর। দলে বড় কোনো সুপারস্টার নেই, বাকিদের চেয়ে এগোনো কোনো পারফর্মারও।
তবে দলটির শক্তি ইতিবাচকতা। তরুণ রোহিত পাউডেলের কাঁধে ভর করে শরীরি ভাষায় লড়াইয়ের ছাপ থাকে সবসময়ই। দলের শক্তির বড় জায়গাজুড়ে ব্যাটিং। রোহিত পাউডেলই তার নেতৃত্বেও। কয়েকদিন আগেই তার সেঞ্চুরিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলকে টি-টোয়েন্টি হারিয়েছিল তারা।
বিশ্বকাপের ঠিক আগের এই সিরিজে দুটি ম্যাচ জয় বাড়তি প্রেরণা যোগাবে নেপালকে। রোহিতের সঙ্গে এ জায়গায় তাদের বাড়তি শক্তি দেবে কুশাল মাল্লা ও দীপেন্দ্র সিং। কিছুদিন আগেই ওভারে ছয় ছক্কা হাঁকিয়ে রেকর্ডবুকে জায়গা করে নিয়েছিলেন দীপেন্দ্র। এবারের বিশ্বকাপেও বড় ভরসা হয়ে থাকবেন তিনি।
বোলিংয়ে তেমন বলার মতো কোনো পারফর্মার নেই কারণ কেসি ছাড়া। তিনি নিয়মিত উইকেট নিলেও তার সঙ্গ দেওয়ার মতো কেউ নেই। লেগ স্পিনার সন্দীপ লামিচানে ধর্ষণ মামলায় জেলে যাওয়ার পর মুক্তি পেয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাননি তিনি।
তারুণ্য যেমন শক্তি, তেমনি এটি তাদের জন্য দূর্বলতাও হতে পারে। বড় মঞ্চে খেলার মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার নেই। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেও সুযোগ পান না তাদের কোনো ক্রিকেটার। গেম অ্যাওয়ারনেস বা পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়তে পারে নেপাল।
২০ দলের বিশ্বকাপ হচ্ছে এবার। প্রতিটি মহাদেশের প্রতিনিধিত্বই থাকছে এখানে। এশিয়া অঞ্চলের চূড়ান্ত বাছাইয়ের গ্রুপপর্বে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াকে হারায় নেপাল। এরপর সেমিফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী এ ম্যাচের জয়ী দল পেত মূলপর্বের টিকিট। তাদের হারিয়েই ওমানের সঙ্গে এশিয়া অঞ্চল থেকে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয় নেপাল।
বিশ্বকাপে ‘ডি’ গ্রুপে বাংলাদেশ, নেদারল্যান্ডস, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আছে নেপাল। ৪ জুন নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে নিজেদের বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলবে তারা। এরপর ১২ জুন শ্রীলঙ্কা, ১৫ জুন দক্ষিণ আফ্রিকা ও ১৭ জুন বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলবে নেপাল।
জন্ম: ২ সেপ্টেম্বর, ২০০২ (বরদাঘাট, নাওয়ালপারসি, নেপাল), বয়স: ২১
জাতীয় দলে ভূমিকা: ব্যাটার (ডানহাতি)
ব্যাকগ্রাউন্ড
২০১৪ সালে পরেশ খাড়কার নেতৃত্বে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছিল নেপাল। বাংলাদেশে ওই বিশ্বকাপে নিজের দেশের খেলা দেখে অনুপ্রেরণা পেয়েছিল একটা ছেলে। ওই ছেলেটিই এখন নেপালের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক রোহিত পাউডেল। তার নেতৃত্বে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে যাবে নেপাল।
ছোটবেলায় বড় ভাইদের টেনিস বল ক্রিকেট দেখে শুরু করেন খেলা, ধীরে ধীরে তার স্বপ্নও বাড়তে থাকে একটু একটু করে। এরপর কাডমান্ডুতে এসে ভর্তি হন বালওয়াটার ক্রিকেট ক্লাবে। সেখানে গিয়ে ক্রিকেটের টেকনিক্যাল দিকগুলোয় হাতেখড়ি হয় তার।
ক্যারিয়ার
ওখান থেকে ধীরে ধীরে বয়সভিত্তিক পর্যায় হয়ে জাতীয় দলে উঠে আসেন রোহিত। মাত্র ১৫ বছর ৩৩৫ দিন বয়সে ওয়ানডে অভিষেক হয় তার। যেটি তখন সবচেয়ে কম বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়ার রেকর্ড। ২০২২ সালে যখন রোহিত অধিনায়কত্ব করেন নেপালের, তখনও রশিদ খানের পর সবচেয়ে কম বয়সে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার রেকর্ড লেখা হয় তার পাশে।
ডান হাতে ব্যাটিংয়ের সঙ্গে অফ স্পিনটাও করেন রোহিত। এখন পর্যন্ত নেপালের হয়ে ৪৯ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মাঠে নেমেছেন তিনি। ৪৭ ইনিংসে ১২৪.৯১ স্ট্রাইক রেট ও ২৯.১৫ গড়ে ১১০৮ রান করেছেন রোহিত। তার আছে ৫টি উইকেটও।
অধিনায়কত্ব
জাতীয় দলকে ২৮ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন রোহিত। এর মধ্যে ১৬টিতে দলকে জয় এনে দিয়েছেন, ১১টিতে হেরে গেছে তার দল। বিশ্বকাপের ঠিক আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে দারুণ স্মৃতিও এনে দিয়েছেন রোহিত। প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দলকে জয় এনে দিয়েছেন তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে নেপালের ক্রিকেট সাড়া জাগিয়েছে বেশ। তাদের খেলা দেখতে মানুষের ভিড়ের ছবিও ছড়িয়ে পড়ে সোশাল মিডিয়ায়। রোহিত যে বাংলাদেশে হওয়া বিশ্বকাপ দেখে ক্রিকেটে আগ্রহ পেয়েছিলেন, তাদের বিপক্ষেই এবারের বিশ্বকাপে খেলবে নেপাল। তার সামনে চ্যালেঞ্জ দেশের মানুষের ক্রিকেট নিয়ে বেড়ে যাওয়া আগ্রহটা আকাশচুম্বী করে দেওয়ার।
জন্ম: ২৮ মে, ১৯৭৪, বয়স: ৫০
কোচিং ক্যারিয়ার ও অভিজ্ঞতা
কখনো জাতীয় দল তো দূর, স্বীকৃত ক্রিকেটই খেলা হয়নি মন্টি দেশাইয়ের। তবে এই ভারতীয় কোচ হিসেবে পৌঁছে গেছেন শীর্ষস্তরে। বছরখানেক আগে নেপালের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। তার অধীনেই এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে যাবে তারা।
মন্টি দেশাইয়ের কোচিং ক্যারিয়ারের শুরুটা হয় রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) এই ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে স্কাউট ও কোচ হিসেবে ২০০৮ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কাজ করেন তিনি। ২০১৮-১৯ মৌসুমে রঞ্জি ট্রফির দল আন্ধ্রার হেড কোচ ছিলেন।
এর আগে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে অল্প সময়ের জন্য যোগ দেন আফগানিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের সঙ্গে। জিম্বাবুয়েতে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের চ্যাম্পিয়ন হয় আফগানরা, ওই দলের অংশ ছিলেন দেশাই। পরে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে আফগানিস্তানের দায়িত্ব ছেড়ে দেন।
এক মৌসুম রঞ্জি দল আন্ধ্রার সঙ্গে কাজ শেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত জাতীয় দলে যোগ দেন মন্টি দেশাই, ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। একই বছর কানাডা জাতীয় ক্রিকেট দল হেড কোচ হন তিনি।
জাতীয় দলের সঙ্গে মন্টি দেশাই তিন বছর কাজ করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজেও, দলটির ব্যাটিং কোচ ছিলেন তিনি। পরে এসে আবার কাজ করেছেন আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি রাজস্থান রয়্যালস ও গুজরাট লায়ন্সের সঙ্গে।
নেপালের কোচ
গত বছর থেকে নেপালের দায়িত্বে আছেন মন্টি দেশাই। তার অধীনে দেশটি ২০২৩ এশিয়া কাপ ও ২০২৩ বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়ারে জায়গা করে নেয়। ফিরে পায় নিজেদের হারানো ওয়ানডে স্ট্যাটাস। এবার তার হাত ধরেই এক দশক পর আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে নেপাল।
রোহিত পৌডেল (অধিনায়ক), আসিফ শেখ, অনিল কুমার শাহ, কুশাল ভুর্তেল, কুশাল মাল্লা, দীপেন্দ্র সিং আইরে, ললিত রাজবংশী, কারাণ কেসি, গুলশান ঝা, সোমপাল কামি, প্রতীশ জিসি, সুদীপ জোরা, অভিনাশ বোহারা, সাগর ধাকাল ও কামাল সিং আইরে।
গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়াম, টেক্সাস
নেপাল 106/10 (19.2 ওভার)
নেদারল্যান্ডস 109/4 (18.4 ওভার)
ফল: নেদারল্যান্ডস ৬ উইকেটে জয়ী
সেন্ট্রাল ব্রোওয়ার্ড পার্ক, লডারহিল, ফ্লোরিডা
শ্রীলংকা 0/0 (0.0 ওভার)
বৃষ্টির কারণে টসে বিলম্ব
অ্যারনোস ভ্যালে স্টেডিয়াম, সেন্ট ভিনসেন্ট
দক্ষিণ আফ্রিকা 115/7 (20 ওভার)
নেপাল 114/6 (20 ওভার)
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ১ রানে জয়ী।