ICC t20 Worldcup 2024
নামিবিয়া

Team Image

এবারও চমক দেখানোর অপেক্ষায় নামিবিয়া

২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় চমক ছিল নামিবিয়া। নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ডসকে হারিয়ে তারা জায়গা করে নেয় সুপার টুয়েলভে। এই পর্বের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে আরও বড় কিছুর স্বপ্নও দেখিয়েছিল নামিবিয়া। যদিও শেষ অবধি তেমন কিছু করে দেখাতে পারেনি তারা।

এবার আরও একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যাচ্ছে নামিবিয়া। এটি তাদের টানা তৃতীয় বিশ্বকাপ। এবারও নিশ্চয়ই দুর্দান্ত কিছু করে দেখানোর চেষ্টা থাকবে তাদের। যদিও পথটা বেশ কঠিন, কারণ অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের সঙ্গে একই গ্রুপে পড়েছে তারা।

চোখ থাকবে কাদের ওপর?

অধিনায়ক জেরার্ড এরাসমাসই সবচেয়ে বেশি নজরে থাকবেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয়েছিল তার। ২০২২ সালে এসে জেতেন আইসিসির অ্যাসোসিয়েট প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার পুরস্কার।

দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে একসময় খেলা ডেভিড ওয়াইজও আছেন দলটিতে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে অনেকদিন ধরেই নানা মঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। এই অলরাউন্ডারের বোলিং, ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি অভিজ্ঞতাও কাজে লাগাতে চাইবে নামিবিয়া।

তারা এবারের বিশ্বকাপে আসছে কয়েকদিন আগে নেপালের বিপক্ষে রেকর্ড গড়া লফটি ইয়াটনকে ছাড়াই। ৩৩ বলে সেঞ্চুরি করায় টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম শতকের রেকর্ডটি এখন তারই। কিন্তু শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ থাকায় তাকে ছাড়াই বিশ্বকাপ খেলবে নামিবিয়া।

দলটি বেশি নির্ভর করবে পেসারদের ওপরই। বাঁ-হাতি পেসার রুবেন ট্রাম্পেলম্যান থাকবেন এই বিভাগের নেতৃত্বে। রাখা হয়েছে গত বছরই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা জ্যাক ব্রাসেলকেও।

কবে, কাদের সঙ্গে খেলা?

৩ জুন ওমানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করবে নামিবিয়া, ৭ জুন তারা মুখোমুখি হবে স্কটল্যান্ডের। টুর্নামেন্টে তাদের পরের দুটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ বেশি। ১২ জুন অস্ট্রেলিয়া ও ১৫ জুন তারা লড়বে নামিবিয়ার বিপক্ষে।

কিভাবে তারা বিশ্বকাপে?

টানা তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলতে কঠিন পথই পাড়ি দিতে হয়েছে তাদের। আফ্রিকান অঞ্চলের বাছাইয়ে সেরা দুইয়ে থাকায় জায়গা নিশ্চিত হয়েছে নামিবিয়ার, পেছনে ফেলেছে জিম্বাবুয়েকে। বাছাই পর্বে অবশ্য এক ম্যাচ বাকি থাকতেই বিশ্বকাপ নিশ্চিত হয় তাদের। বাছাই পর্বে জিম্বাবুয়ে, উগান্ডা, রুয়ান্ডা ও কেনিয়াকে হারিয়েছিল নামিবিয়া।

Captain Image

গেরহার্ড ইরাসমাস

জন্ম: ১১ এপ্রিল, ১৯৯৫; বয়স: ২৮

ব্যাকগ্রাউন্ড

গেরহার্ড ইরাসমাসের বাবা একসময় ছিলেন ক্রিকেট নামিবিয়ার প্রেসিডেন্ট। একই সঙ্গে তার আছে একটা ‘ল’ ফার্মও। ইউনিভার্সিটি অব স্টেলেনবোস থেকে আইনে ডিগ্রি আছে ইরাসমাসেরও। তবে ইরাসমাস ক্রিকেটটাকে বেছে নিয়েছিলেন আরও অনেক আগে। ২০১১ সালে, মাত্র ১৫ বছর বয়সে মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব গিয়েছিল নামিবিয়া সফরে, তাদের বিপক্ষে নামিবিয়া দলে ছিলেন তিনি।

২০১১ সালে স্রেফ ১৬ বছর বয়সে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় ইরাসমাসের। পরের বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারের স্কোয়াডেও রাখা হয় তাকে। এরপর ২০১২ সালেই অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নামিবিয়ার হয়ে খেলেন তিনি।

অধিনায়কত্ব

ডান হাতে ব্যাটিংয়ের সঙ্গে অফ ব্রেকটাও করতে পারেন ইরাসমাস। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের সঙ্গে তাকে সামলাতে হয় একটি বাড়তি দায়িত্বও। ২০২২ সালের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও তার নেতৃত্বেই খেলতে যাবে নামিবিয়া।

এখন পর্যন্ত নামিবিয়ার হয়ে ৫৭ টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নেমেছেন ইরাসমাস। ৩২.৬৫ গড় ও ১২২.৯৫ স্ট্রাইক রেটে ১৩৩৯ রান করেছেন তিনি। বল হাতেও ৪৩ উইকেট আছে ইরাসমাসের। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে একটি সেঞ্চুরিও রয়েছে তার।

 

যত সাফল্য

নেতৃত্বের দিক থেকেও সাফল্যের পাল্লা ভারি ইরাসমাসের। এখন পর্যন্ত নামিবিয়ার মোট ৫৬টি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন তিনি। এর মধ্যে ৩৮টিতেই দলকে জয় এনে দিয়েছেন তিনি, হেরেছেন ১৮ ম্যাচে।

গত কয়েকটি বিশ্বকাপ ধরেই নামিবিয়ার উন্নতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভে জায়গা করে নিয়ে চমকে দেয় তারা। যদিও পরের বছর তারা বাদ পড়ে যায় প্রথম পর্ব থেকেই। এবার আরও একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যাচ্ছে নামিবিয়া, ইরাসমাস নেতৃত্ব দিয়ে তাদের কতটুকু নিয়ে যাবেন? সেটিই এখন দেখার।

ব্যক্তিগত রেকর্ড

২০১৯ সালে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছিলেন ইরাসমাস। ৯ ম্যাচ খেলে সেই আসরে ২৬৮ রান করেন তিনি। ওই আসরের টুর্নামেন্ট সেরাও হন তিনি।

Coach Image

পিয়েরে ডি ব্রুইন

জন্ম: ৩১ মার্চ, ১৯৭৭ বয়স: ৪৭  

নামিবিয়াকে স্বপ্নের পথে ফিরিয়েছেন পিয়েরে ডি ব্রুইন

কোচিং ক্যারিয়ার ও অভিজ্ঞতা

প্রায় দেড় দশকের খেলোয়াড়ি জীবনে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে কখনো খেলা হয়নি পিয়েরে ডি ব্রুইনের। তবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ও লিস্ট-এ তে ছিলেন নিয়মিত মুখ। টাইটান্স, ডলফিনের মতো বড় ক্লাবগুলোতে খেলা এই অলরাউন্ডার ২০০৯-১০ আফ্রিকান ক্রিকেট মৌসুম শেষে খেলোয়াড়ি জীবনকে বিদায় বলে দেন।

ক্যারিয়ারের শেষদিকে এসে খেলেছেন টি-টোয়েন্টিও। খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি টেনে কোচিংয়ে নাম লেখান।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৯১টি ম্যাচ খেলেছেন ব্রুইন। ১০ সেঞ্চুরি ও ২৩ হাফ সেঞ্চুরিতে ৪৬৩৭ রান করেছেন তিনি, বল হাতেও পেয়েছেন ১০৮ উইকেট। লিস্ট এ ক্রিকেটে ১০৮ ম্যাচে ২৯.৮৫ গড়ে ১৭৯১ রান করেছেন তিনি, আছে ৬০ উইকেট। টি-টোয়েন্টিতে ২৮ ম্যাচে ২৮৬ রানের সঙ্গে ১২ উইকেট আছে তার।

এখন ব্রুইন আছেন নামিবিয়ার হেড কোচের দায়িত্বে। তার অধীনেই এবার ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাবে নামিবিয়া।

খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি টানার পর ইউনিভার্সিটি অব প্রিটোরিয়ার কোচের দায়িত্ব পান পিয়েরে। পরে ২০১৬ সালে কাউন্টি ক্লাব লেস্টারশায়ারের হেড কোচ হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। স্থলাভিষিক্ত হন অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ডের।

এর আগে, ক্লাবটির দ্বিতীয় একাদশ এবং সহকারী স্কিল কোচ হিসেবেও কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল তার। ২০১৭ সালে লেস্টারশায়ারের হেড কোচের পদ থেকে পদত্যাগ করেন ডি ব্রুইন।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নামিবিয়ার হেড কোচ হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। তার প্রথম দায়িত্ব ছিল আইসিসি ক্রিকেট লিগ ডিভিশন-টু টুর্নামেন্ট। যেখানে চতুর্থ হিসেবে শেষ করে তারা। তবে এর মধ্যে বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত করে নেয় নামিবিয়া।

সাফল্য

অল্প কদিনের কোচিং ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সাফল্য লেখা হয়নি ডি ব্রুইনের নামের পাশে। তবে নামিবিয়াকে ২০১৯ আইসিসি বিশ্ব ক্রিকেট লিগ ডিভিশন-২ তে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন তিনি। এটাই তার কোচিং ক্যারিয়ারের সেরা সাফল্য।

২০০৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বমঞ্চে নামিবিয়া সুযোগ পায় ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। এই টুর্নামেন্টে এসেও সাফল্যগাথা রচনা করে তারা। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে জয় পায় নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওই বিশ্বকাপে দলটি জায়গা করে নেয় সুপার টুয়েলভে।

পরের বছর আরও একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেললেও প্রথম পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় নামিবিয়াকে। এবার আরও একটি বিশ্বকাপ কড়া নাড়ছে দরজায়। ২০২১ বিশ্বকাপের পুনরাবৃত্তিই নিশ্চিতভাবেই চাইবে ব্রুইনের দল।

 

ব্যক্তিগত জীবন

প্রিটোরিয়ায় জন্ম নেয়া ডি ব্রুইনের জমজ একটি ভাই আছে। তার নাম এতিয়েন ডি ব্রুইন। এতিয়েনও ভাইয়ের মতো ক্রিকেট খেললেও, কখনো জাতীয় দলে সুযোগ পাননি।  

নামিবিয়া স্কোয়াড

জেরার্ড এরাসমাস (অধিনায়ক), জেন গ্রিন, মাইকেল ফন লিংজেন, ডিলান লেইচার, রুবেন ট্রাম্পেলম্যান, জ্যাক ব্রাসেল, বেন শিকঙ্গো, টাঙ্গেনি লুঙ্গামেনি, নিকো ডেভিন, জেজে স্মিট, জ্যান ফ্রাইলিংক, জেপি কোটজে, ডেভিড ওয়াইজ, বার্নার্ড স্কোল্টজ, মালান ক্রুগার ও পিডি ব্লিগনাট।

 

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নামিবিয়া : পরিসংখ্যান

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এ নিয়ে টানা তৃতীয়বার অংশগ্রহণ।

 

সময়সূচি