ICC t20 Worldcup 2024
কানাডা

Team Image

কানাডা : স্বপ্ন হলো সত্যি

পাশের দেশে বিশ্বকাপ। ওখানেই স্বপ্ন সত্যি হতে যাচ্ছে কানাডার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ২০ দলের একটি তারা। বিশ্বকাপের নবম আসরে গিয়ে এটিই তাদের জন্য প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলা।

যদিও ‘বিশ্বকাপ’ শব্দটা নতুন নয় কানাডার কাছে। এর আগেও চারবার বিশ্বকাপ খেলেছে তারা, তবে সেগুলো ছিল ওয়ানডেতে; কোনোটিতেই পার করতে পারেনি গ্রুপ পর্ব। সবশেষ ২০১১ সালের বিশ্বকাপ খেলেছিল কানাডা। এক যুগের বেশি সময় পর এবার আবারও বিশ্বমঞ্চে পা পড়েছে তাদের।

কিভাবে এলো তারা বিশ্বকাপে?

প্রথমবারের মতো আইসিসি আয়োজন করছে ২০ দলের বিশ্বকাপ। তাতেই স্বপ্ন বোনা শুরু। তবুও পথটা অবশ্য সহজ ছিল না কানাডার জন্য। কারণ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে যাওয়ার আগে র‌্যাংকিংয়ে তারা ছিল ২৩ নম্বর দল। তবে গত বছর অক্টোবরে আমেরিকান অঞ্চলের বাছাইয়ের ফাইনালে বারমুডাকে হারিয়ে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয় কানাডা।

চোখ থাকবে কাদের ওপর?

হর্ষ ঠাকারের নাম আসবে সবার আগে। ব্যাট ও বল হাতে দলকে ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা আছে তার। সাম্প্রতিক সময়ে ২৬ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের ফর্মও দুর্দান্ত। দলে যে কেবল তিনজন ৩০ পার না করা ক্রিকেটার আছেন, হর্ষ তাদের একজন। এমনিতে বুড়োদের নিয়েই দল গড়েছে কানাডা।

দলটিতে আছে অলরাউন্ডারের ছড়াছড়িও। ১৫ জনের স্কোয়াডের সাতজনই ব্যাটিং-বোলিং দুটোই পারেন বেশ ভালোভাবে। অধিনায়ক সাদ বিন জাফরের সঙ্গে স্পিন অলরাউন্ডার আছেন জুনায়েদ সিদ্দিকি, প্রগত সিং, হর্ষ ঠাকুর এবং দিলপ্রিত। ব্যাট হাতে বাজওজার সঙ্গে ভরসা অ্যারন জনসন। বোলিংয়ে চোখ থাকবে কালিম সানার দিকে।

কবে, কাদের সঙ্গে খেলা?

উদ্বোধনী ম্যাচেই যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে মাঠে নামবে কানাডা। ‘এ’ গ্রুপে তাদের পরের তিন ম্যাচ আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ৭ জুন, পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৫ জুন ও ভারতের সঙ্গে ১৭ জুন অনুষ্ঠিত হবে।

Captain Image

সাদ বিন জাফর

জন্ম: ১০ নভেম্বর, ১৯৮৬ (গুজরানওয়ালা, পাঞ্জাব, পাকিস্তান); বয়স: ৩৭
দলে ভূমিকা: অলরাউন্ডার

সাদ বিন জাফর: জন্ম পাকিস্তানে, অধিনায়ক কানাডার

ব্যাকগ্রাউন্ড

প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে কানাডা। তাদের এই স্বপ্নপূরণটা হচ্ছে প্রতিবেশী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও পাশের ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া টুর্নামেন্টে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সাদ বিন জাফরের নেতৃত্বে স্কোয়াড ঘোষণা করেছে কানাডা।

বাঁ-হাতি এই অলরাউন্ডারের বয়স এখন ৩৭ বছর। জন্ম পাকিস্তানে। পাঞ্জাব প্রদেশের গুজরানওয়ালায়। সেখানেই বন্ধুদের সঙ্গে রাস্তায় খেলে ক্রিকেটের হাতেখড়ি। পরে ১৪ বছর বয়সে তার হাতে ক্রিকেট বল তুলে দেন স্কুল টিমের কোচ আসলাম রশিদ। সেই থেকে শুরু হয় ক্রিকেটে সাদের পথচলা।

পাকিস্তানের পাঞ্জাবে জন্ম নেওয়া এই ক্রিকেটার ছোটবেলায় রোল মডেল মানতেন ওয়াসিম আকরামকে। নকল করতে চাইতেন তার বোলিং অ্যাকশনও। যদিও পরের জীবনে এসে ব্যাটিংয়ের সঙ্গে স্পিনটাই বেছে নিয়েছেন তিনি। বল হাতে একটি বিরল রেকর্ডও আছে সাদের।

ক্যারিয়ার ও সাফল্য

২০২১ সালে পানামার বিপক্ষে চার ওভার করে কোনো রানই দেননি তিনি, নেন দুই উইকেট। তখন অবধি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এমন রেকর্ড ছিল না আর কারও। এমনিতেও বল হাতে খুব একটা রান খরচ করেন না সাদ। ৩৮ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ওভারপ্রতি ৬.৪১ গড়ে রান দিয়ে ৪৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি।

বোলিংয়ে যেমন কৃপণ, ব্যাট হাতে তেমনই মারমুখী সাদ। প্রায় ১৩৪ স্ট্রাইক রেটে কানাডার হয়ে ২৭২ রান করেছেন তিনি।

অধিনায়কত্ব

২০২২ সালে কানাডায় নেপালের সফরকে সামনে রেখে সাদ বিন জাফরকে অধিনাকত্বের দায়িত্ব তুলে দেয় দেশটির ক্রিকেট বোর্ড। সে থেকে দেশটিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। টি-টোয়েন্টিতে এখনও পর্যন্ত কানাডাকে সবমিলিয়ে ১৬ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ১০টিতে জয় এনে দিয়েছেন তিনি।

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও তার ওপর বড় ভরসা থাকবে কানাডার। যদিও সাদের জন্য অপেক্ষায় আছে অদ্ভূত এক অনুভূতি। বিশ্বকাপে তাদের গ্রুপেই আছে পাকিস্তান। ওই ম্যাচে নিজের জন্মভূমির বিপক্ষে তিনি নেতৃত্ব দেবেন প্রতিপক্ষ দলকে!

Coach Image

পুবুদু দেশানায়েকে

জন্ম: ১১ জুলাই, ১৯৭০; বয়স: ৫৩  

পুবুদু দেশানায়েকে: নেপাল ও কানাডাকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন তিনি

জন্ম ও খেলোয়াড়ী জীবন

শ্রীলঙ্কায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা। এরপর পুবুদু ভাটিয়া দেশানায়েকে খেলেছেন দেশটির জাতীয় দলের হয়ে। কিন্তু ক্যারিয়ারের শেষদিকে তিনি পাড়ি জমান কানাডায়। নাগরিকত্ব পাওয়ার পর দেশটির হয়েও জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সফল হয়েছেন নিজের কোচিং ক্যারিয়ারেও। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কানাডার হেড কোচ হিসেবে যাচ্ছেন তিনি।

১৯৯৩ সালে ২২ বছর বয়সে শ্রীলঙ্কার হয়ে অভিষেক হয় ভাটিয়ার। দলটির উইকেটরক্ষক ব্যাটার ছিলেন তিনি। তবে শ্রীলঙ্কার হয়ে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার এক বছরের বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। ১১ টেস্ট খেলে ৩৫ গড়ে ১৯৬ রান করেছেন তিনি। ১৬ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে অবশ্য স্রেফ ৮৫ রান করেছেন তিনি।

পরে গিয়ে কানাডা জাতীয় দলের হয়েও প্রতিনিধিত্ব করেন দেশানায়েকে। ২০০৫ সালের আইসিসি ট্রফিতে খেলেছেন তিনি। এখানেও অবশ্য এক বছরেই খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি ঘটে। ২০০৬ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে কানাডার হয়ে শেষ ম্যাচটি খেলেছেন তিনি।

কোচিং ক্যারিয়ার ও সাফল্য

পরের বছরের (২০০৭) আগস্টে কানাডার হেড কোচের দায়িত্ব পান তিনি। এই লঙ্কান চার বছর দেশটির দায়িত্ব পালন করেন। কানাডাকে ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপে তুলে আনেন। যদিও এরপর আর নিজের চুক্তির মেয়াদ বাড়াননি তিনি।

কানাডার দায়িত্ব ছেড়ে নেপালের হেড কোচ হন দেশানায়েকে। এখানেও চার বছর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তার হাত ধরেই ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলে নেপাল। দেশটির ক্রিকেটের অগ্রযাত্রায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি।

মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০২১ সালে আবার নেপালে ফেরেন; কিন্তু ২০২২ সালে তাদের চাকরি ছেড়ে আবারও কানাডার হেড কোচ হন দেশানায়েকে। তার হাত ধরেই আবারও বিশ্বকাপের মঞ্চে জায়গা করে নিয়েছে কানাডা।

কানাডার বিশ্বকাপ স্কোয়াড

সাদ বিন জাফর (অধিনায়ক), অ্যারন জনসন, ডিলন হেইলিগার, দিলপ্রীত বাজওয়া, হার্ষ ঠাকের, জেরেমি গর্ডন, জুনায়েদ সিদ্দিকী, কালিম সানা, কানওয়ারপাল তাথগার, নাভনিত ধালিওয়াল, নিকোলাস কার্টন, পারগাত সিং, রাভিন্দারপাল সিং, রায়ানখান পাঠান, শ্রেয়াস মোভভা।

রিজার্ভ খেলোয়াড়

আম্মার খালিদ, তাজিন্দর সিং, আদিত্য বরধরাজন, পারভিন কুমার ও যতিন্দর মাথারু।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এবারই প্রথম অংশ নিচ্ছে কানাডা।

সময়সূচি