জাতীয় দলে ফেরার স্বপ্ন দেখেন সোহরাওয়ার্দী শুভ


প্রকাশিত: ০১:২২ পিএম, ০৮ মে ২০১৬

সাকিবের মতই বাঁহাতে বল করেন সোহরাওয়ার্দী শুভ। সাত আট নম্বরে ব্যাটিংটাও তার বেশ কার্যকরী। হতে পারতেন সাকিবের মতই বিধ্বংসী অলরাউন্ডার। বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভবনাময় অলরাউন্ডার হিসেবে বিবেচনাও করা হতো তাকে। কিন্তু জাতীয় দলে নিজেকে মেলে ধরতে না পারায় নিজের জায়গা ধরে রাখতে পারেননি এ অলরাউন্ডার। ফলে দেড় বছরে ১৭টি ওয়ানডে, ১টি টেস্ট ও ১টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়েই শেষ হয় তার ক্যারিয়ার।

২০১০ সালের মার্চে প্রথম ওয়ানডে খেলার পর পরের বছরের নভেম্বরে একমাত্র টেস্ট খেলেই জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। তবে এখনও হাল ছাড়েননি শুভ। স্বপ্ন দেখেন আবারও ফিরবেন জাতীয় দলে। নিজেকেও গড়ছেন সেভাবে। অনুশীলনে নিয়মিত ঘাম ঝরাচ্ছেন এ ক্রিকেটার। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে এবার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে চলছেন তিনি। চার ম্যাচে সাত উইকেট পেলেও দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করছেন বাঁহাতি এই বোলার।

প্রশ্নঃ প্রথম ম্যাচে জয় হাতছাড়া করে টাই করেছেন, পরের দুই ম্যাচে টানা জয়ের পর চতুর্থ ম্যাচে হেরেছেন। তাই আগামী ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে এ মুহূর্তে আপনাদের পরিকল্পনা কি?

শুভঃ আমার কাছে মনে হয়েছে আমাদের দল খুব ভালো খেলছে। আমাদের দলও ভারসাম্যপূর্ণ। বোলাররা ভালো করছে, ব্যাটসম্যানরাও রান পাচ্ছে। আমরা খুব আশাবাদী আমরা আগামীকালের ম্যাচ ভালো করবো। আমরা যদি আমাদের বোলিং এবং ব্যাটিং নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী করতে পারি তাহলে আমার মনে হয় আমরা যে কোন দলকে হারাতে পারবো।

প্রশ্নঃ শেষ ম্যাচটা অনেক ক্লোজ ছিল। শেষ দিকে এসে হেরে গেছেন, এতে দলের মধ্যে কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে?

শুভঃ আমরা হেরেছি এটার ফল আমরা সম্পূর্ণ মাথা থেকে সরিয়ে ফেলছি। এটা নিয়ে আমরা কোন আলোচনা করছি না। আমরা আমাদের কাজগুলো ঠিক ভাবে করতে পেরেছি কিনা সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। শেষ ম্যাচে আমাদেরও কিছু ভুল ছিল। ওই ম্যাচে আমাদের ব্যাটসম্যানরা সেট হয়েও আউট হয়ে গেছে। ৩০/৪০ করে আউট হয়ে গেছে। তারা তখন আউট না হলে এমন পরিস্থিতি হতো না। যারা ৪০ করছে তারা ১০০ করলে আমরা হাসতে হাসতে জয় পেতাম। তাই আলোচনা করেছি কেন এমন পরিস্থিতিতে পরলাম। হার নিয়ে ভাবলে মন খারাপ তো হবেই।

প্রশ্নঃ হার নিয়ে না ভাবলেও সে পরিস্থিতিতে পরার কারণ নিয়ে আলোচনা করেছেন। এটা থেকে মুক্তির জন্য কি পরিকল্পনা করেছেন?  

শুভঃ আসলে আমরা আমাদের নিজেদের যে সকল দায়িত্ব আছে তা দেখেছি। ওইখান থেকে আমরা নিজেদের ভুল ধরে ঠিক করার চেষ্টা করছি। যেমন একটা ব্যাটসম্যান কেমন বল করার চেষ্টা করছে, একটা বোলার কেমন বল করছে। ফলাফল ভিন্ন বিষয়। শেষ ম্যাচের ব্যাপার আলাদা, ওইটা অন্যরকম হয়ে গেছে। ওইটা বাদে সবকিছুই ভালো হচ্ছে। একজন ব্যাক্তিগতভাবে নিজের কাজ ঠিক মত করলে সে নিজে থেকেই আত্মবিশ্বাসী থাকবে। তার পাশাপাশি তার দ্বারা তার সতীর্থরাও আত্মবিশ্বাসী থাকবে। এতে দলও আত্মবিশ্বাসী থাকবে। ইনশাল্লাহ আমাদের বোলার-ব্যাটসম্যান সবাই নিজেদের দায়িত্বতা ঠিক মত পালন করছে।

প্রশ্নঃ আপনি এর আগে অলরাউন্ডার হিসাবে জাতীয় দলে খেলেছেন। এখন দলের অন্যতম সিনিয়র খেলোয়াড়, দল আপনার কাছে অনেক কিছুই প্রত্যাশা করে। তাই এ চাপটা কেমন থাকে?

শুভঃ সিনিয়র খেলোয়াড়দের কাছে একটা দল একটু বেশি চাইবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এটাকে চাপ মনে করলে পারফরম্যান্স করা খুব কঠিন। তবে এটাকে যদি উপভোগ করি তাহলে আমার পারফর্ম করা সহজ হবে। আমি উপভোগ করছি তাই ভালো খেলছি। ব্যাটিংয়ে কম সুযোগ পেয়েছি তবে বোলিং খুব ভালো হচ্ছে।

প্রশ্নঃ আপনার দলের যারা জুনিয়র খেলোয়াড় তারা কি আপনার কাছ থেকে কোন পরামর্শ নেয় কিনা বা তারা কিভাবে নিজেদের ভালো পারফরম্যান্স করার পরিকল্পনা করে?

শুভঃ আমাদের কোচ আমাদের খুব ভালো কোচিং করাচ্ছে। নাদিফ ভাই দলের অধিনায়ক, আমি সহ অধিনায়ক। আমরা সবাই একটা পরিকল্পনা করেই এগিয়ে যাচ্ছি। পেসার, স্পিনার, ব্যাটসম্যান ও অন্যান্য যারা আছে সবাই মিলেই পরিকল্পনা করছি। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে পারায় আমরা সাফল্য পাচ্ছি। সবাই সবকিছু আলোচনা করেই করছি।

প্রশ্নঃ এবারের লিগ অনেক জমজমাট হচ্ছে। টাই হয়েছে, অনেকগুলো ম্যাচই শেষ বলে নিষ্পত্তি হয়েছে। দুই একটা বাদে প্রায় সব দলই শিরোপা লড়াইয়ে আছে। আপনার দৃষ্টিতে এবারের লিগটা কেমন দেখছেন?

শুভঃ হ্যাঁ, এবারের লিগের প্রায় সবগুলো ম্যাচই খুব ভালো প্রতিযোগিতা হচ্ছে। আগে দেখা যেত কিছু দল প্রায় সব ম্যাচেই হারতো। এখন সেটা হচ্ছেনা। এর মানে হচ্ছে আমাদের ক্রিকেটের মান বাড়ছে। খেলোয়াড়দের মান বাড়ছে, প্রতিযোগিতা বাড়ছে। এটা খুব ভালো যখন প্রতিযোগিতা বাড়বে খেলার মানও বাড়বে। তখন আপনি নিজেও নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করবেন। তা নাহলে আপনি প্রতিযোগিতায় থাকতে পারবেন না।

প্রশ্নঃ লিগে আপনার লক্ষ্য কি? লিগ শেষে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

শুভঃ আমার লক্ষ্য যাতে সেরা তিন বোলারের মধ্যে থাকতে পারি। কিন্তু উইকেট পাওয়া সম্পূর্ণ ভাগ্যের উপর নির্ভর করে। দেখা যায় একজন বোলার ভালো বল করেও উইকেট পায়না। আবার কেউ বাজে বল করেও অনেক রান দিয়ে উইকেট পেয়ে যাচ্ছে। এটা আপনারা ভালোই বুঝেন। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে বোলিংটা ভালো হচ্ছে, এটাই আমার কাছে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি যেখানে বল করতে চাচ্ছি তা পারছি কিনা, বলে নিয়ন্ত্রণ ঠিক আছে কিনা, আমার ছন্দ ঠিক আছে কিনা আমি এসবের উপর জোর দিচ্ছি।

প্রশ্নঃ লম্বা সময় ধরে আপনি জাতীয় দলের বাইরে আছেন। আবার জাতীয় দলের ফিরে আসতে নিজেকে কতখানি তৈরি করছেন? আর করলে তা কি করছেন?

শুভঃ অবশ্যই আমি জাতীয় দলে ফিরে আসার চেষ্টা করে যাচ্ছি।  নিজস্ব কিছু পরিকল্পনা করেই অনুশীলন করে যাচ্ছি। এখন জাতীয় দলে বাঁহাতি স্পিনারের সংকট আছে। তাই এটা আমার ভালো সুযোগ। আর আল্লাহর রহমতে এ সময়ই ভালো বোলিং হচ্ছে। নির্বাচকরাও দেখছেন। নান্নু ভাই আমাদের প্রতি ম্যাচেই দেখতে গিয়েছেন। সে সব ম্যাচেই আমার বোলিং দেখেছেন। সে আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।  যদি আমি ভালো করতে পারি তাহলে হয়তো আমার সুযোগ আসতেও পারে।

প্রশ্নঃ নির্বাচকরা আপনাকে ঠিক কি বলছেন?

শুভঃ আমাকে বলেছে, আমার বোলিং খুব ভালো হচ্ছে, ছন্দও ভালো এটা চালিয়ে যাও। এটাই এ মুহূর্তে আমার প্রাপ্তি।

প্রশ্নঃ নান্নুভাই আপনার কয়টা ম্যাচ দেখেছে?

শুভঃ উনি আমাদের চারটি ম্যাচেই ছিলেন। চার ম্যাচেই আমার বোলিং দেখেছেন। উইকেট পেয়েছি, তারচেয়ে বড় কথা ভালো বোলিং করেছি।

প্রশ্নঃ একজন নির্বাচক আপনার বোলিংয়ের প্রশংসা করেছেন এটা আপনাকে কতটুকু অনুপ্রেরণা দেয়?

শুভঃ এটা আমার জন্য অনেক বড় অনুপ্রেরণা। এটা একজন খেলোয়াড়ের আত্মবিশ্বাস নিচ থেকে অনেক উপরে নিয়ে যায়। উনাদের একটা কথা কিংবা একজন সিনিয়র খেলোয়াড়ের কথা মানসিকভাবে অনেক আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

প্রশ্নঃ নির্বাচক বা অন্যান্যরা আপনাকে কোন  কিছু বলেছে। যেমন কোন কোন জায়গায় দুর্বলতা বা কোন কোন জায়গায় উন্নতি করা প্রয়োজন?

শুভঃ আসলে আমার সাথে তেমন কোন কথা হয়নি। তবে আমি নিজে থেকেই বুঝি যে কোন জায়গায় আমার সমস্যা, কোন কোন জায়গায় উন্নতি করতে হবে। কোন জায়গায় আমার মনযোগী হওয়া দরকার। সেটা করার চেষ্টা করছি। দোয়া করবেন যেন সেটা করতে পারি, লিগে যেন ভালো পারফরম্যান্স করে যেতে পারি।

প্রশ্নঃ আপনি নিজে কতটা আত্মবিশ্বাসী?

শুভঃ আমিতো অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী। জাতীয় দলে সুযোগ পাব কি পাবনা তা নিয়ে কোন কিছু বলা ঠিক হবে না। আমার নিজের কাজটা করে যেতে হবে। গত চার ম্যাচ আমি যেভাবে ভালো বোলিং-ব্যাটিং করে যাচ্ছি আশা করি এটা করে যেতে পারলে ভালো একটা ফল পাবো।

আরটি/আরআর/এমআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।