আইপিএলের সেরা একাদশে মুস্তাফিজ


প্রকাশিত: ০৪:০২ পিএম, ০৩ মে ২০১৬

আইপিএলের চলছে মাত্র মাঝপথ। এই মাঝপথে এসে অনেকেই হিসাব-নিকাশ করতে শুরু করে দিয়েছেন। কে যাবে শেষ চারে। কারা এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আলো কেড়ে নিয়েছেন। কে সবচেয়ে বেশি রান করেছে কিংবা কে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন।
তবে ব্যতিক্রমি একটি কাজ করে বসেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ক্রিকেটডটকম ডটএইউ। আইপিএলের মাঝপথেই তারা তৈরী করেছে এখনও পর্যন্ত পারফরম্যান্সের নিক্তিতে আইপিএলের সেরা একাদশ। যেখানে অবধারিতভাবেই ঠাঁই মিলে গেছে নতুন পেস সেনসেশন মুস্তাফিজুর রহমানের।

আসুন দেখে নেয়া যাক স্যাম ফেরিস কর্তৃক তৈরীকৃত ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার আইপিএল একাদশ
ডেভিড ওয়ার্নার (সানরাইজার্স হায়দারাবাদ)
৭ ইনিংস, ৩৮৬ রান, ৭৭.২০ গড়, ১৬৮.৫৫ স্ট্রাইকরেট, সর্বোচ্চ : ৯০, হাফ সেঞ্চুরি ৫টি
বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টির ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে আইপিএলের তৃতীয় ম্যাচ থেকেই ফর্মে ফেরেন ডেভিড ওয়ার্নার। সানরাইজার্স হায়দারাবাদের হয়ে প্রথম দুই ম্যাচ ছিলেন নিষ্প্রভ। তবে পরের ৫টি ইনিংসেই ছিলেন আক্রমণাত্মক। সবগুলোতেই তুলে নিয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি। আইপিএলে টানা ৫ ইনিংসে কোন অধিনায়ক হিসেবে ৫ হাফ সেঞ্চুরি করা প্রথম ব্যাটসম্যান তিনি।

বিরাট কোহলি (রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু)
৭ ইনিংস, ৪৩৩ রান, ৭২.১৬ গড়, ১৩৭.০২ স্ট্রাইকরেট, সর্বোচ্চ : ১০০*, সেঞ্চুরি: ১টি, হাফ সেঞ্চুরি ৪টি
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফর্মই যেন আইপিএলে টেনে এনেছেন তিনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষ করেছেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক (বাছাইপর্ব বাদ দিয়ে) হিসেবে। আইপিএলেও ধরে রেখেছেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের খেতাব। টি-টোয়েন্টির বর্তশান সময়ের সবচেয়ে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান তিনি। তার ব্যাটেই কেবল সম্ভব রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর শিরোপা জয়। নতুন বলে অসাধারণ ব্যাট করে থাকেন।

রোহিত শর্মা (মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স)
৯ ইনিংস, ৩৮৩ রান, ৬৩.৮৩ গড়, ১৩৭.২৭ স্ট্রাইকরেট, সর্বোচ্চ : ৮৫*, হাফ সেঞ্চুরি ৫টি
ওপেনিংয়ে বরাবরই বিধ্বংসী তিনি। তবে পার্টনারের অভাবে রোহিত দলকে কাংখিত সাফল্য এনে দিতে পারছেন না। তবে এই দলে রোহিতকে রাখা হল তিন নম্বরে। এর কারণ, রোহিতের সাফল্যের প্রকৃতি দেখে। গত বছরের মতই শুরুটা ছিল মুম্বাইর একেবারে ব্যাকফুটে থেকে। যদিও ধীরে ধীরে খোলস মেলতে শুরু করেছে রোহিতের দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। রোহিতের ব্যাটের কল্যানেই সম্ভব হচ্ছে শুধু। মুম্বাইর সাফল্য পেতে হলে রোহিতের ব্যাটে ধারাবাহিকতা প্রয়োজন।

এবি ডি ভিলিয়ার্স (রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু)
৭ ইনিংস, ৩২০ রান, ৪৫.৭১ গড়, ১৬৩.২৬ স্ট্রাইকরেট, সর্বোচ্চ : ৮৩, হাফ সেঞ্চুরি: ৩টি
রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর আকর্ষণের অর্ধেকই যেন এই ক্রিকেটারের মধ্যে। নিজের নামের প্রতি সুবিচার করছেন প্রথম থেকেই। রীতিমত ঝড় তুলে ছুটছেন তিনি। বিরাট কোহলির সঙ্গে তার সমন্বয়টা অবম্ভব রকমের। দু’জনের বড় বড় জুটিই প্রতিপক্ষের সামনে বিশাল বড় স্কোর দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। তিনটি সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ করেছেন এই জুটি। এর মধ্যে দুটি হচ্ছে ১৫৭ এবং ১৫৫ রানের। কোহিল তাকে আবার প্রজন্মের সেরা ব্যাটসম্যান আখ্যায়িত করেছেন।

গৌতম গম্ভীর (কলকাতা নাইট রাইডার্স)
৮ ইনিংস, ৩৩৯ রান, ৫৬.৫০ গড়, ১২৩.৭২ স্ট্রাইকরেট, সর্বোচ্চ : ৯০*, হাফ সেঞ্চুরি: ৩টি
এই একাদশে আরও একজন ওপেনার। তবে রাখা হয়েছে ৫ নম্বরে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক এবং ওপেনার। তার ব্যাটে ভর করে একের পর এক জয় রচনা করছে শাহরুখ খানের দল কেকেআর। তিনি যেদিন নিষ্প্রভ, সেদিন দলেরও যেন পরাজয় নিশ্চিত। ৩৪ বছর বয়সেও দারুন ধারাবাহিক তিনি। সানরাইজার্সের বিপক্ষে তার অসাধারণ ব্যাটিংই জিতিয়েছে কেকেআরকে। ৬০ বলে করেছিলেন ৯০। দলের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাট করে যেতে সিদ্ধহস্ত তিনি।

কুইন্টন ডি কক, উইকেটরক্ষক (দিল্লি ডেয়ারডেভিলস)
৬ ইনিংস, ১৯৯ রান, ৩৯.৮০ গড়, ১৬০.৪৮ স্ট্রাইকরেট, সর্বোচ্চ : ১০৮, সেঞ্চুরি: ১টি, হাফ সেঞ্চুরি: ১টি
দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের আরেক টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। দিল্লিকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলেছেন যেন তিনি। এবারের আইপিএলে এখনও পর্যন্ত এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের মালিক তিনি। রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে করেছেন ১০৮ রানের ইনিংস। মাত্র ৫১ বলে খেলেছিলেন এই ইনিংসটি। ১৫টি বাউন্ডারির সঙ্গে ছিল ৬টি ছক্কার মারও। যে কারণে ১৯২ রানের চ্যালেঞ্জও টপকে যায় দিল্লি।

ক্রিস মরিস (দিল্লি ডেয়ারডেভিলস)
৩ ইনিংস, ৯৩ রান, ৪৬.৫০ গড়, ২১৬.২৭ স্ট্রাইকরেট, সর্বোচ্চ : ৮২*, হাফ সেঞ্চুরি: ১টি
প্রায় ১৪ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছিলেন ক্রিস মরিস। মূল্যের সঙ্গে নামের সুবিচার করতে না পারলে যে মান-সম্মানই থাকে না! সুতরাং, প্রোটিয়া এই অলরাউন্ডারের ওপর চাপটাও ছিল। তবে দিল্লির ৬ ম্যাচের মধ্যে যে কয়টা খেলেছেন সেগুলোতে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পেরেছেন তিনি। টি-টোয়েন্টিতে কৃপণ বোলার হিসেবেও বেশ পরিচিত। ৬.২৫ করে ইকনোমি রেট। গুজরাটের বিপক্ষে খেলেছেন দুর্দান্ত একটি ইনিংসও। যদিও ওই ম্যাচে হারতে হয়েছিল তার দলকে। করেছিলেন ৮২ রান। ছক্কা মেরেছিলেন ৮টি।

মোহিত শর্মা (কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব)
৭ ইনিংস, উইকেট: ১০টি, গড় : ১৭.৬, ইকনোটি: ৭.৭০, স্ট্রাইক রেট: ১৩.৭০, সেরা: ৩/২৩
মোহিত শর্মা এমন একটি দলে খেলেন যে দলটি এবারের আইপিএলে একেবারে তলানীতে। তবে অন্যদের ছাড়িয়ে মোহিত একাই যেন জ্বল জ্বল করে জ্বলছেন এই দলটিতে। তার ডান হাতি মিডিয়াম পেস ডান হাতি ব্যাটসম্যানদের জন্য বেশ সমস্যার সৃষ্টি করছে। পুনের বিপক্ষে মোহিত কোন অ্যাকশনেই যেতে পারছিলেন না পাওয়ার প্লেতে। তবে ডেথ বোলিংয়ে এসে স্টিভেন স্মিথ, ধোনি এবং ফ্যাফ ডু প্লেসিসকে ফিরিয়ে দিয়ে প্রমাণ করেছেন নিজের অপরিহার্যতা।

মিচেল ম্যাকক্লেনঘান (মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স)
৯ ইনিংস, উইকেট: ১৩টি, গড় : ২১.১৫, ইকনোটি: ৭.৯৭, স্ট্রাইক রেট: ১৫.৯২, সেরা: ৪/২১
এবারের আইপিএলে সবচেয়ে বেশি উইকেট দখলে নিয়েছেন মিচেল ম্যাকক্লেনঘান। মুম্বাইর আক্রমণের সবচেয়ে বড় শক্তিই এখন এই কিউই পেসার। নিউজিল্যান্ড যখন ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদির মত বোলারকে জাতীয় টি-টোয়েন্টি দলের বাইরে রেখেছিল, তখন আলোচনায় আসে তারা আসলে কী করতে যাচ্ছে। তবে সে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিলেন ম্যাকক্লেনঘান। আইপিএলেও যার ধারাবাহিকতা। রাজকোটে গুজরাটের বিপক্ষে শেষ বলে দুর্দান্ত একটি বল করেছিলেন তিনি। ফলে মুম্বাইকে জয় এনে দিতে পারলেন তিনি।

মুস্তাফিজুর রহমান (সানরাইজার্স হায়দারাবাদ)
৭ ইনিংস, উইকেট: ৮টি, গড় : ২১.২৫, ইকনোটি: ৬.৫৩, স্ট্রাইক রেট: ১৯.৫০, সেরা: ২/৯
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিশ্বকাপেই তাকে আবিস্কার করা হয়েছিল। এখন তো পুরোপুরি আইপিএল তারকা। বাংলাদেশের এই বাঁ-হাতি পেসারের হাতে রয়েছে সব ধরনের অস্ত্র। কার্টার, ইয়র্কার, স্লোয়ার, বাউন্সার- কী নেই তার হাতে! সানরাইজার্স হায়দারাবাদে পরিচিতি পেয়েছেন ‘ফিজ’ নামে। শুধুমাত্র ভাষাগত সমস্যার কারণে অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের সঙ্গে তার যোগাযোগে একটু সমস্যা হয়। কিন্তু তার বলে বিশ্বের সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরা সমস্যায় পড়েছেনই। পাঞ্জাবের বিপক্ষে মাত্র ৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। প্রথম ১৫ বলে দিয়েছেন মাত্র ১টি রান। পুরো চার ওভারে একটি বাউন্ডারিও হজম করেননি তিনি। ২৪ বলের মধ্যে দিয়েছেন মোট ১৭টি ডট বল। এই একাদশের নিশ্চিতভাবেই তাকে রাখতে হলো।

অমিত মিশ্র (দিল্লি ডেয়ারডেভিলস)
৬ ইনিংস, উইকেট: ৮টি, গড় : ১৬.৮৭, ইকনোটি: ৭.১০, স্ট্রাইক রেট: ১৪.২৫, সেরা: ৪/১১
এবারের আইপিএলে স্পিনারদের দুরাবস্থার মধ্যে উজ্জ্বল অমিত মিশ্র। ৩৩ বছর বয়সী এই লেগ স্পিনার যেভাবে বল ঘুরাচ্ছেন, তাতে বিপদে পড়তে বাধ্য হচ্ছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা। প্রতি ম্যাচেই তিনি থাকছেন কৃপণ বোলার হিসেবে। এক ম্যাচ সর্বোচ্চ ২৭ রান দিয়েছেন তিনি। পাঞ্জাবের বিপক্ষে ১১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে তো বিস্ময়ই সৃষ্টি করেছিলেন। একই সঙ্গে পাঞ্জাবের ব্যাটিং লাইনআপকে গুঁড়িয়ে দেন তিনি। ম্যানন ভোরা, শন মার্শ, ডেভিড মিলার এবং গ্লেন ম্যক্সওয়েলের উইকেট নেন তিনি।

আইএইচএস/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।