বিসিবি সভাপতি হিসেবে ফারুক আহমেদই যেখানে প্রথম

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১০:৩৮ এএম, ২২ আগস্ট ২০২৪

ভারত ও শ্রীলঙ্কায় জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়কের ক্রিকেট বোর্ড প্রধান হওয়ার নজির আছে। ১৯৯৬ সালে বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট বোর্ড প্রধান হয়েছিলেন। ভারতের সাবেক অধিনায়ক, প্রিন্স অফ কলকাতা সৌরভ গাঙ্গুলিও বিসিসিআইয়ের সভাপতি ছিলেন;কিন্তু বাংলাদেশে এতকাল জাতীয় দলের কোন অধিনায়ক বহুদুরে, কোন জাতীয় ক্রিকেটারও আগে কখনো বিসিবি প্রধানের দায়িত্ব পাননি।

সেদিক থেকে তিনি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করতেই পারেন। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ফারুক আহমেদই প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার এবং জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক যিনি বিসিবি সভাপতি হলেন। এক কথায় বাংলাদেশের সাবেক জাতীয় অধিনায়কদের মধ্যে ফারুক আহমেদই প্রথম দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিবি প্রধানের চেয়ারে বসলেন।

তার পূর্বসূরী জাতীয় দলের চার সাবেক অধিনায়ক শামীম কবির, শফিকুল হক হীরা, রকিবুল হাসান, গাজী আশরাফ হোসেন লিপু যা পারেননি এখনো। জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিতে না পারলেও খেলা ছেড়ে যিনি নিজ সাংগঠনিক দক্ষতায় এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সিইও পর্যন্ত হয়েছিলেন, সেই নামী ক্রিকেট সংগঠক সৈয়দ আশরাফুল হকেরও এখন পর্যন্ত বিসিবি সভাপতির চেয়ারে বসার সৌভাগ্য হয়নি। তবে তিনি সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন।

ফারুকের সমসাময়িক ক্রিকেটার মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও আকরাম খানরা যে পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেননি, অবশেষে সেই পদে আসীন ফারুক আহমেদ। জাতীয় দলের এ সাবেক অধিনায়ক এখন বিসিবির বিগ বস।

ফারুক আহমেদকে বিসিবি প্রধানের দায়িত্ব দিয়ে ড. মোহাম্মদ ইউনূসের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটা নতুন নজির স্থাপন করলো। ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়কদের মধ্যে ফারুক আহমেদকে প্রথম বিসিবি প্রধান করার কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন।

এতকাল জানা ছিল, রাষ্ট্রের বা সরকারের এবং বিশেষ করে সরকারী দলের কোন মন্ত্রী, ডাকসাঁইটে সংসদ সদস্যকেই করা হয়েছে বিসিবি প্রধান। এবারের অন্তর্বতীকালীন সরকার সেই ধারা ভেঙ্গে জাতীয় দলের এক সাবেক অধিনায়কের কাঁধে দিলেন দেশের ক্রিকেটের অভিভাবকের গুরু দায়িত্ব।

সেই ১৯৭৩ সালে সাবেক মন্ত্রী প্রফেসর ইউসুফ আলীকে দিয়ে শুরু। তারপর পর্যায়ক্রমে বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন বিভিন্ন সময়ে সরকারি দলের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা। এরশাদ সরকারের আমলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লে. কর্নেল মোস্তাফিজুর রহমান, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, ২০০১ সালে বিএনপি সাংসদ আলী আসগর লবি, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সাবেক পরিকল্পনা ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল এবং সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সাংসদ (পরে ক্রীড়া মন্ত্রী) নাজমুল হাসান পাপন ছিলেন বিসিবি প্রধান।

এর মাঝখানে ওয়ান ইলেভেনের সময় বোর্ডের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন সাবেক সেনা কর্তা লে. জেনারেল সিনা ইবনে জামালী; কিন্তু এবার সেই মন্ত্রী ও সাংসদের ধারার ব্যত্যয় ঘটিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তারা বেছে নিয়েছে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক চিফ সিলেক্টর ফারুক আহমেদকে।

জাতীয় দলের প্রথম সাবেক অধিনায়ক থেকে প্রথম বিসিবি প্রধান হতে পেরে কেমন লাগছে ফারুক আহমেদের? আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এ প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে খানিক আবেগতাড়িত ফারুক, ‘আই অ্যাম ভেরি প্রিভিলেজড।’

মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ফারুক বলেন, `মহান আল্লাহর কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। নিজেকে অবিশ্যই সৌভাগ্যবান মনে করছি। আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তিনিই আসলে মানুষকে সন্মান দান করেন। সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তাআলার। তিনিই মানুষকে সম্মান দান করেন। আবার তিনিই নিয়েও নেন। ‘

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়কের হাতে দেশের ক্রিকেট বোর্ড পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত হওয়া নিয়ে ফারুকের ব্যাখ্যা, `শুরুটা দেরি করে হয়েছে। তবে শুরুতো হয়েছে। এটা কন্টিনিউ করবে কিনা? সেটাতো আর আমার এখতিয়ার না। আমি তা নিশ্চিত করে বলতেও পারবো না। তবে আমার বিশ্বাস, এটা কন্টিনিউ করবে। ‘
সাবেক বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপন জাতীয় দলের ওপর নানা হস্তক্ষেপ করতেন। তিনি তো ৩ বারের চিফ সিলেক্টর, `আপনিও কি জাতীয় দলে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবেন?‘

উত্তরে ফারুক বলেন, `আপনারা জানেন আমি আমার কাজ (দল নির্বাচনে) অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণেই প্রধান নির্বাচকের পদ ছেড়ে দিয়েছিলাম। বলতে পারেন, জাতীয় দলে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ছিল আমার আন্দোলন। নোট অফ ডিসেন্ট আমি লিখে গেছিলাম। আমি যেহেতু ওই কাজ করে গেছিলাম, তাই হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা জিরো পারসেন্ট বলবো না, নাই বললেই চলে। ’

এটাই শেষ নয়, দায়িত্ব পেয়ে ফারুক আহমেদ জানান দিলেন, তিনি ভুল পথের যাত্রী হতে আসেননি। মিডিয়ার সাথে আনুষ্ঠানিক কথা-বার্তা ছাড়া যত্রতত্র কথা বলা মোটেই সমীচিন ও শোভন নয়। তা মাথায় থাকতো না বিসিবির বিদায়ী সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের। এক যুগের বেশী সময় বোর্ড সভাপতি হিসেবে শতাধিকবার তিনি মিডিয়ার সাথে কথা বলেছেন। তবে বেশিরভাগ বিসিবি অফিসের বাইরে। অফিসের নীচে, নিজ বাসার গ্যারেজ - যেখানে খুশি কথা বলতেন নাজমুল হাসান পাপন।

কিন্তু দায়িত্ব পাওয়ার দিনই ফারুক আহমেদ জানিয়ে দিলেন, `মিডিয়ার সাথে কোনরকম অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা বলবো না আমি। আর যত্র তত্রতো নয়ই।‘

এমনকি আজ বুধবার সকালে ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের কনফারেন্স হলেও উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে সেভাবে কথা বলেননি নতুন বিসিবি বিগ বস। মন্ত্রনালয়েও তাৎক্ষণিকভাবে তার প্রতিক্রিয়া নিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন উপস্থিত কজন সাংবাদিক। কিন্তু দীর্ঘদিন ক্লাব ক্রিকেট, জাতীয় দলে খেলা, জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করা এবং ২-৩ বারে অন্তত ৭ থেকে ৮ বছর প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করা ফারুক যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের কনফারেন্স হলের বাইরেও সেভাবে কথা বলতে চাননি।

সেখানেই তিনি জানিয়ে দেন, বিসিবি সভাপতি হিসেবে আমার মনে হয় বিসিবি কনফারেন্স হলে সব সাংবাদিকের সাথে কথা বলাই উত্তম। যে কথা সেই কাজ। ফারুক আহমেদ আজ বুধবার দুপুরে হোম অফ ক্রিকেটের কনফারেন্স হল ভর্তি জনাকীর্ন সংবাদ সম্মেলনেই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলেছেন মিডিয়ার সাথে। ’

এআরবি/আইএইচএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।