জুলাই থেকে নয়া স্কেল : দ্বিগুণ করার সুপারিশ


প্রকাশিত: ০৭:২৮ এএম, ২১ ডিসেম্বর ২০১৪

আগামী জুলাই মাস থেকে সরকার পে-কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়ন শুরু করবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।

তিনি বলেছেন, কমিশনের সুপারিশ হাতে পেলাম। এখন এটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। মন্ত্রী সভাও কথা হতে পারে। তবে এটি সরকার খুশি মনেই গ্রহণ করেছে। এর বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের। আমরা সেটি করব।

অন্যদিকে, কমিশন তার সুপারিশে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করেছেন। রোববার জাতীয় পে ও সার্ভিস কমিশনের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর মুহিত এসব কথা বলেন।

এ সময় অর্থ সচিব বলেন, পে-কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে অর্থের কোন সংকট হবে না। অর্থ পাওয়া যাবে। তবে এর উৎস কি হবে তা তাৎক্ষণিক বলতে পারেননি তিনি। অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে কমিশনের সভাপতি মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন সদস্যদের নিয়ে প্রতিবেদন জমা দেন।

প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর ফরাসউদ্দিন নতুন বেতনকাঠামোতে কী কী সুপারিশ করা হয়েছে সে ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

বেতন ও গ্রেড
মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন জানান, নতুন বেতনকাঠামোতে ১৬টি গ্রেড করার সুপারিশ করা হয়েছে, বর্তমানে ২০টি গ্রেড আছে। ছয় সদস্যের পরিবারকে একক ধরে করা নতুন বেতনকাঠামোতে সর্বনিম্ন বেতন স্কেল আট হাজার ২০০ এবং সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা নির্ধারণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে গ্রেড ‘এক’-এর সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন হবে নির্ধারিত ৮০ হাজার টাকা আর ১৬তম ধাপধারীদের বেতন স্কেল হবে আট হাজার ২০০ টাকা। এ ছাড়া সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানকারীদের স্কেল হবে ২৫ হাজার টাকা।

বেতন ভাড়বেই
কমিশনের সভাপতি জানান, পদোন্নতি হোক বা না হোক সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ১৫ বছরে দ্বিগুণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া সচিবদের ৮০ হাজার টাকার সঙ্গে আরও চার হাজার টাকা অতিরিক্ত দেওয়ার প্রস্তাব করেছি। সিনিয়র সচিবদের বেতন ৯০ হাজার টাকা এবং কেবিনেট সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের বেতন এক লাখ টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে। এই বেতনকাঠামো কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান কার্যকর মহার্ঘ ভাতা বিলুপ্ত করা হবে।

আলাদা বেতন কাঠামো নয়
ফরাসউদ্দিন বলেন, সরকারের অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে আলাদা বেতন কাঠামো থাকবে না। এমনকি প্রেষণে যাবেন যারা তারাও কোন ভাতা পাবেন না। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংকগুলোতেও একই কাঠামো থাকবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য আলাদা বেতনকাঠামো করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে জাতীয় বেতনকাঠামোর গ্রেড মেনে চলতে হবে।

বীমার আওতা
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বীমা প্রথা চালুরও সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বীমার আওতায় চিকিৎসা সেবা পাবেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তবে কোন নগদ অর্থ পাবেন না। এতে বীমা  খাতেও প্রাণ তৈরি হবে।

আবাসন সংকট
সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসন-সংকট মেটানোর জন্য কিছু আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফ্ল্যাট তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে। ১০ বা ২০ জন সরকারি চাকরিজীবী মিলে গ্রুপ করে জমি কিনে ফ্ল্যাট নির্মাণ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সরকার যেন ৫০ মাসের বেতন সম পরিমাণ অর্থ ঋণ হিসেবে দেন। গাড়ি কেনার জন্য ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ারও সুপারিশ আছে।

বাড়বে পেনশন
ফরাসউদ্দিন বলেন, পেনশন বর্তমান ৮০ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশে উন্নীত করা যায় কি না, সেটি বিবেচনার সুপারিশ করেছি আমরা। স্বেচ্ছা অবসরের চাকরির বয়স২৫ বছর থেকে কমিয়ে ২০ বছর করার প্রস্তাব রয়েছে। আর চাকুরি থেকে অবসরে যাবার সময় ১২ মাস থেকে বাড়িয়ে ১৮ মাস করার কথা রয়েছে।

আলাদা ব্যাংক পাবেন
কমিশনের সভাপতি জানান, রাজধানীর দৈনিক বাংলায় থাকা সরকারি জমি থেকে ২০-২৫ কাঠা জমি বিক্রি করে একটি ব্যাংক গঠন করা যেতে পারে। এই ব্যাংকের নাম ‘সমৃদ্ধির সোপান ব্যাংক’।  ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে ৪০০ কোটি টাকা। ব্যাংকটি উন্নয়ন ও বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে কাজ করবে। এই ব্যাংক থেকে ‘এক অংকে’ সুদে ঋণ দেওয়া সম্ভব হবে বলেও মনে করছে কমিশন।

ব্যয়
বেতনকাঠামোর সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করলে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন গড়ে ৬৩ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়বে। আর বাজেট ব্যয় বাড়বে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। যা আগের মেয়াদে ছিলো ১৫ শতাংশ।

ফরাসউদ্দিনের মতে, সরকারি চাকরি আকর্ষণীয় না হলে আগামী দিনের প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। একটি স্থায়ী বেতন ও চাকরি কমিশন গঠনের সুপারিশ আমরা করছি।

অর্থমন্ত্রী যা বললেন
নতুন বেতনকাঠামোর প্রতিবেদন পাওয়ার পর অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আজ রিপোর্টটি পেয়েছি। এটি পর্যবেক্ষণ করব। আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকর করা হবে। আগামী দিনের অর্থনীতি হবে আলাদা ধরনের অর্থনীতি। সেই অর্থনীতির জন্য একটি সেটিসফাইড (সন্তুষ্ট) প্রশাসন দরকার। আমরা সেভাবেই এগোচ্ছি। আমরা ভাবিনি প্রতিবেদনটি আমাদের সরকারের কাছে আসবে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে এমনটি মনে হয়েছিলো। তবে সরকার খুব খুশি মনে এটি গ্রহণ করেছে। এটির বাস্তবায়ন করা হবে।

মুহিত বলেন, এর বাস্তবায়নে একটি কমিটি গঠন করা হবে। সেটি নিয়ে চিন্তা করতে হবে। মন্ত্রী সভার বৈঠকে প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা হবে।

মূল্যস্ফীতি বাড়বে না
মুহিত জানান, পে-কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করলে মূল্যস্ফীতি মোটেও বাড়বে না। গত ২৮ বছরে বাজেটের আকার যেভাবে বেড়েছে, গত ৫ বছরেই সেটি হয়েছে। সুতরাং মূলস্ফীতি নিয়ে ভাবছি না।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।