অ্যাথলেট জহির রায়হান-মাহফুজুর রহমান

‘ইমরান ভাইয়ের সাফল্যই আমাদের মনে জিদ তৈরি করেছে’

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৬:২৯ পিএম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ইংল্যান্ড প্রবাসী ইমরানুর রহমান দুই বছর আগে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে ২২ বছরের পূরনো রেকর্ড ভেঙ্গে দেশের দ্রুততম মানবের খেতাব অর্জন করেছিলেন। এরপর থেকেই বাংলাদেশের অ্যাথলেটিক ফেডারেশনের সব দৃষ্টি চলে যায় তার ওপর। বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় শুধুই ইমরানুর রহমানকে পাঠাতে থাকে ফেডারেশন।

ইমরানুরের কারণে আড়ালে পড়ে যান অন্য অ্যাথলেটরা। অভিযোগ ওঠে, দেশের অ্যাথলেটিকস হয়ে উঠেছে ইমরানুর রহমান কেন্দ্রিক, বঞ্চিত হচ্ছেন অন্যরা। এরমধ্যে গত বছর কাজাখস্তানের আস্তানায় এশিয়ান ইনডোরে ৬০ মিটারে স্বর্ণ জিতে সব আলো কেড়ে নেন ইমরানুর।

অনেকেরই ধারণা ছিল ইমরানুর ছাড়া অন্যদের পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে সাফল্য ছিনিয়ে আনা সম্ভব নয়। যে কারণে, লন্ডন প্রবাসী এই অথেলেটের বেশি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। অথচ সুবিধার ছিটেফোঁটও পাননা অন্য অ্যাথলেটরা।

অবহেলিত সেই অ্যাথলেটরাই এবার দেখিয়ে দিলেন সুযোগ পেলে তারাও পারেন দেশকে সম্মান এনে দিতে। ইরানের তেহরানে শেষ হওয়া এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে ৪০০ মিটারে রৌপ্য জিতে জহির রায়হান ও হাইজাম্পে ব্রোঞ্জ জিতে মাহফুজুর রহমান জানান দিলেন, তাদেরও সামর্থ্য আছে।

ইমরানুর রহমান পারেননি। কাজাখস্তানে জেতা স্বর্ণ হারিয়ে ইরানে হয়েছেন চতুর্থ। আর প্রথমবার অংশ নিয়েই বাজিমাত করেছেন জহির রায়হান। রৌপ্য জিতে চকম দেখিয়েছেন তিনি। ইমরানুরের ব্যর্থতার রাতে ব্রোঞ্জ জিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন মাহফুজুর রহমানও।

মঙ্গলবার রাতে অ্যাথলেটিক দল দেশে ফিরলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অ্যাথলেটদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। আর বুধবার বিকেলে তারা উপস্থিত হন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। তেহরানে পদক জয়ের গল্প সেখানে গণমাধ্যমকে শুনিয়েছেন ৪০০ মিটারের রৌপ্যজয়ী জহির রায়হান ও হাইজাম্পে ব্রোঞ্জজয়ী মাহফুজুর রহমান।

আগের দিন রাতে বিমানবন্দরে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়েছিল জহির ও মাহফুজুরকে। বুধবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আসার পরও ফুলের মালায় ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের গলা। এ ধরণের দৃশ্য বাংলাদেশের অ্যাথলেটিকসে বিরল। কোনো অ্যাথলেট আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দেশে ফিরলে তাদের নিয়ে উচ্ছ্বাস কমই দেখা যায়। তাই বুধবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ট্র্যাকে ব্যতিক্রমী দৃশ্যই দেখা গেলো।

Imranur Rahman

রৌপ্যজয়ের পর এ কয়দিনে অনেক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তবে দেশে ফিরে এসে এখন কেমন লাগছে এবং পদক জয়ের আগে-পরের গল্প যদি বলতেন। জহির রায়হান বলেন, ‘আলল্লাহর অশেষ রহমতে দেশের হয়ে পদক জিততে পেরে ভালো লাগছে। এই প্রথম এশিয়ান ইনডোর চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছি। দেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছি। আমি সর্বোচ্চটা চেষ্টা করেছি। রুপা জিততে পেরে অনেক আনন্দ লাগছে।’

প্রথম অংশ নিতে যাওয়ার পর পদকের আশা আগে ছিল কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে জহির রায়হান বলেন, ‘কিছুদিন আগে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ ছিল। তখনই টার্গেট নির্ধারণ করেছিলাম। এশিয়ান ইনডোরে ভালো কিছু করার। আমি সেভাবে নিজেকে তৈরি করেছিলাম। যারা আমার সঙ্গে কাজ করেছেন, আমার সংস্থা নৌ বাহিনী, ফেডারেশণ, বিওএ। এছাড়া আমি ট্রেনিং করেছি বিকেএসপিতে। এছাড়াও অন্যান্য যারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন। সবার সহযোগিতায় আজকে আমি এই অজর্ন করতে পেরেছি।’

ইমরানুর রহমান এবার স্বর্ণ হারালেও নিজের রৌপ্যজয়ের পেছনে লন্ডন প্রবাসী এ অ্যাথলেটের অনুপ্রেরণার কথা উল্লেখ করতে ভুলেননি জহির ‘ইমরান ভাইকে অভিনন্দন জানাই। তিনি আমাদের সর্বপ্রথম ইনডোরে গোল্ড এনে দিয়েছেন। তাকে দেখে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। উনি দেশের জন্য সম্মান এনেছেন। তার সাফল্য দেখে আমাদের মনে জিদ কাজ করেছে যে, উনি পারছেন, আমরাও পারবো। ওইভাবে আমরা নিজেকে তৈরি করেছি। এশিয়ান মঞ্চে আমরা নিজেদেরকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছি। সঠিক অনুশীলন চালিয়ে যেতে পারলে আগামীতে আরও ভালো করতে পারবো। অ্যাথলেটদের সুযোগ–সুবিধার যে ঘাটতিগুলো রয়েছে, সেগুলো পুরোপুরি পেলে এশিয়ান লেভেলে ভালো কিছু করা সম্ভব।’

অল্পের জন্য স্বর্ণ জিততে পারেননি জহির। শেষ দিকে শক্তি ক্ষয় হয়েছিল উল্লেখ করে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর এ অ্যাথলেট বলেন, ‘৪০০ মিটার ইভেন্টে শেষ ধাপে এসে শক্তি ক্ষয় হয়ে যায়। তাছাড়া আরেকটা বিষয় হলো, আবহাওয়ার পার্থক্য। এই প্রথম অনুশীলন ছাড়াই আমি ইনডোরের টার্ফে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলাম। এখানে একটা ট্রেনিংয়ের বিষয় রয়েছে। আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়েছি। এক সময় ভেবেছিলাম হয়তো প্রথম হয়ে যাবো। বলতেই হয় যে, আমার একটা অভিজ্ঞতার অভাব ছিল। তাই শেষ ধাপে একটু পিছিয়ে পড়েছিলাম।’

হাইজাম্পার মাহফুজুর রহমান বেশ খুশি ব্রোঞ্জ জিতে। দেশে ফিরে প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘এটা আমার দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক পদক। এর আগে এসএ গেমসে রৌপ্য পেয়েছি। তবে ইনডোর এবং এশিয়ান লেভেলে এটা আমার প্রথম কোনো পদক। শুকরিয়া আল্লাহর কাছে। এশিয়ার মধ্যে এটাই বাংলাদেশে প্রথম হাইজাম্পে পদক। ভালোভাবে অনুশীলন করতে পারলে আরো বেশি সাফল্য আনা সম্ভব।’

আরআই/আইএইচএস/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।