শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম প্রকল্প

খেলার উপযোগী নয় মাঠ, এক পাশে শোচনীয় অবস্থা

রফিকুল ইসলাম
রফিকুল ইসলাম রফিকুল ইসলাম , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৬:৪৩ পিএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

তরুণদের মাদকের পথ থেকে ফিরিয়ে খেলার মাঠে আনার চিন্তা থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি উপজেলায় উম্মুক্ত মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সরকার প্রধানের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ‘উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প তৈরি করে তা ৪ ধাপে বাস্তবায়ন করছে। এরই মধ্যে প্রথম ধাপের ১২৫ টি মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ শেষ হয়েছে। চলছে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের কাজ। দ্বিতীয় ধাপের ২৫ স্টেডিয়াম এরই মধ্যে উদ্বোধন করা হয়েছে।

শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম প্রকল্প বাস্তবায়নের সরকারী চিত্রের সঙ্গে অনেকাংশেই মিল নেই বাস্তবতার। কোথাও মাঠ তৈরি করা হয়েছে; কিন্তু সেই মাঠ খেলার উপযোগী নয়, কোথাও নেই রক্ষণাবেক্ষণ। কোথাও মাঠ দখলে রয়েছে রাখালদের, খেলার কোনো বালাই নেই সেখানে। মিনি স্টেডিয়ামের জন্য যে সব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে, সে সবের অবস্থাও শোচনীয়।

জাগোনিউজের পক্ষ থেকে খোঁজ নেয়া হয়েছে সারা দেশে বাস্তবায়নরত এই মিনি স্টেডিয়াম প্রকল্পের। ধারাবাহিকভাবে সেগুলোই তুলে ধরা হলো জাগোনিউজের পাঠকদের জন্য। প্রথম পর্বের শিরোনাম ছিল- হাজার হাজার কোটি টাকার স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণে নেই কোনো বরাদ্দ। আজ প্রকাশিত হলো দ্বিতীয় পর্ব।

ঢাকা বিভাগে প্রথম ধাপে যে ২৭টি শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে তার একটি ফরিদপুর সদর উপজেলায়। ফরিদপুর-বরিশাল সড়কের বাখুন্ডায় কুমার নদের গা ঘেঁষে যে খেলার মাঠ ছিল সেখানে তৈরি হয়েছে সবার খেলাধুলার জন্য উম্মুক্ত এই স্টেডিয়াম।

মাঠ ছিল বলে এখানে শিশু-কিশোর, তরুণরা খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকতো আগে থেকেই। এখন ছোট্ট অবকাঠামো হওয়াতে নতুন রূপ নিয়েছে বাখুন্ডা স্টেডিয়ামটি। এখানে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ এবং সারাদিন খেলাধুলার ব্যস্ততায় বেশ খুশি ফরিদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ফুটবলার মো. মাসুদুর রহমান চুন্নু।

‘এখানে সকাল-বিকাল খেলা হয়। ইউনিয়ন পর্যায়ের বিভিন্ন টুর্নামেন্ট এখানে হয়। স্কুল-কলেজের ছেলেরাও এখানে খেলাধুলা করে থাকে। ১৬ দল নিয়ে সিনিয়র পর্যায়ের একটা ফুটবল টুর্নামেন্ট হয়েছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের প্রয়াত এক চেয়ারম্যানের নামে’-বলছিলেন মো. মাসুদুর রহমান চুন্নু।

তবে তিনি কিছু সমস্যার কথাও জানিয়েছেন, ‘এই যেমন খোলা মাঠ, পাশেই নদী। ফুটবল-ক্রিকেট যাই খেলুক, বল চলে যায় নদীতে। তাই বাচ্চাদের অনেক বল খোয়া যায়। মাঠের নদীর দিকটায় গ্যালারি করে দিলে এ সমস্যা থাকবে না। তাছাড়া স্টেডিয়াম রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও কেউ নেই এখানে।’

খেলাধুলার জন্য কার্যকর ও পাশাপাশি কিছু সমস্যার কথা বলেছেন ফদিরপুর সদর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘এখানে খেলাধুলা অনেক হয়। কিছুদিন আগে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবলের উপজেলা পর্যায়ের খেলা হলো। তবে মাঠের এক পাশের অবস্থা শোচনীয়। মানে নদীর দিকটায়। মাঠও ফুটবল খেলার মতো পুরোপুরি ভালো অবস্থায় নেই। তাছাড়া এই স্টেডিয়াম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো গার্ড নেই, বাজেট নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) আমরা যারা ক্রীড়া সংস্থায় আছি তারা যতটুকু পারি রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করি।’

শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম প্রকল্পের প্রথম ধাপের সবগুলোই একই মডেলে তৈরি করা হয়েছে। যেখানে এক তলা বিল্ডিংয়ে থাকার কথা দুটি ড্রেসিংরুম, ছেলে ও মেয়েদের জন্য তিনটি করে ৬টি টয়লেট। তবে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের দাবি ‘এখানে কোনো ড্রেসিংরুম ও টয়লেট নেই। যখন খেলাধুলা হয় তখন ব্যবহার করতে হয় মাঠের পাশে অবস্থিত স্কুলের ড্রেসিংরুম ও টয়লেট ।

বেঞ্চের কাজ ভালো না হওয়ায় ভেঙ্গে পুনরায় করা হয়েছে

রাজশাহী বিভাগের ৬৭ উপজেলার মধ্যে প্রথম ধাপে স্টেডিয়ামে নির্মাণ হয়েছে ১১টিতে। যার একটি নওগাঁর বদলগাছিতে। এই স্টেডিয়ামের একতলা ভবনের সামনে আরসিসি যে বেঞ্চগুলো আছে শুরুতে সেগুলো নিয়ে হয়েছিল বিপত্তি।

বদলগাছি উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এম জামান পিন্টু বলেন, ‘প্রথমে বেঞ্চের কাজগুলো এতটাই খারাপ হয়েছিল যে, তা ছিল ব্যবহারের অযোগ্য। আমি নিজে সেগুলো ভেঙ্গে ফেলেছিলাম। পরে ঠিকাদার মজবুত করে বানিয়ে দিয়েছে। এই বিল্ডিংয়ে একটি অফিসরুম, দুটি ড্রেসিংরুম ও ছেলে-মেয়েদের জন্য আলাদা ৬টি টয়লেট আছে। ড্রেসিংরুমে ফ্যান ও প্লাস্টিকের চেয়ার আছে।’

এক সময় এখানে ইটের ভাটা ছিল। অনেক বছর আগে মাঠ তৈরি করা হয়েছিল। সেখানেই হয়েছে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম। উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের মতে, ‌‌‘এখানকার মাঠটি দেখার মতো। নওগাঁ জেলার মধ্যে এখানে সবচেয়ে বেশি খেলাধুলা হয়। বিশেষ করে মেয়েদের ফুটবল ও হ্যান্ডবল। নওগাঁ জেলার যে নারী ফুটবল দল হয় তার মধ্যে ১৮ জনই আমাদের উপজেলার।’

jagonews

অন্যসব স্টেডিয়ামের মতো এখানেও রক্ষণাবেক্ষণ বড় সমস্যা। রক্ষণাবেক্ষণের প্রসঙ্গ তুলতেই এম জামান পিন্টু বললেন, ‘এটা দুঃখজনক। এ স্টেডিয়াম রক্ষণাবেক্ষণের কোনো বরাদ্দ নেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও), আমি মিলে কোনোভাবে ব্যবস্থা করি। আমাদের বাৎসরিক যে বরাদ্দ দেওয়া হয় সেখান থেকে কিছু খরচ করি। রাতে যাতে অপরাধী বা মাদকসেবীরা ঢুকে ভেন্যুর ক্ষতি করতে না পারে সে জন্য একটা ছেলেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সেভাবে তার পারিশ্রমিক দিতে পারি না। আমরা নিজেরা বকশিস দিয়ে থাকি তাকে। রাতে যাতে কিছু চুরি না হয় সেজন্য আলোর ব্যবস্থা আছে আমাদের এখানে।’

আরআই/আইএইচএস/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।