মাশরাফিকে চেনা রূপেই দেখতে চাই

ক্রীড়া প্রতিবেদক ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৪২ পিএম, ২২ মার্চ ২০১৬
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে জাগো নিউজে নিয়মিত লিখছেন মোহাম্মদ আশরাফুল

ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যাচ। দু’দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ যেহেতু প্রথম দুটি ম্যাচ হেরে গেছে, তাতে সেমিফাইনালের সম্ভাবনা খুবই কম। তবুও একটা গাণিতিক হিসাবের কথা বলা হচ্ছে। সে হিসাবটা টিকিয়ে রাখতে হলে, এই ম্যাচে জয়ের বিকল্প নেই। ভারতেরও সেমিফাইনালে খেলতে হলে অবশ্যই জিততে হবে। এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কালকের ম্যাচটি। আশা করবো বাংলাদেশ ভালো ক্রিকেট খেলবে এই ম্যাচে।

খেলাটা তো একই মাঠে। এই ম্যাচেও রান উঠবে প্রচুর। সুতরাং, বাংলাদেশের জন্য একটি টাফ ম্যাচই হবে মনে হচ্ছে। যদিও আগের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আমরা বেশ ভালো খেলেছিলাম। কয়েকটি জায়গায় কিছু ভুল করেছি। না হয় ফল আমাদের পক্ষেই আসতো। আশা করবো, মাশরাফির যে ভূমিকাটা ছিল গত ম্যাচে, সেটা এই ম্যাচে এসে আরও ভালো হবে।

গত ম্যাচে তো মাশরাফির মানসিক অবস্থা খুবই ডাউন ছিলো। চেহারা দেখে, কথা-বার্তা শুনেই মনে হয়েছে সে অনেক বেশি ডাউন। আশা করবো ভারতের বিপক্ষে মাচে ওই জিনিসগুলো ভুলে সে আবার স্বাভাবিক খেলায় ফিরে আসবে। আমরা গত দেড়-দুই বছর ধরে যে মাশরাফিকে দেখে আসছি, যে সবাইকে উৎসাহ দেয়, খেলায় উজ্জীবিত রাখে, মাঠে সব সময় সরব উপস্থিতি তার- এসব আবার এই ম্যাচে ফিরে আসবে।

আমার মতে ভারতের বিপক্ষে মাশরাফির একটা সারপ্রাইজ দেয়া উচিৎ। বিপিএলের এক ম্যাচে দেখা গেছে সে ৫ নম্বরে ব্যাট করতে এসে দুর্দান্ত একটি ফিফটি উপহার দিয়েছে। বেঙ্গালুরুতে ভারত যদি সত্যি সত্যি স্পিনিং ট্র্যাক বানায়, তাহলে মাশরাফিকে এমন চিন্তা আবারো করা উচিৎ। শুধু তাই নয়, নাম্বার থ্রি কিংবা নাম্বার ফোরে ব্যাট করতে নেমে যাওয়া উচিৎ হবে।

মাশরাফি অন্তত একটা গেম্বলিং করতে পারে। আমাদের তো আসলে হারানোর কিছু নেই। আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলাটাই দলে থেকে আমরা চাই। সুতরাং, এমন একটা সারপ্রাইজ দিয়ে দলের উপকার হলে মন্দ হয় না। এমনিতে, ব্যাটিং উইকেট হলে তো কথাই নেই। তারা সম্ভবত স্পিনিং ট্র্যাক বানাতে পারে। সে ক্ষেত্রে মাশরাফি গেমটা খেলে দিলেই পারে। সে মাঝে-মধ্যেই হুট-হাট এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে এবং ভালোও করে। মানুষ এ কারণেই সম্ভবত তাকে বেশি ভালোবাসে। আমারও বিশ্বাস, সে যদি চায়, তাহলে সাকসেসও হতে পারে।

braver
গত ম্যাচে সম্ভবত মাশরাফি উইকেটটাও খুব বেশি বুঝতে পারেনি। কারণ, পেস বোলারদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে খুব দক্ষতার পরিচয় দেয়নি। আল-আমিন ২ ওভার বল করে ১৪ রান দিয়েছিল। সে নিজেও ১ ওভার বল করে খুব একটা খারাপ করেনি; কিন্তু পেসাদের খুব বেশি ব্যবহার করেনি সে। স্পিনারদেরকেই ব্যবহার করেছে বেশি। আমি মনে করি, ভারতের বিপক্ষে এই ম্যাচে এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠবে মাশরাফি এবং দলও ভালো কিছু উপহার দিতে পারবে তাহলে।

একটা কথা মনে রাখতে হবে, টি-টোয়েন্টিতে ভারত কিন্তু সত্যিই ভয়ঙ্কর। গত ৭-৮ বছর ধরে আইপিএল খেলে তারা সত্যিই দুর্দান্ত একটি দলে পরিণত হয়েছে। তাদের নির্দিষ্ট একটি ব্যাটসম্যানকে নিয়ে চিন্তা করলে হবে না। রোহিত-বিরাট থেকে শুরু করে জাদেজা-পাণ্ডে পর্যন্ত সবাই ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান। সুতরাং, প্রতিটি ব্যাটসম্যান নিয়েই আলাদা আলাদা চিন্তা করতে হবে আমাদের।

তারাও বাংলাদেশকে হালকাভাবে নেবে না। ওয়ানডেতে তো আমরা অনেক শক্তিশালী এটা প্রমাণ করেছি। টি-টোয়েন্টিতে হয়তো এতটা শক্তিশালী হইনি। তবে গত ৭-৮টা ম্যাচ তো ভালো খেলছি। এশিয়া কাপ থেকে শুরু, বিশ্বকাপের প্রায় সব ম্যাচেই ভালো খেলেছি, পাকিস্তান ম্যাচ ছাড়া। সুতরাং, আমাদের আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে হবে। যদিও প্রথম ৬ ওভার কিংবা মাঝে কিছু ওভারে আমাদের রান উঠছে না। অথচ, কত সুন্দর ব্যাটিং উইকেট। এই বিষয়টা এই ম্যাচে মনে রাখতে হবে।

স্পিন উইকেট বানালে আমার মনে হয় আমাদের জন্য ভালো হবে। কারণ, স্পিনিং ট্র্যাকে মুস্তাফিজের কাটারটা ভালো ধরবে। স্লোয়ারও খারাপ হবে না। বাকি বোলার যারা আছে, যেমন মাশরাফি কিংবা আল-আমিন, তাদের বলগুলোও এই উইকেটে ভালো হবে। তাই স্পিন উইকেট হলে আমাদের জন্য ভালোই হবে। যদিও ব্যাটিংয়ে একটু চিন্তা থেকে যাবে। ভারত খুব পাওয়ার শট খেলে। এ ক্ষেত্রে পাওয়ার ব্যাটসম্যানদের দায়িত্ব নিতে হবে। তামিম, সাকিব, মাহমুদুল্লাহ এবং মাশরাফিকে দায়িত্বটা পালন করতে হবে। নাসিরকে নিয়ে কথা উঠছে কয়েক জায়গা থেকে। তবে আমার মনে হয় না। আর তাকে খেলানো হবে। কারণ এ পর্যায়ে এসে আর তাকে খেলানোর ঝুঁকি হয়তো নেবে না ম্যানেজমেন্ট। শুভাগত হোমই হয়তো খেলবে।

অনেকেই বলছে, ভারতকে হারাতে পারলে তাসকিন-সানিকে নিষিদ্ধ করার একটা মোক্ষম জবাব হবে। তবে পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে আমি তেমনটা মনে করি না। কারণ, আমাদেরকে তো সব কিছু ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। আমি চিন্তা করি না এর জবাব হবে কি না। আমাদের কাজ হলো ভালো খেলা। যে ঘটনাটা হয়েছে, এর মধ্যে সানির বিষয়টা হয়তো আমরা মেনে নিয়েছি। কারণ, এটা হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল; কিন্তু তাসকিনের বিষয়ে আমরা সবাই খুব অবাক হয়েছি। সমর্থকরা হয়তো চিন্তা করছে, অস্ট্রেলিয়া-ভারতের চাপেই তাসকিনদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে; কিন্তু আমরা যেহেতু ক্রিকেটার, আমাদেরকে এসব চিন্তা না করে ভালো ক্রিকেট খেলার দিকেই মনযোগী হতে হবে।

লেখক: বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক।

আইএইচএস/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

আরও পড়ুন