মাশরাফিদের লক্ষ্য এবার ইডেন এবং পাকিস্তান জয়


প্রকাশিত: ০৪:০৬ পিএম, ১৫ মার্চ ২০১৬

১৯৯০ সালের ৩১ ডিসেম্বর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ তখনও হাটি হটি পা পা। ১৯৮৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু করার পর থেকে চার বছরে মাত্র আটটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা অর্জণ করেছিল বাংলাদেশ। সামান্যতম অভিজ্ঞতা নিয়ে সেদিন ইডেনের মাঠে খেলতে নেমেছিল টাইগাররা। প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। সেদিন ৭১ রানে ম্যাচটি হারলেও বাংলাদেশ ক্রিকেটকে পথ দেখিয়েছিলেন আতাহার আলী খান।

৭৮ রান করে বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ম্যান অব দ্যা ম্যাচের পুরস্কার জিতে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের আগমনীবার্তা জানিয়ে দেন তিনি। এরপর কেটে গেছে ২৫টি বছর। এই দীর্ঘ সময়ে আর ইডেনে খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। লম্বা বিরতির পর আবারও সেই ইডেনের খেলতে নামছে বাংলাদেশ। বিশ্বক্রিকেটে আতাহারের দেখানো পথ হেঁটে বাংলাদেশ এখন রীতিমত পরিণত হয়েছে একটি জায়ান্ট দলে। এখন তারা পাকিস্তান-শ্রীলংকার মত দলগুলোকে বলে-কয়ে হারাতে পারে।

বিশ্বকাপের মূল পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই পাকিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে হারানোর তরতাজা স্মৃতি নিয়ে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে আগামীকাল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপের সুপার টেনে নিজেদের প্রথম ম্যাচ বেলা সাড়ে ৩টায় পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামবে মাশরাফি অ্যান্ড কোং।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপের এবারের আসরের বাছাই পর্ব শুরুর মাত্র একদিন আগেই ধর্মশালা খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। অপরিচিত কন্ডিশনে যে দারুণ ক্রিকেট খেলে বাংলাদেশ, তার প্রমাণ ধর্মশালাতেই দিয়েছে তারা। বৃষ্টি বাধা না হয়ে দাঁড়ালে টানা তিনটি ম্যাচেই জয় পেত মাশরাফিরা। অথচ এ বাংলাদেশই এবারের বিশ্বকাপে একমাত্র দল যারা কোন প্রস্তুতি ম্যাচ না খেলেই মাঠে নেমেছিল। এশিয়াকাপের ফাইনালে খেলা বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে বাছাই পর্ব খেলতে দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন। তবে বেশ দাপটের সঙ্গেই মূল পর্ব নিশ্চিত করেছে তারা। বাছাই পর্ব খেলাই শাপেবর হয়েছে টাইগারদের জন্য। প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার ঘাটতি বাছাই পর্ব দিয়ে পুষিয়ে পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে মূল পর্বে খেলতে নামছে টিম বাংলাদেশ।

এ ম্যাচে বাংলাদেশ তাকিয়ে থাকবে সাকিব আল হাসানের দিকে। আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলার কারনে, একমাত্র তারই এ মাঠে খেলার দারুণ অভিজ্ঞতা রয়েছে। ইডেনের উইকেট সম্পর্কে খুব ভালো জানেন তিনি। জানেন কলকাতার আবহাওয়া সম্পর্কেও। ইডেনের উইকেটে কখন সুইং করে, কখন ব্যাট করা সহজ, কখন কঠিন- তার কাছ থেকে এসব পরামর্শ নিয়েই মাঠে নামবে টাইগাররা। এ প্রসঙ্গে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, ‘সাকিব কেকেআর দলের সদস্য। ইডেনে অনেক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। জাতীয় দলের হয়ে বহুদিন খেলছে। ওর (সাকিব) যা অভিজ্ঞতা রয়েছে অন্য বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের তা নেই। তাই ওর পরামর্শ মেনেই আমরা পাকিস্তান ম্যাচ খেলতে নামছি।’

সাকিবের পাশাপাশি তামিম ইকবালের ব্যাটের দিকেও তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। ক্যারিয়ারের সেরা সময় পার করা তামিম বাছাই পর্বে তিন ম্যাচে করেছেন ২৩৩ রান। দারুণ ফর্মে আছেন সাব্বির রহমানও। সঙ্গে দলের সেরা তারকা সাকিব আল হাসানের ফর্মে ফেরা বাড়তি সংজোযন। বোলিংয়ে যথারীতি দুর্দান্ত বাংলাদেশ কাল হয়তো মাঠে পাচ্ছেন দলের নতুন পেস সেনসেশন মুস্তাফিজুর রহমানকে। ব্যাথা কমলে এ ম্যাচে খেলবেন তিনি- এমনটাই জানিয়েছেন দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন।  

ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিতব্য এ ম্যাচে দর্শকদের আগ্রহও বিশাল। ইতোমধ্যেই সকল টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এখন প্রশ্ন তারা কাদের সমর্থন দিবেন? ২৫ বছর আগে সেদিন ইডেনের দর্শকদের পুরো সমর্থন পেয়েছিল বাংলাদেশ। সে ম্যাচে খেলা আতাহার, আকরাম, ফারুক, নান্নুরা জানালেন এমনটাই। কাল তারা মাঠে থাকবেন দর্শক হিসেবে। আশা করছেন এবারও কলকাতার বাঙালিরা সমর্থন দেবেন বাংলাদেশকে। এমনটা আশা করেছেন মাশরাফিও। বলেন, ‘আমরা আশা করব বাঙালি দর্শকরা আমাদেরকেই সমর্থন করবেন। ইডেনকে আমরা হোম গ্রাউন্ডের মতোই দেখছি।’ যদি এমনটাই হয় তবে আগামীকাল বাড়তি অনুপ্রেরণা পাবেন টাইগাররা।

পাকিস্তানের বিপক্ষে মুখোমুখি লড়াইয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ। নয় ম্যাচের সাতটিতেই জয় পেয়েছে তারা। তবে আগের বাংলাদেশের সঙ্গে বর্তমানের বাংলাদেশের পার্থক্য অনেক। সর্বশেষ পাঁচটি সীমিত ওভারের খেলায় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তাই এ ম্যাচে বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নামবে টাইগাররা।

অপরদিকে সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেটটা ভালো হচ্ছে না পাকিস্তানের। সর্বশেষ ১০ ম্যাচে সাতটিতে হেরেছে তারা। দলের ব্যাটসম্যানরাও নেই সেরা ফর্মে। তবে বোলিংয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন মোহাম্মদ আমির। সঙ্গে রয়েছেন মোহাম্মদ ইরফান, মোহাম্মদ সামি ও ওয়াহাব রিয়াজের মত বিধ্বংসী বোলাররা। তবে যত খারাপ সময়ই কাটুক বিশ্ব ক্রিকেটে আনপ্রেডিক্টেবল খ্যাত পাকিস্তান যে কোন সময়ই ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। তাই আগামীকাল এ ম্যাচটি আকর্ষণীয় ম্যাচ হবে বলেই বিশ্বাস করছেন ক্রিকেট ভক্তরা।

আরটি/আইএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।