হুমায়ুন আহমেদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ
জননন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ুন আহমেদের আজ দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। তার গল্প উপন্যাসের মতো তার লেখা গানও হৃদয়স্পর্শী। মৃত্যুদিনে তাকে স্মরণ করার পাশাপাশি তার সৃষ্টিকেও স্মরণ করবে অনুরাগীরা।
‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো চলে এসো এক বরষায়/এসো ঝরঝর বৃষ্টিতে/জলভরা দৃষ্টিতে/এসো কোমল শ্যামল ছায়... যদিও তখন আকাশ থাকবে বৈরী/কদমগুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরি/ উতলা আকাশ মেঘে মেঘে হবে কালো ঝলকে ঝলকে নাচিবে বিজলি আলো/ তুমি চলে এসো এক বরষায়।’
‘একটা ছিলো সোনার কন্যা, মেঘ বরণ কেশ/ভাটি অঞ্চলে ছিলো সেই কন্যার দেশ/দুই চোখে তার আহারে কী মায়া/নদীর জলে পড়ল কন্যার ছায়া/তাহার কথা বলি/তাহার কথা বলতে বলতে/নাও দৌড়াইয়া চলি...’
‘মাথায় পরেছি সাদা ক্যাপ/হাতে আছে অচেনা এক শহরের ম্যাপ/ব্যাগ ঝুলিয়েছি কাঁধে/নামব রাজপথে/চারদিকে ঝলমলে রোদ/কেটে যাবে আঁধারের ছায়া-অবরোধ...’
অথবা এছাড়াও ‘চাঁদনী পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়’, ‘ও আমার উড়াল পঙ্খিরে যা যা তুই উড়াল দিয়ে যা’, ‘আমার ভাঙা ঘরে ভাঙা চালা’, ‘ভাঙা বেড়ার ফাঁকে’, ‘চলো বৃষ্টিতে ভিজি’, ‘এখন খেলা থেমে গেছে মুছে গেছে রং’, এ রকম হৃদয়স্পর্শী জনপ্রিয় গানের রচয়িতা হুমায়ুন আহমেদ। তাকে বলা হয় বাংলা সাহিত্যের সর্বকালের অন্যতম প্রধান জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক। স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদকে বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যেরও পথিকৃৎ বলা হয়। নাট্যকার হিসেবে যেমন নন্দিত চলচ্চিত্রকার হিসেবেও তেমনই সমাদৃত। বাংলা কথাসাহিত্যের সংলাপ প্রবণে নতুন শৈলীর জনক হুমায়ুন আহমেদের দুই শতাধিক গ্রন্থের বেশকিছু পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তার গ্রন্থ। গত ১৯ জুলাই ২০১২ সালে এমন একজন গুণী মানুষ হারিয়েছে বাংলাদেশ এবং বাংলা ভাষাভাষি মানুষ। বাংলা সাহিত্যের এই প্রবাদ পুরুষের জন্ম ১৩ নভেম্বর ১৯৪৮ সালে নেত্রকোনা জেলার কুতুবপুর গ্রামে। বাবার চাকরির সূত্রে তার শৈশব কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায়। দেখেছেন বহু মানুষ এবং তাদের জীবনানুভূতি। এর ফলেই হুমায়ুন আহমেদের লেখায় উঠে এসেছে বাঙালি মধ্যবিত্তের নানা সংকট বিচিত্র জীবনযাপন আর হৃদয়ের টানাপোড়েন। লেখাপড়া বগুড়া জেলা স্কুল, ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও সবকিছু ছেড়ে লেখালেখি নাটক আর চলচ্চিত্র নির্মাণই হয়ে ওঠে তার নেশা ও পেশা।
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : দেয়াল, নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, জোছনা ও জননীর গল্প, বহুব্রীহি, গৌরীপুর জাংশান, দ্বিতীয় মানব, মধ্যাহ্ন এবং হিমু-সংক্রান্ত প্রায় ২৪টি সিরিজ উপন্যাস। তার মিসির আলী-সংক্রান্ত উপন্যাসও রয়েছে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে। আÍজীবনী : বল পয়েন্ট, কাঠপেন্সিলসহ প্রায় আটটি গ্রন্থ। উল্লেখযোগ্য টিভি নাটক- এসব দিন রাত্রি, কোথাও কেউ নেই, অয়োময়, নক্ষত্রের রাত, বহুব্রীহি, আজ রবিবার তারা তিনজন। চলচ্চিত্র - আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, শ্যামল ছায়া, ঘেটুপুত্র কমলা।
কোটি হৃদয়ের ভালোবাসায় সিক্ত হুমায়ুন আহমেদ পেয়েছেন বাংলা একাডেমী পুরস্কার একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, শিশু একাডেমী পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পদক, বাচসাস পুরস্কার, হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার।
বাংলাসাহিত্যের এই জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকের প্রথম মৃত্যুদিবস পালিত হবে তার সৃষ্টিকর্মের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এবং আলোচনার মধ্যে দিয়ে।