মুস্তাফিজের না থাকাটা ভোগাবে বাংলাদেশকে


প্রকাশিত: ০৭:০৩ পিএম, ০১ মার্চ ২০১৬

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নামার আগেই ফেভারিট ছিল ভারত। মাঠে নেমেও তারা সেটার প্রমাণ দেখিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, শ্রীলঙ্কা দলটিকে কেমন যেন ছন্নছাড়া লাগছিল। একে তো দলটি একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তারওপর, বেশ কয়েকটি বড় নাম নেই। মাহেলা-সাঙ্গাকারা তো অবসরেই চলে গেলেন। বাকি যারা আছেন তাদের মধ্যে এই দলটির বড় মুখ হচ্ছেন মালিঙ্গা আর ম্যাথিউজ।

ইনজুরির কারণে খেলতে পারছেন না মালিঙ্গা, ম্যাথিউজ যে ফর্মে আছেন- এটা কোনোভাবেই বলা যাবে না। তারকাদের মধ্যে দিলশানও রয়েছেন। কিন্তু নামের সঙ্গে তার খেলা কোনোভাবেই খাপ খাওয়ানো যাবে না। সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কার আত্মবিশ্বাসটাও যেন ছিল খুব নিম্নমুখি। আর ভারত তো এমনিতেই আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটছে।

শ্রীলঙ্কাকে হারানোর ফলে প্রথম দল হিসেবে ভারতের ফাইনালে ওঠা নিশ্চিত হয়ে গেল। বাকি স্থানটির জন্য লড়াই করতে হবে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কাকে। ইতিমধ্যে দুই ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে ঠিক; কিন্তু বুধবার পাকিস্তানকে মোকাবেলা করতে হবে তাদের।

অনেকেই বলবে, শ্রীলঙ্কার হারের কারণে বাংলাদেশের লাভ হয়েছে। আমি বিষয়টাকে মোটেও এভাবে দেখতে চাই না। বাংলাদেশ যে বড় শক্তিধর দুটি দেশের সঙ্গে সমানতালে ফাইনালে ওঠার লড়াই করছে, সেটাই আমাদের ক্রিকেটে আমি মনে করি অনেক বড় অর্জন। নিজেদের খেলাটা খেলতে পারলে আমি মনে করি এখন যেকোনো দলকেই হারনোর ক্ষমতা রাখে বাংলাদেশ।

সুতরাং, কে জিতলো, কে হারলো, কার হারে কার কী লাভ হলো- এগুলো নিয়ে ভাববার কোনো অবকাশ নেই। সামনে পাকিস্তান না অন্য কেউ সে চিন্তাও করার প্রয়োজন নেই। শুধু নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। নিজেদের সেরা খেলাটা খেলার চেষ্টা করতে হবে। এই ম্যাচ না জিতলে ফাইনালে উঠতে পারবো না, এমন চিন্তা-ভাবনা করার প্রয়োজন নেই। তাহলেই চাপ বেড়ে যাবে। প্রত্যাশার চাপ যখন খুব বেশি বেড়ে যাবে, তখন ভুল করার পরিমাণও বাড়বে। সুতরাং, চাপ তৈরি হয় এমন কোনো চিন্তাও আনা যাবে না মাথার ভেতর। নিজেদের সেরা ক্রিকেট বের করে আনতে পারলে, সেটাই হবে সাফল্যেও মূল চাবিকাঠি।

পাকিস্তানের বিপক্ষে জিততে হলে বাংলাদেশ দলকে সুন্দর একটা পরিকল্পনা রাখতে হবে। উইকেট কী চায় সেটাও বুঝতে হবে। উইকেট যদি ১২০-১৩০ অ্যালাউ করে তাহলে সেটাই করতে হবে। উইকেট যদি ১৬০-৭০ ডিমান্ড করে, তাহলে সেভাবে ব্যাটিং করতে হবে। পাকিস্তানর মোহাম্মদ আমিরকে মোকাবেলা করাটা একটু সমস্যা হতে পারে। ৫ বছর নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা একটা ছেলে কিভাবে এমন আগুন ঝরাতে পারেন তা দেখার বিষয়।

আমিরের ভয়ে ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তাকে একটু দেখে-শুনে খেললেই হবে। তার ৪ ওভার থেকে বড় জোর ১৫ কিংবা ২০ রান নেয়ার চিন্তা করতে হবে। আমির হার্ডল পার করে দিতে পারলে বাকিগুলোতে রান আসবেই। আমিরকে নিয়ে যতটা এগিয়ে পাকিস্তান, ততটা পিছিয়ে বাংলাদেশ। কারণ, মুস্তাফিজের না থাকা।

গত বছর এই পাকিস্তানের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক মুস্তাফিজের। সেই থেকে বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে সে। তিন ফরম্যাটেই সেরা মুস্তাফিজ। তবে আমি মনে করি, টি-টোয়েন্টিতে সে ভয়ঙ্কর। টি-টোয়েন্টিতে সব ব্যাটসম্যানই তো শটস খেলতে চায়। কিন্তু মুস্তাফিজের বলে শটস খেলা খুবই কঠিন। রীতিমত অসম্ভব। এই চার ওভারই অনেকটা ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। বাংলাদেশের জন্য একটা সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ যে মুস্তাফিজ নেই। তার ওই চার ওভারের গ্যাপটা পূরণ হওয়ার মতো নয়। তার বিকল্প হতে পারে না।

তবে এটাও ঠিক, মুস্তাফিজকে হারিয়ে আমরা তামিমকে পেয়েছি। তামিম টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে সম্ভবত সেরা সময় পার করছেন। কিন্তু পারিবারিক সমস্যার কারণে হয়তো প্রথম থেকে এশিয়া কাপ খেলতে পারেনি। তবে তার অনুপস্থিতিতে ওপেনিংয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছিল, সেটা কেটে যাবে। দলের ব্যাটিং শক্তিতে একটা ভারসাম্য আসবে। মুস্তাফিজের না থাকাটা বোলিংয়ে শক্তি কমালেও, তামিমের ফেরায় ব্যাটিংয়ে শক্তি বেড়েছে। মোট কথা, পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের যে সামর্থ্য আছে, তার পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারলে অবশ্য আশা করি জয় আসবে।

লেখক: বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ওপেনার

আইএইচএস/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।