আবারও জটিলতার ফাঁদে হাইটেক পার্ক


প্রকাশিত: ০২:৫৯ এএম, ০৪ ডিসেম্বর ২০১৪

আবারও জটিলতার জালে কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক নির্মাণ প্রকল্প। অভিযোগ উঠেছে, এবার সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) সিদ্ধান্ত গোপন করে প্রকল্পে ঠিকাদার নিয়োগে নথি পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পিপিপি দপ্তরে। এর মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অন্যতম বৃহৎ প্রকল্প হাইটেক পার্কের চারটি ব্লকের দুটিতে ঠিকাদার নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে একনেক। কিন্তু সিপিটিইউর সিদ্ধান্ত গোপন করায় বাকি দুটি ব্লকের ঠিকাদার নিয়োগ নিয়ে ফের জটিলতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এর আগে স্বপ্নের এ প্রকল্পে অনিয়ম, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর মামলার ফাঁদে প্রায় ১৪ বছর ঝুলে থাকে। শেষ পর্যন্ত গত ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পর হাইটেক পার্ক নির্মাণে জটিলতা দূর হয়। আগের টেন্ডার বাতিল করে নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। তবে যে প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সুবিধা দিতে গিয়ে আগে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল, এখনও সে প্রতিষ্ঠানকেই বাড়তি সুবিধা দিতে গিয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন জট। তবে এখনও উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

এ ব্যাপারে ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, স্বপ্নের হাইটেক পার্ক প্রকল্প বাস্তবায়নের সব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিন-রাত কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানকেই বাড়তি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। দুটি রেসপরসিভ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি যথাযথ নিয়মে দুটি ব্লক পেয়েছে। বাকি দুটি ব্লকের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আগামী সপ্তাহে নির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ ব্যাপারে সিপিটিইউর মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবেই, আর কোনো জটিলতায় পড়বে না।

নতুন জটিলতা যেভাবে : কালিয়াকৈরে দেশের বৃহত্তম হাইটেক পার্ক নির্মাণে গঠিত হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের নির্বাহী কমিটিই পুরো প্রকল্প তত্ত্বাবধান করছে। নথি অনুসন্ধানে দেখা যায়, হাইটেক পার্কের জন্য সংরক্ষিত ২৩২ একর জায়গা পাঁচটি ব্লকে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে ১ নম্বর ব্লক সরকারিভাবে সংরক্ষণের জন্য রেখে বাকি চারটি ব্লকের উন্নয়নের জন্য চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ১০টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়। পরবর্তী সময়ে বাছাইয়ের মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য বিবেচনায় সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত এসআইএমসিএল-ইনফিনিটি জয়েন্টভেঞ্চার এবং এফএআইএম জয়েন্টভেঞ্চার নামে দুটি প্রতিষ্ঠান চূড়ান্তভাবে রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল (আরএফপি) দাখিল করে। সূত্র জানায়, এ পর্যায় থেকেই অনিয়ম শুরু হয়।

আর্থিক প্রস্তাবে পাঁচটি কপি জমা না দেওয়ায় নির্বাহী কমিটির বৈঠকে এফএআইএম জয়েন্টভেঞ্চারকে অযোগ্য ঘোষণার প্রস্তাব ওঠে। তবে এ নিয়ে বৈঠকে কমিটির সদস্যদের মধ্যে দ্বিমত হয়। বিতর্কের পর এ ব্যাপারে দরপত্র-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ক্ষমতাপ্রাপ্ত সিপিটিইউর মতামত নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, চলতি বছরের ১৬ অক্টোবর সিপিটিইউ সিদ্ধান্ত পাঠায়। এতে বলা হয়, যে কোনো দরপত্রের ক্ষেত্রে আর্থিক প্রস্তাব সাধারণত একাধিক কপি নয়, এক কপিই জমা নেওয়া হয়। অন্যান্য দলিল ঠিক থাকার কারণে শুধু আর্থিক প্রস্তাবের একাধিক কপি জমা না দেওয়ায় কোনো প্রতিষ্ঠানকে নিয়ম অনুযায়ী অযোগ্য ঘোষণা করার সুযোগ নেই। একই দিন নির্বাহী কমিটির বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের আলোচনায় সিপিটিইউর মতামতের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। তবে সিপিটিইউর মতামতসাপেক্ষেই ঠিকাদার নিয়োগের প্রস্তাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গত ৫ নভেম্বর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শ্যামসুন্দর সিকদারের স্বাক্ষরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পিপিপি দপ্তরে পাঠানো প্রস্তাবে সিপিটিইউর সিদ্ধান্তের তথ্য গোপন করা হয় এবং ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত আংশিক উল্লেখ করে এককভাবে এসআইএমসিএল-ইনফিনিটি জয়েন্টভেঞ্চারকে চারটি ব্লকের জন্যই যোগ্য উল্লেখ করা হয়।

এ ধরনের অনিয়মে ক্ষুব্ধ এফএআইএম জয়েন্টভেঞ্চার আইনগত পদক্ষেপে গেলে নতুন করে বড় জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে বলেও সূত্র জানায়।প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বিষয়টি সম্পর্কে জানান, ১৬ অক্টোবর নির্বাহী কমিটির বৈঠকের আগ পর্যন্ত সিপিটিইউর সিদ্ধান্ত পেঁৗছায়নি। তাদের সিদ্ধান্তের কপি পরে পাওয়ায় তা নিয়ে আলোচনাও হয়নি। তাই সিদ্ধান্ত গোপন করা হয়েছে, এ কথা বলা যায় না। স্বচ্ছতার স্বার্থেই সব পক্ষের অনাপত্তি নিয়ে এসআইএমসিএল-ইনফিনিটি জয়েন্টভেঞ্চারকে দুটি ব্লকের কাজ দেওয়া হয়েছে। সূত্র: সমকাল

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।