মুক্তিযুদ্ধ চর্চা কেবল ইতিহাস চর্চা নয়
‘মুক্তিযুদ্ধ চর্চা কেবল ইতিহাস চর্চা নয়, একই সঙ্গে চেতনার চর্চাও বটে। মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী পক্ষ রাজাকারদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন প্রয়োজন যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানতে পারে এদেশের মহান মুক্তি সংগ্রামে কারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।’ শনিবার বিকেল ৪টায় অমর একুশে বইমেলার মূলমঞ্চে এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধচর্চা : অতীত থেকে বর্তমান শীর্ষক আলোচনা সভাটির আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক মেসবাহ কামাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, ড. মোহাম্মদ সেলিম এবং দিব্যদ্যুতি সরকার।
সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা। অনুষ্ঠানের শুরুতে সদ্যপ্রয়াত কবি কায়সুল হকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
বক্তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কোনো সামরিক বাহিনীর যুদ্ধমাত্র নয়, এটি এক জনযুদ্ধের নাম। তাই এই জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র ও সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের অবস্থান ও আকাঙ্ক্ষার ইতিহাস প্রণীত হলেই সম্ভব মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাবয়ব ইতিহাস নির্মাণ।’
অধ্যাপক মেসবাহ কামাল তার প্রবন্ধে বলেন, ‘বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চর্চার নানা মাত্রা রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে গবেষণা হয়েছে। আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি থাকাকালে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতও হয়েছে। নয় মাসের রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধ, গেরিলাযোদ্ধা, যুদ্ধাপরাধ, বধ্যভূমি, গণহত্যা, নারী নির্যাতন ইত্যাদি নানা বিষয়ে গবেষণা হলেও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ লক্ষ শরণার্থী নিয়ে আরো বিস্তৃত গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।’
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সাড়ে চার দশক অতিক্রান্ত হয়েছে। সঙ্গত কারণেই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার দাবি উঠছে। আমরা আশা করি, বস্তুনিষ্ঠভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রণয়নের মধ্য দিয়ে আলোকিত আগামীর পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবে।’
বইমেলায় সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী নিমাই মন্ডল এবং তামান্না নীপা। সোহেল রহমানের পরিচালনা নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্য সংগঠন ‘শিখর কালচারাল অর্গানাইজেশন’-এর শিল্পীবৃন্দ।
এছাড়াও সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী জিনাত রেহানা, বদরুন্নেসা ডালিয়া, শ্যামা সরকার, জয় শাহরিয়ার, পল্লব গোমেজ, রাজু আহমেদ এবং জুলি শারমিলী। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন বাবু জামান (তবলা), এফএম আলমগীর কবির (বাঁশি), মো. আজিজুর রহমান (কি-বোর্ড), প্রদীপ কুমার কর্মকার (প্যাড) এবং রিচার্ড কিশোর (গিটার)।
এর আগে সকাল ১০টায় অমর একুশে উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমির মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শিশুকিশোর সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব। প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিশুসাহিত্যিক সুজন বড়ুয়া, নাট্যজন মাসুম রেজা এবং বাংলা একাডেমির পরিচালক শাহিদা খাতুন।
উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন অনিশা দাস, দ্বিতীয় হয়েছেন যুগ্মভাবে আনান আবরার ইসলাম ও রেজা শাওয়াল রিজওয়ান এবং তৃতীয় হয়েছেন সিরাতুল মোস্তাাকিম শ্রাবণী।
সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন আকিবা আফরোজ রাকা, দ্বিতীয় হয়েছেন তাসফিয়া চৌধুরী এবং তৃতীয় হয়েছেন আদনান বিন আলমগীর। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা কমিটির আহ্বায়ক ড. আমিনুর রহমান সুলতান।
এমএইচ/বিএ