স্বপ্নের ফাইনালের সামনে বাংলাদেশের যুবারা
গত একটি বছর দু`হাত ভরে সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। মাশরাফিদের বড় সাফল্য ছিল ওয়ানডে ক্রিকেটে। স্বপ্নের মত বছরটি কাটিয়ে নতুন বছরে বাংলাদেশ। এই বছরটি যেন যুবাদের। বছরের শুরু থেকেই সাফল্যের হাতছানি। ইতিহাস সৃষ্টি করে নতুন ইতিহাসের সন্ধানে মেহেদী হাসান মিরাজরা। প্রথমবারের মত যে কোন পর্যায়ের যে কোন বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলছে বাংলাদেশ।
এবার স্বপ্নটা আরও অনেক বড়। সেমির গণ্ডি ছাড়িয়ে দষ্টি সীমায় এখন শুধুই ফাইনাল। তাতে তৈরী হবে আরেক ইতিহাস। স্বপ্ন পুরনের আরেকটি ধাপ। সেই স্বপ্ন আর ইতহাসের সামনে মিরাজদের বড় বাধা ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেমিফাইনালে ওই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে পারলেই স্বপ্নের ফাইনালে উঠে ইতিহাস সৃষ্টি করে ফেলবে বাংলাদেশের যুব ক্রিকেটাররা। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় মিরপুর শের-ই বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে দু`দল।
এই তো মাত্র ক`দিন আগেই ক্যরিবীয় যুবাদের বলে কয়ে হারিয়েছে মিরাজরা। করেছে হোয়াইটওয়াশ। যার তরতাজা স্মৃতি সঙ্গী করে সেমির লড়াইয়ে মাঠে নামবে মিরাজরা। যদিও বিশ্বকাপে এসে বদলে গেছে ক্যারিবীয়রা। ওদের খেলা নয় শুধু, শরীরি ভাষা, মুখের ভাষাতেও বদলে গেছে তারা। যে কারণে, বাংলাদেশকে হারানোর হুমকি দিচ্ছে বেশ বড় গলায়। তারপরও স্বপ্নঘোড়ায় ছোটা বাংলাদেশের একটাই লক্ষ্য ‘জয়’। ক্যরিবীয়দের হারিয়েই ইতিহাসটা গড়তে যায় যুব টাইগাররা।
ইতিহাসও মিরাজদের পক্ষে কথা বলছে। এর আগে এ দু`দল মোট ১৭ বারের লড়াই করেছে। এর মধ্যে ১২বারই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। আর মিরাজের অধিনায়কত্বে ১০বার মোকাবেলা করে ৭টিতে জয়। ঘরের মাঠে ৭ ম্যাচের মাত্র ১টিতে হেরেছে মিরাজরা। বিশ্বকাপ শুরুর আগেও তিন ম্যাচের সিরিজে সহজ জয় তুলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যুবাদের হোয়াইটওয়াশ করে যুবারা।
কিন্তু বিশ্ব ক্রিকেটে অন্যতম আনপ্রেডিক্টেবল দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইতিহাসও তাদের অনেক সমৃদ্ধ। যুবাদের সেরা এই আসরে এর আগে চার বার সেমিফাইনালে খেলার অভিজ্ঞতা আছে তাদের। এমনকি ২০০৪ সালে বাংলাদেশের মাটিতে ফাইনালও খেলেছিল তারা। তাই মাঠে যখন-তখন যে কোন কিছু করে ফেলায় তাদের জুড়ি মেলা ভার। গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও ম্যানক্যাডিং করে পায় লজ্জাজনক জয়। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত জয় তুলে নিয়ে আনপ্রেডিক্টেবল নামের সার্থকতা ধরে রাখে তারা।
পক্ষান্তরে টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দারুন ধারাবাহিক ক্রিকেট খেলে এখন পর্যন্ত অপরাজিত বাংলাদেশ। বড় কোন পরীক্ষায় পড়তে হয়নি মিরাজদের। তারপরও দলের উদ্বোধনী জুটি ভাবাচ্ছে বাংলাদেশকে। তবে মিডেল অর্ডারে দারুণ ফর্মে রয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। টুর্নামেন্টে ২০৯ রান করে সেরা দশ ব্যাটসম্যান তালিকায় রয়েছেন। ব্যাট হাতে ছন্দে রয়েছেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজও। এছাড়াও কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে ছন্দে ফেরার আভাস দিয়েছেন জাকির হাসান ও জয়রাজ শেখ।
অপরদিকে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরাও কোয়ার্টার ফাইনালে দারুণ খেলেছেন। শামার স্পিংগার, গিড্রন পোপ ও অধিনায়ক শিমরন হেতমায়ের নিয়মিত রান করছেন।
ক্যারিবিয়ান পেসাররা বিশেষ করে জোসেফ এই টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গতির বোলার। পাশাপাশি হোল্ডারও দারুণ বল করছেন। তবে তাদের পেসারকে ভয় পাচ্ছে না বাংলাদেশ শিবির। দলের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, আমরা বেশি গতির বল খেলতে পছন্দ করি। কম গতির বল খেললে মিস টাইমিংয়ের সম্ভাবনা বেশি থাকে। বেশি গতির বোলারদের বিপক্ষে আমরা সব সময় আত্মবিশ্বাসী থাকি। টুর্নামেন্টে আমরা ৪টি ম্যাচ খেলেছি ওইরকম গতির কোন বোলার ছিলো না। এই জন্য আমাদের ওপেনারদের কিছুটা সমস্যা হয়েছে। আশা করি কালকের ম্যাচটা অনেক ভালো খেলবে সবাই।’
দলকে ফাইনালে তুলতে দারুণ আশাবাদি বাংলাদেশ দলের কোচ মিজানুর রহমান বাবুলও। স্কোরবোর্ডে আড়াইশতর কাছাকাছি রান তুলতে পারলে বোলাররা তা ধরে রাখতে পারবেন জানান তিনি। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেহেতু ওদের সেরা শক্তি পেস অ্যাটাক। আমাদের টপ অর্ডার যদি ঠিকঠাক পারফর্ম করে, তবে মিডল অর্ডার ও লোয়ার অর্ডারের কাজটা সহজ হয়ে যায়। প্রথমে ব্যাটিং করে ২৩০ বা ২৫০ যদি করতে পারি, বা এর চেয়ে বেশি যদি হয়, ভালো একটা কিছু আমরা করতে পারবো।’
দুই দলের সার্বিক সবকিছু বিবেচনা করলে স্বাগতিকরাই এগিয়ে আছে। তাছাড়া ঘরের মাঠে বিপুল পরিমান দর্শকরাও মিরাজদের জন্য চিৎকার করে সমর্থণ জানাবে কাল শের-ই বাংলায়। তাই কোন রকম অঘটন না ঘটলে নতুন ইতিহাসই রচনা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
আরটি/আইএইচএস/আরআইপি