সবকিছুর মূলে পরিশ্রম : ফিরোজ আহমেদ


প্রকাশিত: ০৭:১৯ এএম, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ফিরোজ আহমেদ গত ২০ বছর ধরে দেশের ফার্মা ও এনার্জি সেক্টরে বিভিন্ন দেশীয় ও বহুজাতিক কোম্পানিতে বিক্রয় বিভাগে চাকরি করেছেন। রাজশাহী ইউনিভার্সিটি থেকে বায়োকেমিস্ট্রিতে বিএসসি ও এমএসসি শেষ করার পর ১৯৯৫ সালে স্কয়ারে যোগ দেন। চাকরির পাশাপাশি মার্কেটিং ও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসের উপর এমবিএ করেন ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে। এরপর আরএকে ফার্মায় কাজ করেন কিছুদিন। সেখান থেকে এনার্জি সেক্টরে জয়েন করেন ক্লিনহীট গ্যাসের ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার হিসেবে। সবশেষে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব নেন বিএমএলপি গ্যাস লিমিটেডের।

ফিরোজ আহমেদ তাঁর অভিজ্ঞতার আলোকে বিক্রয় পেশার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিয়াজ আহমেদ।

firoj   
জাগো জবস : বিক্রয়কেই কেন পেশা হিসেবে বেছে নিলেন?
ফিরোজ আহমেদ : যেকোনো কোম্পানির আয়ের একমাত্র উৎস হচ্ছে বিক্রয়। কোম্পানির অস্তিত্ব নির্ভর করে তার বিক্রয়ের উপর। বিক্রিই যদি না হয় তাহলে পণ্য তৈরি করেই বা কি লাভ। বিক্রয় পেশায় আছে লক্ষ্য, লক্ষ্য পূরণের চ্যালেঞ্জ, পুরস্কার, আছে কাজ করার স্বাধীনতা, মানুষের সাথে মেশার সুযোগ। বিক্রয় পেশাকে আমি দেখি অংকের মত, যেখানে সমস্যা, সমাধান, অধিক নম্বর পাওয়ার নিশ্চয়তা, ভুল হলে পিছিয়ে পড়ার সুযোগ সবই আছে। বাকি পেশাগুলো সমাজ, ভূগোল, অর্থনীতির মত। এজন্য বিক্রয় পেশাতেই ১০০ বা তার চেয়েও বেশি মার্ক তোলা সম্ভব। তাই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছি।

জাগো জবস : এই পেশায় চ্যালেঞ্জ কতটুকু?
ফিরোজ আহমেদ : পুরোটাই তো চ্যালেঞ্জে ভরা। চ্যালেঞ্জ ও ফলাফল সবই হাতেনাতে পাওয়া সম্ভব। অলসতার কোনো সুযোগ নেই। সময়মত উঠতে হবে, প্রতিদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, এদিক-সেদিক ছুটে চলা, রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, কনকনে ঠান্ডায়ও দমে যাওয়ার সুযোগ নেই। পরিশ্রম করতেই হবে। কোন শর্টকাট আমার জানা নেই। হাটে মাঠে ঘাটে ২০টি বছর ছুটে বেড়িয়েছি কর্মের প্রয়োজনে। ঘুরেছি দেশের সব কয়টি জেলা। এর মাধ্যমেই হয়েছি আজকের আমি।

firoj   
জাগো জবস : একজন বিক্রয়কর্মীর কী কী গুণাবলী থাকা উচিত?
ফিরোজ আহমেদ : বিক্রয় পেশার মুল পুঁজি সততা এবং লেগে থাকা। সময়ানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, নিয়মানুবর্তিতা, ভালো আচরণ, নেতৃত্ব প্রদানের সক্ষমতা, নিজ থেকে কাজ করার মনোভাব, সকলের সাথে মিলেমিশে কাজ করার মনোভাব, সহিষ্ণুতা এসব গুণও একজন বিক্রয়কর্মীর থাকা আবশ্যক।

জাগো জবস : নতুনরা এ পেশায় নিজেকে কীভাবে তৈরি করবে?
ফিরোজ আহমেদ : একজন ছাত্র ২৫ বছর বয়সে গ্রাজুয়েট হয়। এই ২৫ বছরে কি তার কোনো এক্সপেরিয়েন্স হয়নি? ইউনিভার্সিটি লাইফের চারটা বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের ছাত্রছাত্রীরা শুধু ভালো রেজাল্ট, সিজিপিএ এসব নিয়েই ভাবে। ৪ বছরে আমাদের ছেলেমেয়েরা শুক্র-শনিবার পায় কয়টি? ৫২ সপ্তাহের বছরে প্রত্যেক সপ্তাহে দুইদিন করে ছুটি। তাহলে ৪ বছরে কম করে হলেও ৪০০ দিন ছুটিই পাওয়া যায়। বাইরের দেশের ছাত্ররা কিন্তু লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজ করে। আমাদের দেশের মানুষ এখনো সেকেলেই রয়ে গেছে। পাস না করে কাজ করাটাই যেন মহা অন্যায় আমাদের এখানে।  

আমি বলবো প্রত্যেককেই ছাত্রাবস্থায় পড়াশোনার পাশাপাশি অন্য কাজে নিজেকে যুক্ত করতে। কোনো কোম্পানির ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হওয়া যেতে পারে, টিউশনি করা যেতে পারে, পার্ট টাইম কাজ করা যেতে পারে, বিভিন্ন প্রফেশনাল ক্লাবে যুক্ত হওয়া যেতে পারে। অলস সময় পার করলে হবে না। মনে রাখতে হবে, যারা পরিশ্রমী তারা কিন্তু ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছে। শত শত ল্যাব রিপোর্ট, থিসিস, প্রজেক্ট যারা করতে পারে তারা নিজেদেরকে গোছাতে পারবে না- সেটা আমি বিশ্বাস করি না। বিক্রয় পেশার জন্য আমরা খুঁজি উদ্যমী, চটপটে তরুণ। তারা যদি ছাত্রাবস্থায় কম্পিউটার ও ইংরেজি শেখার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়, তাহলেও কর্মজীবনে অনেক উপকার পাবে। কোথাও আবেদন করার সময় বানাতে হবে নজরকাড়া সিভি। দেখেই যেন মনে হয়, একেই তো খুঁজছি আমি এতদিন।

firoj
জাগো জবস : বিক্রয় পেশার মজাটা কোথায়?
ফিরোজ আহমেদ : আমার কাছে মনে হয়, আমি জানি আমার টার্গেট কী? আমি সেটা অর্জন করলে পুরস্কার কী? কাজ করতেই একটা প্রতিযোগিতা আছে। এটা মজার। নতুন জায়গায় যাওয়া, নতুন লোকের সাথে মেশা, কথা বলা, নতুন জায়গায় থাকা, খাওয়া, স্বাধীনতা সবই মজার। কাজকে ভালোবাসলে পরিশ্রম করে আনন্দ পাওয়া যায়, অনীহা থাকলে সেটা হয় না। উদ্দেশ্যহীন জীবনের গন্তব্য নেই। তাই লক্ষ্য অটুট রেখে একাগ্রচিত্তে কাজ করে যেতে হবে। স্রষ্টাকেও স্মরণ করতে হবে সব সময়।    

জাগো জবস : বিক্রয় পেশার খারাপ দিক কী?
ফিরোজ আহমেদ : অতিরিক্ত টার্গেট অনেক সময় বিক্রয় প্রতিনিধিকে মানসিক চাপে রাখে, অনেক বেশি ভ্রমণের ফলে পরিবারকে সময় দেওয়া কিছুটা কষ্টকর হয়ে যায়।  

জাগো জবস : বিক্রয়কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়?
ফিরোজ আহমেদ : নতুনদের ক্ষেত্রে দেখি- সে পড়াশোনা ছাড়া আর কী কী করেছে। তার আচার-আচরণ, কথা বলার ধরন, ইংরেজি জানা- এগুলোকেই আমরা বেশি গুরুত্ব দেই। মানুষের পকেট থেকে টাকা বের করে ব্যবসায় বিনিয়োগ করানো দুনিয়ার সবচেয়ে কঠিন কাজ। তাই বাছাইয়ের সময় একটু সতর্ক হতে হয়।

জাগো জবস : ‘অনেকেই ভাবেন ইন্টারভিউটা লোক দেখানো’- এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
ফিরোজ আহমেদ : সুপারিশ ও চোখে পড়া এক জিনিস নয়। আমার কোনো পুরনো কলিগ খুব উদ্যমী, পরিশ্রমী। আমি কি চাইবো না তাকে আমার সাথেই রেখে দিতে? আমি কি তার ব্যাপারে অন্যকে বলবো না? তার তো বলাও লাগবে না, আমিই তার ভালো কিছুর জন্য চেষ্টা করবো, তাই না? দেখুন, সবকিছুর মূলে কিন্তু তার পরিশ্রম। ওটা দিয়েই কিন্তু সে আমার চোখে পড়েছে। আমি কিন্তু কারো সুপারিশ শুনিনি। সুপারিশ আর নেটওয়ার্ক এক জিনিস নয়। ভালো কাজ যারা করে, যারা পরিশ্রম করে, তারা এমনিতেই মানুষের চোখে পড়ে যায়। সুপারিশ লাগে না।

firoj
জাগো জবস : নতুনদের মাঝে কী কী ভুল খুঁজে পান?  
ফিরোজ আহমেদ : অনেককেই পাই খুব অস্থির। ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছে বলে অনেকেই হোয়াইট কলার ভাবে নিজেদের। খুব তাড়াতাড়ি ফলাফল চায়। এখানে দুইদিন, ওখানে দুইদিন। আসলে কোথাও কাজ শেখা হয় না। অনেকে আছে ভালো প্রতিষ্ঠান খোঁজে। তাদের উদ্দেশে বলি, ভালো প্রতিষ্ঠানে নিজেকে প্রমাণ করার যতটা সুযোগ আছে, তার চেয়ে বরং নতুন প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হন। নতুন নিয়ম তৈরি করুন। নিজেকে প্রমাণ করার বেশি সুযোগ পাবেন।

জাগো জবস : নতুনরা কীভাবে নিজেদের সংশোধন করবে?  
ফিরোজ আহমেদ : একটি কোম্পানিতে নিজেকে প্রমাণের মোক্ষম সময় হচ্ছে প্রথম ৩-৪ মাস। প্রথমেই যদি কেউ লাইনচ্যুত হয়ে যায়, তাহলে তার পক্ষে পরবর্তীতে নিজেকে প্রমাণ করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। তদ্রুপ, একজন লোক একই জায়গায়, একই পোস্টে ১ হাজার দিন চাকরি করার পরও যদি তার উন্নতি না হয় তাহলে তাকে বুঝতে হবে- হয় তিনি বঞ্চিত হচ্ছেন, না হয় প্রতিষ্ঠানকে বঞ্চিত করছেন! তখন নিজের দর, বাজার দর বিবেচনা করে নতুন জায়গায় যাওয়া উচিত। সব সময় নতুন কাজ করা উচিত। পুরনো কাজগুলো যাতে অন্য কেউ করে এজন্য কাউকে শিখিয়ে দেয়া উচিত। মনে রাখবেন, মানুষ তার কাজের মাধ্যমে বেঁচে থাকে।
   
জাগো জবস : আমাদেরকে মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য জাগো জবসের পক্ষ থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ফিরোজ আহমেদ : জাগো জবসকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

এসইউ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।