আজ লালমনিরহাটের নিপাহ ট্রাজেডির ৫ বছর
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় ২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি এইদিন থেকে নিপাহ ট্রাজেডিতে একে একে ২৪ জন মারা যান। দীর্ঘ পাঁচ বছর পরেও এসব প্রাণহানির কথা আজও ভুলেননি হাতীবান্ধার বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ।
শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবে দীর্ঘ ওই মরদেহের মিছিলে যুক্ত হয়েছিল অবুঝ শিশু, সদ্য বিবাহিত যুবক ও নারীরা। তাই আপনজনদের হারানোর ব্যাথা আজও তাদের তাড়া করছে স্বজনদের।
জানা গেছে, ২০১১ সালের এই দিনে হঠাৎ করে দেখা যায় অজানা ‘জ্বর’। জ্বরে সংক্রামিত হওয়ার তিন থেকে চার দিনের মধ্যে আক্রান্তরা ঢলে পড়তে থাকেন মৃত্যুর কোলে। পরে বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা-নীরাক্ষা করে জানান এটি আসলে এনকেফালাইটিস। যা নিপাহ ভাইরাস হিসেবে পরিচিত। ভাইরাসটি বাঁদুড় থেকে ছড়িয়েছে।
খেজুড়ের রস খেয়ে নিপা ভাইরাসের সংক্রমণে কয়েকদিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শিশু, নারীসহ বিভিন্ন বয়সী অন্তত ২৪ জন প্রাণ হারান। যদিও সরকারিভাবে এ মৃত্যুর সংখ্যা ১৮ জন বলে দাবি করা হয়।
হাতীবান্ধা বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা শিক্ষক অশোক ঘোষ-তাপসী ঘোষ দম্পতি ২০১১ সালের এই সময়ে নিপা ভাইরাসের কারণে হারিয়েছিলেন তাদের দুই সন্তানকে। অপরদিকে, একই অবস্থা বিরাজ করছে দক্ষিণ গড্ডিমারী গ্রামের কাজী জাহাঙ্গীরের পরিবারেও। তিনিও এই ঘাতক ভাইরাসে হারিয়েছিলেন তার ছোট্টা দুই মেয়ে জয়ী ও সর্বাকে। শুধু ওই অবুঝ শিশুরাই নয় হাতের মেহেদির রঙ শুকানোর আগে হতভাগিনী লিপি বেগম হারিয়েছে তার স্বামীকে। বিয়ের ১১ মাস পর ওই নিপাহ ভাইরাসের আক্রমণে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ছেড়ে চির বিদায় নেন আজিজুল (২৭)। কিছুদিন পর লিপির কোলে ফুটফুটে এক শিশুর জন্ম হয়েছে ঠিকই কিন্তু বাবা নামক সেই প্রিয় ডাক অধরাই থেকে গেল তার।
সূত্র মতে, ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাতীবান্ধায় আসা রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) বিশেষজ্ঞ দল জানিয়েছিলেন, যেহেতু নিপা ভাইরাসের বাহক বাঁদুড় তাই কোনো এলাকায় একবার এ রোগ দেখা দিলে পরবর্তী কয়েকটি বছর শীতের মৌসুমে রোগটি পুনরায় ফিরে আসার আশঙ্কা থাকে। তাই স্বাস্থ্য সচেতনতাই এই ঘাতক নিপা থেকে রক্ষার একমাত্র পথ বলে জানান বিশেষজ্ঞ দলটি। সেই থেকে পরবর্তী বছরগুলোতেও বেশ প্রচার-প্রচারণা হওয়ায় জনসাধারণ মোটামুটি সর্তক হয়ে উঠেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু এ বছর স্বাস্থ্য সচেতনতায় সরকারি বা বেসরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রচার-প্রচারণা লক্ষ করা যায়নি।
হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রমজান আলী জাগো নিউজকে বলেন, নিপা ভাইরাস সচেতনতায় লিফলেট বিতরণে মাসিক মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও প্রচারের অংশ হিসেবে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি উপজেলা সদরে র্যা লি করা হবে বলে জানান তিনি।
রবিউল হাসান/এমজেড/পিআর