আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি পাকিস্তান আমলে নির্মিত রাবির সুইমিংপুলে
অডিও শুনুন
খাল-বিল, নদী-নালার দেশে ভালোমানের সাঁতারু বের করে আনার লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহর এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জেলায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছে সুইমিংপুল। যে সব সাঁতারুরা শুধুমাত্র এসএ গেমস নয়, দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে এশিয়ান গেমস, এমনকি অলিম্পিক গেমসেও।
শুধু সাঁতারু বের করে আনাই নয়, বিভিন্ন ক্রীড়া ডিসিপ্লিনে খেলোয়াড়দের শরীরচর্চার অন্যতম অনুসঙ্গ হিসেবেও খুব প্রয়োজন সাঁতার। সাধারণ মানুষের সাঁতার শেখাটাও জীবনের অন্যতম প্রয়োজনীয় বিষয়।
সবকিছুকে সামনে রেখে সারা দেশে অন্তত ২৩টি সুইমিংপুল নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নির্মাণের পর অধিকাংশ পুলই পড়ে রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। কোনো কোনো পুলে তো একদিনের জন্যও কেউ নামতে পারেনি। কোথাও পানি নেই, কোথাও পাম্প নষ্ট, কোথাও নোংরা পানি- নানা অব্যবস্থায় পড়ে রয়েছে কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত সুইমিংপুলগুলো।
অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত এসব সুইমিংপুল নিয়েই জাগোনিউজের ধারাবাহিক আয়োজন। তৃতীয় পর্বে আজ থাকছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সুইমিংপুলের চালচিত্র...
* পাকিস্তান আমলে কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত হয়েছিল সুইমিংপুলটি।
* করোনা মহামারি শুরুর পর বন্ধ করে দেয়ার পর এখনও পর্যন্ত চালু করা হয়নি সুইমিংপুলটি।
* অনেকটা জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে সুইমিংপুলটি। বিভিন্ন স্থানে টাইলস খসে পড়তে শুরু করছে।
* সুইমিংপুলের আশেপাশের ঝোপঝাড়ে রয়েছে বিষাক্ত সাপের আবাস।
* সাবমারসিবলের মাধ্যমে সরবরাহ করাতে ২০ দিন পরপর পানি পরিবর্তন করতে হয়। পানিতে আয়রন বেশি থাকায় কিছুদিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়।
* বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পাশাপাশি বয়সভিত্তিক সাঁতার প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়।
অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সুইমিংপুল। করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আর চালু না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করতে পারছে না এতে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে দ্রুত খুলে দেয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে একটি সুইমিংপুল রয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়ামের পাশে অবস্থিত। এটি শিক্ষার্থীদের সাঁতার কাটার জন্য সব সময় উন্মুক্ত থাকলেও, করোনা মহামারি আসার পর থেকে বন্ধ রয়েছে।
এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃহল সাঁতার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। প্রায় তিন বছর ধরে সুইমিংপুলটি ব্যবহার না করায় তা অনেকটা জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। যার সঠিক পরিচর্যা করতেও দেখা যায়নি প্রশাসনকে। করোনা প্রকোপ কমে যাওয়ার পরও সুইমিংপুলটি কেন খোলা হচ্ছে না, এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার জন্য এতোদিন সুইমিংপুলে সাঁতার কাটা বন্ধ ছিলো, তবে এখন থেকে আবার চালু হবে।
বৃহস্পতিবার (২জুন) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সুইমিংপুলের বেসিন পানিশূন্য করে রাখা হয়েছে। অনেকটা জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে সুইমিংপুলটি। বিভিন্ন স্থানে টাইলস খসে পড়তে শুরু করছে । নষ্ট হতে শুরু করেছে দেয়ালের রঙও। এমনকি কিছু কিছু জায়গায় দেখা গেছে, পলেস্তারা খসে পড়ে ভেতরের রড বেরিয়ে আসছে। যে কোনো সময় যে কারো মাথার ওপর ভেঙে পড়তে পারে।
এদিকে দর্শকদের বসার স্থান তথা গ্যালারির অবস্থাও বেহাল। ছাউনি এবং চেয়ারে ধরেছে জং ও ইউপোকা। কিছু কিছু ছাউনি একেবারেই খসে পড়ার উপক্রম।
জিমনেশিয়াম ও সুইমিংপুলের আশপাশে দায়িত্বরত রাবির কয়েকজন কর্মচারি বলছেন, ‘সুইমিংপুলের আশেপাশের ঝোপঝাড়ে রয়েছে বিষাক্ত সাপের আবাস। মূলতঃ দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকা ও সুইমিংপুলটি রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারণেই ঝোপঝাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। আর তাতে সাপেরা তাদের আস্তানা গেঁড়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাকিস্তান আমলে নির্মিত সুইমিংপুলটি এখনো পায়নি আধুনিকতার ছোঁয়া। ফিল্টার মেশিনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সাবমারসিবল পাম্প ব্যবহার করে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। সাবমারসিবলের মাধ্যমে সরবরাহ করাতে ২০ দিন পরপর পানি পরিবর্তন করতে হয়। আবার পানিতে আয়রন বেশি থাকায় কিছুদিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে পানি সরবরাহ করতে চিরচেনা জটিলতার চক্র থেকে বেরুতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পাশাপাশি বয়সভিত্তিক সাঁতার প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। থাকে আন্তঃহল ও আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় সাঁতার প্রতিযোগিতার ব্যবস্থাও। বয়স ভিত্তিক সাঁতার প্রশিক্ষণ কোর্স করানো হয়।
১ মাসের কোর্সের জন্যে ১০০ টাকা ফরম মূল্যে আবেদন করতে হয়। শিক্ষক, কর্মকর্তা,কর্মচারীদের ৭ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের কোর্স ফি ১ হাজার টাকা। আর বহিরাগত শিশুদের কোর্স ফি ১৫০০ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কোর্স ফি ৩০০ টাকা। ইতোমধ্যে অনেকেই কোর্স করার জন্য আবেদন করেছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. আছাদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনার কারণে এতোদিন সুইমিংপুল বন্ধ ছিলো, এখন তা আবার চালু করা হবে। পাকিস্তান আমলে কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মাণ করা হয়েছিল এটি। সুইমিংপুলটি অনেক পুরনো হওয়ায় নানা সমস্যায় জর্জরিত। এখানে ফিল্টার মেশিন ও পানি নিষ্কাশনেরও ভালো ব্যবস্থা নেই। সুইমিংপুলের আশেপাশের টাইলসও খসে পড়ছে। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি। সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া অঙ্গনগুলোতে বড় অংকের অনুদান রাখলে দেশের শিক্ষার্থীরা অনেক উপকৃত হবে।’
সুইমিংপুলের আধুনিকায়ন নিয়ে কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের উপাচার্য স্যার খেলাধুলার বিষয় নিয়ে খুবই আন্তরিক। সুইমিংপুলের আধুনিকায়ন করার জন্য ইউজিসির কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী আজ জাতীয় দলে খেলছে। এর মধ্যে অন্যতম হলেন, বাংলাদেশের দ্রুততম মানবী শিরিন শারমিন ও ফুটবলার নার্গিস আক্তার। সরকার যদি ক্রীড়াঙ্গনে সকল সুযোগ সুবিধা দিয়ে সহযোগিতা করে তাহলে আমাদের ছেলে মেয়েরা দেশের জন্য সমৃদ্ধি বয়ে আনতে পারবে।’
মনির হোসেন মাহিন/আইএইচএস