সিরিজ জিততে পারলো না বাংলাদেশ


প্রকাশিত: ১২:৩২ পিএম, ২২ জানুয়ারি ২০১৬

১৮০ রান দেখেই ঘাবড়ে গিয়েছিল কি না বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা- সেটাই এখন ভাবছে ক্রিকেট সমর্থকরা। কারণ, মাত্র তিন ওভার শেষ হতে না হতেই চার উইকেট উধাও। সৌম্য সরকার, তামিম ইকবাল, সাব্বির রহমান এবং সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের চারটি স্তম্ভই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়লো জিম্বাবুয়ের অখ্যাত বোলারদের সামনে। নিঃসন্দেহে বলা যায় বাংলাদেশের চরমতম ব্যাটিং বিপর্যয়গুলোর একটি এটা।

যদিও পঞ্চম উইকেট জুটিতে মাহমুদউল্লাহ এবং ইমরুল কায়েস, এরপর ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে মাহমদউল্লাহ এবং নুরুল হাসান সোহানের ব্যাটে জয়ের স্বপ্ন আবারও জেগে উঠেছিল; কিন্তু শেষ দিকে এসে আবার জিম্বাবুয়ের বোলারদের ঝড়ে তরী ডুবে গেলো বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত ১৯ ওভারেই অলআউট টিম মাশরাফি। ১ ওভার হাতে রেখেই জিম্বাবুয়ে জয় তুলে নিল ১৮ রানের ব্যবধানে। একই সঙ্গে ২-০ তে পিছিয়ে থাকার পরও সিরিজ ড্র করে নিল এলটন চিগুম্বুরার দল।

সিরিজ জয়ের আশা নিয়েই মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। তৃতীয় ম্যাচে যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পথে গিয়েছিল, চতুর্থ ম্যাচে এসে সেখান থেকে সরে এসেছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। ফিরিয়েছিল তামিম, তাসকিন এবং আরাফাত সানিকে। তাতেও কোন কাজ হলো না। বাংলাদেশকে হারতেই হলো, ১৮ রানের ব্যবধানে। মূলতঃ বোলিংয়েই সবচেয়ে বড় ব্যর্থতার পরিচয় দিলো মাশরাফিরা। এক মুস্তাফিজুর রহমান দলে না থাকার কারণে, কতটা ভুগতে হলো বাংলাদেশের বোলিংকে, সেটাই প্রমাণ হয়ে গেলো শেষ দুই ম্যাচে।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে হ্যামিল্টন মাসাকাদজার ৫৮ বলে অপরাজিত ৯৩ রানের ওপর ভর করে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ ১৮০ রানের বিশাল এক সংগ্রহ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১১ থেকে ১৭- এই ৬ রানের ব্যবধানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসলো বাংলাদেশ। তামিম, সৌম্য, সাব্বির এবং সাকিব- চার নির্ভরযোগ্য ব্যটসম্যানের বিদায়ে আশা আর বাকি কিছু থাকার কথা নয়।  

তবুও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে বাংলাদেশ। দুটি জুটি কিছুটা আশার আলো ফুটিয়েছিল বাংলাদেশ শিবিরে। প্রথমে রিয়াদ-ইমরুলের ৩৬ রানের জুটিতে প্রাথমিক ধাক্কা সামলানোর পর রিয়াদ-সোহান জুটিতে ৫৭ রানের ফলে লড়াইয়ে ফেরে টাইগাররা; কিন্তু এই জুটিও যখন ১১০ রানের মধ্যে ভেঙে গেলো, তখনই জয়ের আশা শেষ এবং শেষ পর্যন্ত ১৯ ওভারে ১৬২ রানে অলআউট বাংলাদেশ। ফলে, ১৮ রানে হেরে ২-২ ব্যবধানে সিরিজ ড্র করলো মাশরাফিরা।

৩৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ জয়ের আশা জাগিয়ে তুলেছিলেন; কিন্তু এই লড়াই শুধু ব্যবধানই কমিয়েছে। পরাজয় ঠেকাতে পারেনি। ৪১ বলে ৫৪ রান করার পর তেন্দাই চিসোরোর বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে যান মাহমুদউল্লাহ।

১৮০ রান করে ফেলার পর ম্যাচটির ভাগ্য নিয়ে আর খুব বেশি আশাবাদী হয়ে ওঠার সুযোগও থাকে কম। টি-টোয়েন্টিতে ১৮০ রান তাড়া করে জেতাটা একটু মিরাকলই বটে। কদাচিৎ ঘটে থাকে এমন ঘটনা। আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটা হবে তো আরও কঠিন বিষয়। কারণ, এটা হবে সম্পূর্ণ নতুন একটি বিষয়। কারণ, এতবড় স্কোর তাড়া করে টি-টোয়েন্টিতে এখনও জয় পায়নি বাংলাদেশ।

তবুও তামিম-সৌম্য-সাব্বির কিংবা সাকিব আল হাসানরা যখন দলে রয়েছেন, তখন দর্শকরাও আশায় বুক বেধেছিল। তারা ভেবেছিল, হয়তো দুর্দান্ত ব্যাটিং করে জয় ছিনিয়ে আনতে পারবেন এরাও। কিন্তু তেন্দাই চিসোরো এবং নেভিল মাদজিভার তোপের মুখে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়লো বাংলদেশের টপ অর্ডার। সে সঙ্গে নিভতে শুরু করেছে আশার প্রদীপও।

প্রথম থেকেই মারমুখি হয়ে উঠেছিলেন সৌম্য সরকার। প্রথম ওভারে ১টি বাউন্ডারিসহ মোট ৬ রান তোলেন। পরের ওভারের প্রথম বলেও মারলেন ছক্কা। ছক্কা মেরেই যেন সাহস বেড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের এই ব্যাটসম্যানের। পরের বলেই অফ স্ট্যাম্পের বাইরে থাকা বলটিতে কাট করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন উইকেটরক্ষকের হাতে। ১২ রানে প্রথম উইকেট।

এরপর একই ওভারের ৬ষ্ঠ বলে দারুন এক ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে গেলেন তামিম ইকবালও। তৃতীয় ম্যাচে তাকে বসিয়ে রাখার কারণে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। সেই তামিমই সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচে এসে দিলেন ব্যর্থতার পরিচয়।

তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে তেন্দাই চিসোরোকে ছক্কা মারতে গেলেন সাব্বির রহমান। বলটা বাইরে না গিয়ে সোজা জমা পড়লো অতিরিক্ত ফিল্ডার ওয়েলিংটন মাসাকাদজার হাতে। সাকিব আল হাসান এলেন অনেক বড় প্রত্যাশা নিয়ে। কিন্তু তেন্দাই চিসোরোর একই ওভারের চতুর্থ বলে তিনি হয়ে গেলেন বোল্ড।

ইমরুল কায়েস আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে আশার বেলুন আবারও ফুলে উঠতে শুরু করেছিল। দু’জন মিলে গড়েন ৩৬ রানের জুটি; কিন্তু সপ্তম ওভারে গিয়ে আবারও আঘাত। এবার ফিরে গেলেন ইমরুল কায়েস। ১৪ বলে তার ব্যাট থেকে এসেছিল ১৮ রান। অথ্যাৎ ৫৩ রানেই নাই হয়ে গেলো বাংলাদেশের ৫টি উইকেট।

তরুন ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহানকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই শুরু করেন মাহমুদউল্লাহ। তাদের ৫৭ রানের জুটিতে আশা জেগেছিল বাংলাদেশের; কিন্তু দলীয় ১১০ রানের মাথায় নুরুল হাসান সোহান আউট হয়ে গেলে আবারও লড়াইটা থমকে দাঁড়ায়। যদিও মাশরাফি বিন মর্তুজা উইকেটে নেমে মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে জুটি বেধে রান তোলার গতি আরও বাড়িয়ে দেন। কিন্তু দলীয় ১৩৪ রানে মাহমুদউল্লাহ আউট হয়ে যেতেই সব আশা শেষ হয়ে যায়।

১৩৯ রানের মাথায় আউট হয়ে যান মাশরাফিও। ১২ বলে তিনি করেন ২২ রান। লুক জংউইর বলে সিবান্দার হাতে ক্যাচ দেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। এরপর আরাফাত সানি এবং আবু হায়দার রনি উইকেট হারালে ১ ওভার বাকি থাকতেই ১৬২ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।

নেভিল মাদজিভা ৪টি এবং তেন্দাই চিসোরো ৩ উইকেট নেন। সিকান্দার রাজা নেন ২ উইকেট। বাকি উইকেটটি নেন লুক জংউই।

আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।