৫ খুনের দায় স্বীকার মাহফুজের
নারায়ণগঞ্জ শহরের বাবুরাইলে আলোচিত দুই শিশুসহ একই পরিবারের ৫ জনকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে ভাগ্নে মাহফুজ। লামিয়ার সঙ্গে অবৈধ মেলামেশার উদ্দেশ্যে বাড়িতে প্রবেশ করে ব্যর্থ হয়ে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইদুজ্জামান শরীফ এর আদালতে ওই জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির এসআই আবুল খায়ের।
তিনি জানান, আদালতে মাহফুজ নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেছেন। এতে কিভাবে সে ৫ জনকে হত্যা করেছে তার আদ্যোপান্ত বর্ণনা করেছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের ওই বর্ণনা তুলে ধরেন জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদউদ্দিন।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৫ খুনের ঘটনার পর পুলিশের ৫টি টিম তদন্তের কাজ শুরু করে। দক্ষতার সঙ্গে তদন্ত করে হত্যাকাণ্ডের শেষ প্রান্তে। ঘটনা তদন্তের বিভিন্ন পর্যায়ে আপনাদের (সাংবাদিক) সামনে তথ্য দেয়ার চেষ্টা করেছি। হয়তো তদন্তের স্বার্থে শুরুতে অনেক তথ্য দেয়া হয়নি। আর যখন নিশ্চিত হলাম হত্যাকাণ্ডের মূল নায়ক মাহফুজ একাই তখন হত্যাকাণ্ডটি কিভাবে ঘটিয়েছে তার তথ্য উদঘাটনের জন্য মাহফুজকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সকল আলামত সংগ্রহ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘নিহত তাসলিমার স্বামী শফিকুল ইসলাম ও লামিয়ার স্বামী শরীফুল ইসলাম সাধারণত শুক্রবার বাসায় থাকে। কিন্তু এ দুইজন সেইদিন বাসায় ছিল না। সেটা নিশ্চিত হয়েই ওইদিন মাগরিবের নামাজের আগে খুব সম্ভবত বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে দরজা খোলা থাকায় বাসায় প্রবেশ করে মাহফুজ। মাগরিবের নামাজের পর ঘরে ঢুকে লামিয়ার ঘরের খাটের নিচে ফ্যানের পাশে অবস্থান করে মাহফুজ। কিন্তু ওই ঘরে লামিয়া না ঘুমিয়ে রাতে টিভি দেখে পাশে তাসলিমার রুমে গিয়ে দুই সন্তানের সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ে। আর রাতে লামিয়ার রুমে বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ে মোর্শেদুল মোশাররফ।
রাত আড়াইটার দিকে মোর্শেদুল মোশাররফ বাথরুমে যাওয়ার সময়ে ঘরে শব্দ পেয়ে মাহফুজের উপস্থিতি টের পেয়ে যায়। পরে মোর্শেদুল মোশাররফ চিৎকার করার চেষ্টা করলে রাত ৩টা কিংবা সোয়া ৩টার দিকে রান্না ঘর থেকে শিলপাটার শিল (পোতা) এনে মোর্শেদুল মোশাররফকে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে। ফজরের আযানের পরে দ্বিতীয় খুন করা হয় তাসলিমাকে। এর কিছুক্ষণ পর লামিয়া এগিয়ে আসলে তার সঙ্গে ধস্তাধস্তি ঘটে। তখন লামিয়াকে হত্যার চেষ্টা করলে সে প্রতিহত করার চেষ্টা করে।
ওই সময়ে মাহফুজ একটি কাপড় দিয়ে লামিয়াকে শ্বাসরোধ করার চেষ্টার সময় পাশে থাকা শিলপাটার পাটা (পোতা) হাতে নিয়ে মাহফুজকে আঘাত করার চেষ্টার জন্য নিক্ষেপ করে লামিয়া। কিন্তু সেটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে শিশু সুমাইয়ার শরীরে পড়লে সে মারা যায়। ৪ খুনের পর শান্ত স্কুলে চলে যায়। সকাল সোয়া ৭টার দিকে সে আবারও বাসায় প্রবেশ করে। তখন রক্ত দেখে চিৎকার করতে থাকলে তাকে প্রথমে দেয়ালে আঘাত ও পরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। ৫ জনকে হত্যার পর মাহফুজ বাথরুমে গিয়ে হাত মুখে ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে টিভির পাশে থাকা রুমের চাবি নিয়ে ঘরে তালা মেরে বীরদ্বর্পে চলে যায়। আর চাবিটি ফেলে দেয় বাড়ির রিজার্ভ ট্যাংকে। সকাল সোয়া ৭টা কিংবা ৭টা ২০ মিনিটেই পালায় মাহফুজ। ওই চাবিটি ও শিলপাটা ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে।
অন্যদিকে মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) গ্রেফতার ১২ লাখ টাকা ঋণদাতা ঢাকার কলাবাগান এলাকার নাজমা আক্তারকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি।
প্রসঙ্গত, ১৬ জানুয়ারি রাতে বাবুরাইল এলাকা থেকে তাসলিমা, তার ছেলে শান্ত ও মেয়ে সুমাইয়া, ভাই মোরশেদুল ওরফে মোশারফ ও জা লামিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের মাথায় ভোতা অস্ত্রের আঘাতে ও কয়েকজনকে শ্বসরোধে হত্যা করে ঘাতকরা। রোববার সকালে নিহত তাসলিমার স্বামী শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ভাগ্নে মাহফুজ, ঢাকার কলাবাগানের নাজমা ও শাহজাহানের নাম উল্লেখ করে তাদের সন্দেহ করে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওইদিন রাতেই মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
শাহাদাত হোসেন/এসএস/পিআর