কষ্টকর দিনগুলোর বর্ণনা দিলেন মাশরাফি
সোমবার খুলনার সিটি ইন হোটেলে দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের রচনায় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের রঙিন জার্সির অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার আত্মজীবনী মূলক বই উদ্বোধন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে মাশরাফি তার জীবনের কিছু ঘটনা বলেতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। ক্যারিয়ারের কষ্টের অধ্যায় বর্ণনা করতে শক্ত মানসিকতার এই বলিষ্ঠ ক্রিকেটারকে অনেক কষ্টেই চোখের পানি আটকাতে হয়।
এ অনুষ্ঠানে ভিন্ন ধরণের সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফির কাছে তার জীবনের সংগ্রামের কথা জানতে চান দলের ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারায়েন। তার উত্তর দেয়ার এক পর্যায়ে আবেগাপ্লুত হয়ে যান তিনি। বলেন, `এটা খুব কঠিন ছিল। ২০০৬ সালের আগে বাংলাদেশে কোন জিম ছিল না, অন্য সুবিধাও ছিল না। আমি প্রথম ইনজুরিতে পরি ২০০১ সালে, এটা খুব কঠিন ছিল। তখন এতো ফিজিও ছিল না, ট্রেনার ছিল না। আমি অস্ট্রেলিয়াতে অপারেশন করানোর পর বাংলাদেশে সব কাজ আমাকেই করতে হয়েছে। আমি নিজেও জানি না কিভাবে তা করেছি।`
এরপর আমি ২০০৩ সালে আবার মাঠে ফিরি কিন্তু দুটি সিরিজ পরেই আবার ইনজুরিতে পরি। এরপর আমি আবার অস্ট্রেলিয়ায় যাই। সেবার দুটি অপারেশন হয়। এরপর আমি দেশে ফিরে আবারো নিজেই সব করি। কিন্তু আমি কিছুটা ভাগ্যবান ছিলাম ২০০৩ সালের পর থেকে ২০০৮ পর্যন্ত আমি স্বাধীনভাবে খেলতে পেরেছি, মানে শরীরের উপর কোন সংগ্রাম করতে হয়নি। ২০০৮ আমার জন্য জীবন অনেক বেশি কঠিন হয়ে যায়। সেবার আমি দুইবার ইনজুরিতে পরি।
এরপর একই ঘটনা ঘটে ২০১১ সালে। সে ঘটনা আমি কোন দিনও ভুলতে পারবো না। বাংলাদেশে বিশ্বকাপ মিস করেছি। এর কিছুদিন পর আমি ভাবতে থাকি আমি বিশ্রাম নিব নাকি চালিয়ে যাব। এরপর শুনি যে আমাকে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে বলা হয়েছে। এরপর আমি আবার জেগে উঠি। এই দুই মাস আমার জীবনে কোন আশাই ছিল না। আমার স্ত্রী তখন ক্লিনিক্যালি ডেথ ছিল। আর তখনি আমার মেয়ের জন্ম হয়। আমার জীবন তখন খুবই কঠিন হয়ে যায়। তখন আমি ক্রিকেট ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম কারণ তখন আমার পরিবারকে সময় দেওয়াও প্রয়োজন ছিল। এর দুই মাস পর আমি বুঝতে পারলাম ক্রিকেট ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। এর পরের দিন সকালে আমি ঘুম থেকে উঠেই সোজা মাঠে যাই এবং খেলা শুরু করে দেই। তখন থেকেই আমি খেলছি এবং এখনও খেলে যাচ্ছি।’
নিজের জীবনের এই কষ্টকর অধ্যায় থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা থেকে নবীনদের পরামর্শও দেন তিনি। এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি শুধু নবীনদের একটা কথা বলতে চাই, আমি কোন সুপারস্টার না তার পড়েও বলছি। আমি দেখেছি যদি তোমার বাংলাদেশের হয়ে খেলার সাহস থাকে তাহলে তোমার কঠিন সময় পার করার সাহস থাকতে হবে। কারণ খারাপ সময় আসতেই পারে তোমাকে তা থেকে হেরে গেলে চলবে না।’
আরটি/এমআর/এমএস