ভুট্টা চাষে ভাগ্য বদলাবে তাদের


প্রকাশিত: ০৭:২০ এএম, ১৬ জানুয়ারি ২০১৬

তিস্তার চরাঞ্চলে এ বছর ভুট্টার বাম্পার ফলনের আশায় কৃষকরা রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন। চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে আবাদ করা হয়েছে ভুট্টার। তিস্তা নদীর বিভিন্ন চরাঞ্চল ছাড়াও উপজেলার পূর্ব খড়িবাড়ী, পশ্চিম খড়িবাড়ী, দোহলপাড়া, গয়াবাড়ী, সুন্দরখাতা, ঝুনাগাছ চাপানি, খালিশা চাপানিতে ব্যাপকভাবে ভুট্টার আবাদ করা হয়েছে।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভুট্টার বাম্পার ফলনের আশা প্রকাশ করছে কৃষি বিভাগ। ভুট্টা চাষিরা ডিমলায় ভুট্টা সংরক্ষণ কেন্দ্রের পাশাপাশি ভুট্টা প্রক্রিয়াজাত কারখানা চালুর দাবি করেছেন। কৃষকরা জানান, ভুট্টা প্রক্রিয়াজাত কারখানা চালু হলে স্থানীয় বাজারে ভুট্টার দাম নিশ্চিত হওয়ার পাশাপশি সেখানে এলাকার বেকার যুবক যুবতিদের কাজ করার সুযোগ তৈরি হবে। কৃষি বিভাগের পাশাপশি ভুট্টা চাষিদের স্বাবলম্বী ও বাজার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে বেসরকারি এনজিও পল্লীশ্রী রি-কল প্রকল্পটি।

ডিমলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে পাঁচ হাজার ৫শ` হেক্টর ভুট্টার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে সাত হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে। তিস্তার চরাঞ্চলের ৮০ ভাগ জমিতে এবার ভুট্টার আবাদ করা হয়েছে। উপজেলার মোট ২১ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে তিন ভাগের একভাগ জমিতে ভুট্টার আবাদ করা হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৩ হাজার ৯৩০ মেট্রিকটন।

অন্য বছরের তুলনায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে এ বছর ভুট্টার আবাদে কোনো পোকার আক্রমণ না থাকায় কৃষকরা বাম্পার ফলনের আশা করছেন। কিসামত ছাতনাই গ্রামের কৃষক সালেহা বেগম (৩৮) জানান, এবার তিনি আট বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। তিনি ভুট্টার বাম্পার ফলন আশা করছেন। বাজারে ব্যাপকভাবে সার পাওয়ায় ভুট্টা আবাদে সমস্যা হয়নি। সবকিছু ঠিক থাকলে এবার প্রতি বিঘা জমিতে ২৫-২৭ মণ হারে, এমনকি তারও বেশি ফসল ঘরে তুলতে পারবেন বলে তিনি জানান।

একই গ্রামের সালমা বেগম (৩৬) জানান, ভুট্টার জমিতে শীতকালীন সবজি চাষে বাড়তি খরচ না হওয়ার কথা। তিনি আরও বলেন, পল্লীশ্রী রি-কল প্রকল্পটি উন্নত মানের বীজ সংগ্রহ করতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।

Vutta

দক্ষিণ খড়িবাড়ী গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম (৩৮) জাগো নিউজকে জানান, তিস্তার নদীতে বন্যার সময় পলি আসে, পলিতে সার কম প্রয়োগ করেও ভালো ফসল তুলতে পারবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। প্রতি বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করতে তিন হাজার থেকে তিন হাজার দুইশো টাকা খরচ হয়েছে।

নীলফামারী কৃষি অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আফতাব হোসেন জাগো নিউজকে জানান, ভুট্টা চাষের সময় কৃষকদের জমিতে ব্যাপকভাবে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয়। চলতি মৌসুমে শীতের কারণে চাষিদের সেচ কম দেয়ায় খরচ কম হবে। তিনি তিস্তার চরাঞ্চলসহ জেলা জুড়ে ভুট্টার বাম্পার ফলনের আশা করছেন।

বেসরকারি এনজিও পল্লীশ্রী রি-কল প্রকল্পের সমন্বয়কারী পুরান চন্দ্র বর্মন জাগো নিউজকে বলেন, তিস্তা পাড়ের হতদরিদ্র নারীদের ভুট্টা চাষে সাবলম্বী করার জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রতিটি ভুট্টা চাষি উচ্চ ফলনশীল ভুট্টা বীজ প্রাপ্তিতে বিভিন্ন কোম্পানি, বীজ ডিলার ও সরকারি কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করছেন।

তিনি আরও বলেন, চরাঞ্চলের চার হাজার ৪৩২ জনকে হতদরিদ্র নারী কৃষককে প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি ভুট্টা চাষে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে। পল্লীশ্রী রি-কল প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী প্লট, ভুট্টা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, ভুট্টা মারাই মেশিন ও শুকানোর জন্য ত্রিপল প্রদান করা হয়েছে। হতদরিদ্র ভুট্টা চাষিদের বাজার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্থানীয় ভুট্টা ব্যবসায়ী ও ভুট্টা প্রক্রিয়াজাত কোম্পানির সঙ্গে লিখিতভাবে চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার ফলে নারী কৃষকরা ভুট্টার প্রকৃত মূল্য নিশ্চিত করেছে।

এমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।