ভেজাল খেজুরের গুড়ে সয়লাব রাজশাহী
বাঙালির কাছে পিঠাপুলি তৈরির অন্যতম উপকরণ খজুর গুড়ে এখন মেশানো হচ্ছে নোংরা চিনি। এসব চিনি মেশানো ভেজাল গুড় এখন রাজশাহীসহ এর আশপাশের জেলাগুলোর সর্বত্র হাটবাজারে সয়লাব। জেলার বাঘা, পুঠিয়া, দুর্গাপুর, চারঘাট, বাকঁড়া, মীরগঞ্জ, কাকড়ামাঁরী, পরানপুর, চারঘাট বাজার দিড়িপাড়া চারটি উপজেলায় উৎপাদিত হচ্ছে সুমিষ্টি এ ভেজাল গুড়।
মৌসুমের শুরতেই জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে উঠতে শুরু করেছে খেজুর গুড়। অবাধে তৈরি ভেজাল গুড় এক শ্রেণির অর্থলোভী চাষিরা খেজুর রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে গুড় তৈরি করে বাজারজাত করছেন। তবে শীতের শুরুতেই নবান্নের আমেজ এখন শহর থেকে প্রতিটি গ্রামের বাড়িতে চলছে নতুন ধানের আটায় পিঠা-পুলির উৎসব। এতে পেটের পীড়াজনিত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের ওই ভেজাল গুড় দিয়ে কোনো খাদ্য তৈরি করে খাওয়ালে লিভার ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ মারাত্মক জটিল রোগ হতে পারে।
এ ধরনের ভেজাল গুড় চাষিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাজার মনিটরিং কমিটির কাছে জোর দাবি জানান এলাকার সচেতন মহল।
বাজার ঘুরে জানা গেছে, গুড়ের চেয়ে চিনির দাম কম বলে খেজুর গুড়ে চিনি মেশানো হয়। চাষিরা ভোরে গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে এসে কড়াইয়ে রস জাল করে লালচে বর্ণ ধারণ হলেই চিনি ঢেলে দিচ্ছেন। ফলে চিনিগুলো রসের সঙ্গে মিশে তৈরি হচ্ছে গুড়। চিনি গলে গেলে হাইড্রোজ, ফিটকারি দেয়া হচ্ছে। এসব উপকরণে রস গাঢ় হয়ে গুড়ের রঙ উজ্জল বর্ণ ধারণ করে। খেজুর রসে প্রস্তুতকারকরা সম পরিমান চিনি মিশ্রিত করছেন। কারণ বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ৪১ টাকা আর গুড় বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা দরে। তাই প্রতি কেজি গুড়ে ২০ টাকা লাভ হচ্ছে।
চারঘাট উপজেলার পরানপুর ও দিড়িপাড়া মজিবুর জাগো নিউজকে জানান, তিনি প্রায় পাঁচ বছর ধরে খেজুর রস থেকে গুড় তৈরি করেন। কিন্তু অন্যের দেখাদেখি তিনিও ভেজাল গুড় তৈরির কাজে জড়িয়ে পড়েছেন।
চারঘাট বাজারের গুড় বিক্রেতা আজিজুল জাগো নিউজকে জানান, বর্তমানে হাট-বাজার আমদানিকৃত খেজুর গুড়ের অধিকাংশই চিনি মিশ্রিত ভেজাল গুড়। তবে কেনার সময় চিনতে পারলেও কোনো কিছু করার থাকে না তাদের।
এর কারণ হিসেবে তিনি আরও জানান, চিনি মিশ্রিত ছাড়া স্বচ্ছ বা ভালো খেজুর রসের তৈরি গুড় পাওয়া যাবে না। চারঘাট উপজেলার এই গুড় বাঁকরা, সারদা, কাকড়ামারী বাজার, রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।
এ ব্যাপারে রাজশাহীর সিভিল সার্জন আব্দুস সোবহান জাগো নিউজকে জানান, চিনি মিশ্রিত গুড় খেলে পেটের পীড়াসহ নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাজারগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান ও বাজার মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
শাহরিয়ার অনতু/এমজেড/পিআর