এবার ফাঁসির আসামিকে ছেড়ে দিল চট্টগ্রামের পুলিশ
হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে আটকের একদিন পর ছেড়ে দিয়েছে ফটিকছড়ি থানা পুলিশ। ফটিকছড়ির বীমা কর্মকর্তা নুর খালেক হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আনোয়ার আশরাফ ওরফে আনোয়ার চৌধুরীকে (৪০) র্যাব গতকাল (রোববার) শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে আটক করেছিল।
র্যাবের আটকের একদিন পরই নামের অমিলের অজুহাতে তাকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। র্যাব-১ এর দেয়া গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব- ৭ এর একটি টিম গতকাল (রোববার) সকাল ১০টায় শাহ আমানত বিমান বন্দর থেকে তাকে আটক করে। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর কাতার থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামে আসে তিনি।
তবে রোববার অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া র্যাব চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক স্কোয়াডন লিডার সাফায়েত জামিল ফাহিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘র্যাব-১ এর তথ্যের ভিত্তিতে আনোয়ার চৌধুরীকে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রামে আসার পথে বিমান বন্দর থেকে আমারা আটক করি। তার বিরুদ্ধে তথ্য ছিল তিনি ফটিকছড়ির এক বীমা কর্মকর্তা হত্যা মামলার মৃত্যুুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।’
তিনি বলে, ‘আটক করার সময় তিনি কোনো ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখাননি। এমনকি তার বোডিং পাস, বিমানের টিকিট ও পাসপোর্টের নামেও অমিল পাওয়া গেছে। এরপর ভিকটিমের পরিবারও র্যাব অফিসে তাকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সেই আসামি বলে সনাক্ত করেছিলেন। এরপর আমরা রাতে তাকে স্থানীয় ফটিকছড়ি থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি।’
পুলিশের ছেড়ে দেয়া প্রসঙ্গে র্যাব কর্মকর্তা ফাহিম বলেন, ‘আমার এতটুকু নিশ্চিত হওয়ার পরও কেন তাকে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে সেটি তারাই ভালো বলতে পারবে। তারা কিভাবে তার পরিচয়ে অমিল পেয়েছে সেটি আমি জানি না। এমনকি আমাদের কাছে খবর রয়েছে তিনি সরকার দলীয় অনেক বড় নেতার নিকটাত্মীয়। গতকালও অনেক নেতা তার জন্য ফোন করেছিল। এখন হয়তো অন্য কোনো কারণেও তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে নাকি, তথ্যে ভুল ছিল সেটি দেখতে হবে।’
এদিকে সোমবার দুপুরে ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান ও গোল্ডেন লাইফের সাবেক এমডি তৌহিদুল আলম বাবুর উপস্থিতিতেই আনোয়ারকে ছেড়ে দেয়া হয়।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, আটক আনোয়ার সরকারি দলের প্রভাবশালী এক নেতা এবং ফটিকছড়ির পৌর মেয়রের নিকটাত্মীয় হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে ফটিকছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মফিজ উদ্দিনের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলো তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) মসিহ-উদ দৌলা রেজা বলেন, র্যাব যাকে ধরেছে তিনি নুর খালেক হত্যা মামলার মূল আসামি নন। মামলার এজাহারে যার নাম রয়েছে তার নাম হচ্ছে আশরাফ হোসেন। এ ছাড়া আসামির বাবার নামও মিল নাই। আমরা সব বিষয় যাচাই বাছাই করে থানায় সাধারণ ডায়রি নথিভুক্ত করার পর তাকে ছেড়ে দিই। আটক আনোয়ার আশরাফের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খবর নিয়ে দেখবো।
প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২ এপ্রিল ফটিকছড়ির কারবালা টিলায় গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ফটিকছড়ি ব্রাঞ্চের সিনিয়র অফিসার নূর খালেক মাস্টারকে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়। খুনের পর পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে, দুর্নীতির দায়ে আশরাফ হোসেন ও গোলাম মোস্তফা কালু নামের দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্তের জের ধরে এ খুনের ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় একই বছরের ২ আগস্ট নিহতের বাবা মো. দানেশ মিয়া বাদি হয়ে ফটিকছড়ি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ২ অক্টোবর এ ঘটনায় চার্জশিট দেয়া হয়। চার্জ গঠন হয় ২০০৯ সালের ১৬ জুন। ২৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০১৪ সালের ১৯ আগস্ট দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৭৯ ধারায় বিভাগীয় জননিরাপত্তা ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারক মো. মমিন উলাহ আসামি আশরাফ হোসেনকে ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। এ মামলার অপর আসামি গোলাম মোস্তফা কালুকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।
জীবন মুছা/জেডএইচ/আরআইপি