বিকেলেই পর্দা উঠছে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের
প্রস্তুতি সব সম্পন্ন। অপেক্ষার পালাও শেষ। এবার শুধু কিক অফ। আজ বেলা পৌনে তিনটায় যশোর শামস-উল হুদা স্টেডিয়ামে কিক অফের বাঁশি বাজিয়ে দেবেন রেফারি। শুরু হয়ে যাবে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের চতুর্থ আসরের জমজমাট লড়াই। উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি দক্ষিণ এশিয়ারই দুই দল। স্বাগতিক বাংলাদেশ এবং সফরকারী শ্রীলংকা। উদ্বোধনী ম্যাচ জয় দিয়েই শুভু সূচনার প্রত্যাশা দু’দলেরই।
৭ জাতির আট দলের টুর্নামেন্ট। বাংলাদেশের দুটি দল। জাতীয় দল এবং অনুর্ধ্ব-২৩ দল। বাকি ৬টি দেশ হচ্ছে মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, নেপাল, কম্বোডিয়া এবং বাহরাইন। দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে লীগ পর্বে মোকাবেলা করবে দলগুলো। সেখান থেকে সেরা দুটি করে দল উঠবে সেমিফাইনালে, এরপর ফাইনাল। ২০ জানুয়ারি ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ফাইনাল। এর আগে আজ (শুক্রবার) শুরু হয়ে যশোরে চারদিন অনুষ্ঠিত হবে চারটি ম্যাচ। এরপর টুর্নামেন্টটি চলে আসবে ঢাকায়।
উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হতে প্রস্তুত দুই দল বাংলাদেশ এবং শ্রীলংকা। দুটি দলই দক্ষিণ এশিয়ার। র্যাংকিংয়ের ব্যবধানও বেশি নয়-বাংলাদেশ ১৭৯ আর শ্রীলংকা ১৮৮। র্যাংকিংয়ের এ সামান্য পার্থক্যের চেয়ে দুই দলের বড় পার্থক্যটা হবে মাঠ। যশোরের শামস-উল-হুদা স্টেডিয়ামের পরিবেশ-দর্শক সবই যে থাকবে মামুনুলদের পক্ষে! ঘরের মাঠের এ সুবিধাটা কাজে লাগিয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে বাংলাদেশ শুভ সূচনা করবে-শুধু যশোর নয়, পুরো দেশবাসীই বুক বেধে আছে সে আশায়। গত বছর ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ’-এর গ্রুপ পর্বে ১-০ গোলে শ্রীলংকাকে হারিয়ে সেমিতে যাওয়া নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। এবার একই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ গ্রুপ প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে সেই শ্রীলংকাকেই। এবারও লংকাবধ করে ভালো সূচনার অপেক্ষায় মামুনুলরা।
২০১৫ আসরে বাংলাদেশের র্যাংকিং ছিল ১৬৫, আর শ্রীলংকার ১৭২। এই এক বছরে দু’দলই পিছিয়েছে র্যাংকিংয়ে। এবারও দু’দলের ব্যবধান খুব বেশি নেই। তবে ফিফার তথ্যমতে, মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিযে বাংলাদেশই। বাংলাদেশ-শ্রীলংকা এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে ১৫ বার। বাংলাদেশের জয়ের পাল্লাই ভারী-জিতেছে ১০ বার। শ্রীলংকা জিতেছে ৩বার। বাকি ২ ম্যাচ ড্র হয়। বাংলাদেশের ২১ গোলের বিপরীতে শ্রীলংকা করেছে ১০ গোল। যশোরে দু’দল সর্বশেষ মুখোমুখি হয় ২০১৪ সালের অক্টোবরে। দুই ম্যাচ সিরিজের (ফিফা আন্তজার্তিক প্রীতি ম্যাচ) যশোরে দু’দল ১-১ গোলে ড্র করে।
বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের গত আসরে রানার্সআপ হয়েছিল বাংলাদেশ। স্বাগতিক বলে এবারও তারা অন্যতম ফেভারিট; কিন্তু সাফ ফুটবলে ব্যর্থতার জন্য সেভাবে জোর দিয়ে তারা বলতে পারছে না নিজেদের শক্তিশত্তা-আত্মবিশ্বাসের কথা। বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ মারুফুল হক বলেন, “যদিও সাফে ভাল করিনি। তবে এবার খেলোয়াড়দের মধ্যে ‘ভালো করতেই হবে’ এমন একটা মানসিকতা দেখতে পাচ্ছি। সে কারণেই মনে করি খেলোয়াড়রা শুরুটা ভাল করলে টুর্নামেন্টে ভাল কিছু করতে পারবে। এই টুর্নামেন্টের জন্য চার দিন সময় পেয়েছি।” অপর এক প্রশ্নের জবাবে মারুফুল বলেন, “দলে কোন কোন্দল বা অন্য কোন সমস্যা নেই। ছিলও না।” দলের ম্যানেজার ইলিয়াস হোসেন বলেন, “আমাদের লক্ষ্য এই টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতা। আশা করি এবার প্রথমবারের মতো শিরোপাটা জিতবো।”
জাতীয় দলের অধিনায়ক মামুনুল ইসলামের ফ্লু থেকে জ্বরে আক্রান্ত। তবে তিনি আজকের ম্যাচ খেলবেন বলে আশাবাদী কোচ। দলের নির্ভরযোগ্য অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড জাহিদ হাসান এমিলি বলেন, “সাফে খারাপ ফল করায় একটা চাপ থাকবেই। তারপরও চাপটা নিয়েই ভালো খেলতে হবে। দলের ফিটনেসে তেমন কোন অসুবিধা নেই। এখন প্রয়োজন একটা জয়। একটা জয় যখন টিমের মধ্যে চলে আসবে তখন অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে যাবে।”
লঙ্কান কোচ সামপাথ পেরেরা কোলোমাগে বলেন, “আগামী ফেব্রুয়ারিতে এসএ গেমসে ভাল করার লক্ষ্য তাদের। তাই অনুর্ধ-২৩ দলের ১৭ জনকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের জন্য জাতীয় দলগঠন করেছি। সাফ চলাকালে এই টুর্নামেন্টের আমন্ত্রণ পেয়েছি। তাই প্রস্তুতির তেমন সময় পাইনি। তবে এসএ গেমসের আগে এই আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট দলের খেলোয়াড়দের জন্য একটা বড় সুযোগ।’ দলীয় অধিনায়ক কাবিন্দা ইশান বলে, ‘দল ভাল অবস্থায় আছে। অল্প সময় পেলেও আমরা প্রস্তুত আছি। আমাদের লক্ষ্য ভাল ফল করা।”
যশোরের শামসুল হুদা স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের খেলার জন্য ছাড়া হয়েছে ১২ হাজারা টিকিট। গ্যালারির টিকেটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে যথাক্রমে ৫০ ও ১০০ টাকা। এছাড়া ভিআইপি টিকেটের মূল্য ধরা হয়েছে যথাক্রমে ২০০ ও ৩০০ টাকা করে।
আইএইচএস/পিআর