ঢাকায় শুরু হচ্ছে এশিয়ান হকির উৎসব
বাইরে থেকে দেখলে ঠিক বোঝা যাবে না ভেতরে কী কর্মযজ্ঞ চলছে। মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামের মূল ফটক পেরিয়ে ভেতরে পা দিতেই টের পাওয়া গেলো, একটা সাজ সাজ রব। ঝকঝকে তকতকে পুরো স্টেডিয়ামের ভেতরের অংশ। বিশেষ করে হালকা আকাশী-নীল রঙয়ের টার্ফ যেন চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে।
টার্ফের এক প্রান্তে চলছে একটি দলের অনুশীলন। প্যাভিলিয়ন প্রান্তে আয়োজন করা হয়েছে অফিসিয়াল ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানের। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন অংশগ্রহণকারী পাঁচ দলের অধিনায়ক।
ফটো সাংবাদিকদের অনুরোধে মঞ্চে ওঠার আগেই একবার ফটো সেশন হয়ে গেলো। অসংখ্য ফ্ল্যাশের সঙ্গে শোনা গেলো ক্লিক, ক্লিক- শব্দ। ওদিকে মঞ্চে ঘোষণা আসছে, ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠান শুরুর। আসন গ্রহণ করছেন এশিয়ান হকি ফেডারেশনের প্রধান নির্বার্হী তৈয়ব ইকরাম, বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের কর্মকর্তা....।
এতসব আয়োজন, উৎসব যে ট্রফিটাকে ঘিরে, তার উন্মোচন করা হলো অধিনায়ক এবং কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে। আর যে উদ্দেশ্যে এত আয়োজন, সেটাই হচ্ছে হিরো এশিয়ান হকি চ্যাম্পিয়নশিপ। শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার। উদ্বোধনী দিনে মুখোমুখি হচ্ছে- শক্তিশালী দুই দল দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভারত। বিকাল সাড়ে ৩টায় শুরু হবে ম্যাচটি। একই দিন সন্ধ্যা ৬টায় মুখোমুখি হবে জাপান এবং পাকিস্তান।
বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে মাঠে নামবে ভারতের বিপক্ষে। ১৫ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে ৩টায় শুরু হবে ম্যাচটি। কথা ছিল বাংলাদেশ উদ্বোধনী ম্যাচে মাঠে নামবে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে। কিন্তু মালয়েশিয়া না আসায়, পরিবর্তিত সূচিতে টুর্নামেন্ট শুরুর পরদিন মাঠে নামবে আশরাফুল ইসলামরা।
এক কথায় বলতে গেলে, এশিয়ান হকির উৎসব। বসেছে ঢাকায়। এবারের এই চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজনের মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ। এশিয়ার সেরা ৫টি দলের সঙ্গে আয়োজক হিসেবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশও। কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই আয়োজকদের জন্য দুঃসংবাদ। হকি বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ মালয়েশিয়া আসতে পারেনি।
তাদের একজন খেলোয়াড়দের কোভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট আসে। যে কারণে মালয়েশিয়ান সরকার পুরো দলকেই কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়ে দিয়েছে। কোয়ারেন্টাইন পিরিয়ড শেষ হওয়ার সঙ্গে এশিয়ান হকি চ্যাম্পিয়নশিপের সূচির মিল থাকছে না। যে কারণে অন্যতম পরাশক্তি মালয়েশিয়াকে বাদ দিয়েই আয়োজন হচ্ছে এবারের চ্যাম্পিয়নশিপ।
৬ দল থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দলের টুর্নামেন্টে। তবুও আকর্ষণের কমতি নেই। কারণ, উপমহাদেশের মানুষের জন্য উপভোগের সবচেয়ে বড় উপাদান তো রেডি। ভারত-পাকিস্তান মহারণ। মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামেই অনুষ্ঠিত হবে চাক দে ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তানের হকি স্টিকের লড়াই।
২০১৭ সালে হকির এশিয়া কাপ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ। সেবারই মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে বসেছে আধুনিক ফ্লাড লাইট। জায়ান্ট স্ক্রিন। যে কারণে এবারের আয়োজনের আগে আর নতুন করে এগুলোর কিছুই করতে হয়নি। শুধু হালকা সংস্কার করতে হয়েছে। তাতেই (ফ্লাড লাইট জ্বলার কারণে) সন্ধ্যার পর বাইরে থেকে বোঝা যায়, ভেতরে কিছু একটা চলছে।
বিশ্ব হকির তিন পরাশক্তি এবারের আসরে লড়াই করছে। ভারত, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ কোরিয়া। জাপানও কম যায় না। এদের যে কাউকে হারিয়ে দেয়ার সক্ষমতা রাখে। স্বাগতিক বাংলাদেশই যা একটু দুর্বল। তবুও, অধিনায়ক আশরাফুল ইসলাম দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করে দিয়েছেন, ‘আমরা যা শিখেছি, তার পূর্ণ প্রয়োগ ঘটানোর চেষ্টা করবো মাঠে। তাতে ভালো খেলা উপহার দেয়ার আশা করতে পারি।’
তবে আশরাফুল বাস্তবতা মেনে, শিরোপা জয় তো দুরের কথা, কোনো ম্যাচে জয়েরও আশাবাদী নন। কারণ, বাকি চারটি দেশের সঙ্গের শক্তির পার্থক্যটা অনেক বেশি। সে কারণে, অভিজ্ঞতা অর্জনই বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য।
বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সহ-সভাপতি এবং টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ শিকদার বলে দিয়েছেন, ‘আমরা যত বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলব; আমাদের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স তত বেশি ভালো হবে। এই টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বড় দিক হচ্ছে এশিয়া কাপে দুটি গ্রুপ থাকে। সেখানে কিন্তু সবগুলো দলের বিপক্ষে আমাদের খেলার সুযোগ হয় না। তবে, এবারের এই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ দল টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া এশিয়ার সব সেরা দলগুলোর বিপক্ষে খেলার সুযোগ পাবে।’
এশিয়ান হকির উৎসব শুরু হবে, অথচ উদ্বোধনী দিনে কোনো ঝাকজমকপূর্ণ কিছুর আয়োজন রাখা হয়নি। সবকিছু জমা রাখা হয়েছে সমাপনী দিনের জন্য। আবদুর রশিদ শিকদার বলেছেন, ‘আমরা সমাপনীতে অনুষ্ঠান রেখেছি। সেখানে আমাদের কিছু আয়োজন থাকবে, ব্যাপকতা থাকবে। এটা মর্যাদাপূর্ণ টুর্নামেন্ট। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আয়োজিত হতে যাচ্ছে। আবার কবে হবে আমরা কেউ বলতে পারব না।’
তবে, এশিয়ান হকির উৎসব হলেও খুব বেশি সাড়া পাননি বলে আক্ষেপ ঝরলো বাংলাদেশ হকির এই কর্মকর্তার মুখে। তিনি বলেন, ‘ভেন্যু সমক্ষমতার বিষয়টি আমরা ২০১৭ সালেই প্রমাণ দিয়েছি এশিয়া কাপ আয়োজনের মাধ্যমে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল চ্যাম্পিয়নস ট্রফিটা ব্যাপক সাড়া ফেলবে। কোভিডের কারণে টুর্নামেন্টের সিডিউল তিনবার পরিবর্তন হয়েছে। তারপর আমরা এটি শুরু করছি। সত্যি বলতে আমরাও যেভাবে এগুতে চেয়েছিলাম সেভাবে পারিনি। ভেবেছিলাম অনেক স্পন্সর প্রতিষ্ঠান আমাদের সঙ্গে যুক্ত হবে। হকি সংগঠকরা, বাংলাদেশের স্পোর্টসে যারা সংশ্লিষ্ট আছেন তারা সাড়া দেবেন। সে অনুপাতে আমরা হয়তো সাড়া পাইনি। তারপরও আমি বলব এখনো সময় আছে। আগামীকাল থেকে খেলা শুরু হবে। সবাই যদি আসেন আমরা যেমন অনুপ্রাণিত উৎসাহিত হবে; তার চেয়ে বেশি আমাদের অ্যাথলেটরা উৎসাহিত হবে।’
স্টার স্পোর্টস সরাসরি এশিয়ান হকি চ্যাম্পিয়নশিপের খেলা সম্প্রচার করবে। অন্তত ৭৫টি দেশে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে এই টুর্নামেন্ট। তবে আক্ষেপের বিষয় হচ্ছে, স্বাগতিক বাংলাদেশেই সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছে না টুর্নামেন্টটি। কারণ, স্টার স্পোর্টসের কাছ থেকে কিনে কেউ খেলা দেখানোর আগ্রহ প্রকাশ করেনি। হকি ফেডারেশনের কর্মকর্তা রশিদ শিকদার বলেন, ‘মিডিয়ার মাধ্যমে অনুরোধ রাখব, আমাদের দেশের কোনো চ্যানেল যেন এগিয়ে আসে। এখনো সময় আছে। পে চ্যানেল বাদে বাংলাদেশের সাধারণ দর্শকরা কিন্তু খেলা দেখতে পাচ্ছে না। আমরা চাই সবাই যেন দেখার সুযোগ পান।’
আইএইচএস/