না.গঞ্জে ২ পৌরসভায় কালো টাকার ছড়াছড়ি!


প্রকাশিত: ০৪:০১ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫

রাত পোহালেই পৌরসভা নির্বাচন। সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জের তারাব ও সোনারগাঁ পৌরসসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর নির্বাচনকে সামনে রেখে মেয়র প্রার্থীসহ কাউন্সিলররা শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন।

প্রচারণা শেষ হওয়ায় প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে ছুটছেন। প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে ভোটারদের টাকা দিয়ে ভোট আদায় করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি প্রার্থীরা অনেক ভোটারকে টাকা দিয়ে ভোট নিশ্চিত করতে ওয়াদা করাচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

এছাড়া প্রার্থীদের মধ্যে কয়েকজন সকাল থেকে গণসংযোগ শুরু করলেও কেউ বা সকালে নিজ বাড়িতে সভা করে দিনের কর্মপন্থা নির্ধারণ করেন। তবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা প্রতিটি কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করতে নিজেদের লোক কেন্দ্রের আশপাশে অবস্থান করে সুবিধা গ্রহণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আর সুযোগ পেলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা কেন্দ্র দখল করারও পরিকল্পনা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে দুটি পৌরসভার মেয়র প্রার্থীরা ভোটারদেরকে ম্যানেজ করতে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে টাকা বিলি করছেন। আর প্রতিটি হোটেল রেঁস্তোরায় সমর্থকদের তিন বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা রেখেছেন প্রার্থীরা। এমনকি নির্বাচনের শুরুতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রার্থীরা অনেকের সংসারে চাল, ডাল, তেলসহ অন্যান্য সামগ্রী ক্রয় করার টাকা বহন করছেন।

বিশেষ করে তারাবতে মেয়র প্রার্থী হাসিনা গাজী আর সোনারগাঁয়ে সাদেক আর ফজলে রাব্বি টাকা ছড়াচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে ভোটারদেরকে টাকা দেয়ার একাধিক অভিযোগ থাকলেও নির্বাচন কমিশনার ও রিটার্নিং অফিসার তা আমলে নেননি। যার কারণে দুটি পৌরসভায় কালো টাকা ছড়াছড়ি হচ্ছে। এখন টাকা দিয়ে ভোট ক্রয় করার প্রতিযোগতার অভিযোগ উঠেছে।   

অভিযোগ উঠেছে নারায়ণগঞ্জের দুটি পৌরসভা নির্বাচনে কেন্দ্র দখলে রাখতে ও প্রতিপক্ষদের রুখতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে অন্তত ৩শ` সন্ত্রাসীকে ভাড়া করা হয়েছে। বহিরাগত এসব সন্ত্রাসীদের দেয়া হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। চুক্তি মোতাবেক এসব সন্ত্রাসীরা ভোটের আগের দিন তথা ২৯ ডিসেম্বর রাত থেকেই স্ব স্ব এলাকাতে অবস্থান করবে। তবে ভাড়া করা বেশিরভাগ সন্ত্রাসীরাই এলাকার বাইরের বলে জানা গেছে।

আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে ২ হাজার ২৯ জন সন্ত্রাসীকে চিহ্নিত করেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। যাদের একটি তালিকা নির্বাচন কমিশনেও (ইসি) পাঠানো হয়েছে। সন্ত্রাসীরা নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন বলেই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এসেছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, পৌর নির্বাচনে বড় দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসী রয়েছে বিএনপির এবং সবচেয়ে কম রয়েছে জাতীয় পার্টির।

জানা গেছে, সোনারগাঁও পৌরসভায় নির্বাচনে মেয়র পদে চারজন লড়ছেন। তারা হলেন আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বী (নৌকা), বিএনপির মোশারফ হোসেন (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমান (জগ) ও জাহিদুল আজাদ নজরুল (নারকেল গাছ)।

সোনারগাঁও পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ২২ হাজার ৪শ’ ৪২ জন। এর মধ্যে ১১ হাজার ৫১০ জন পুরুষ এবং ১০ হাজার ৯শ’ ৩২ জন নারী ভোটার রয়েছেন। এ পৌরসভায় ৯টি কেন্দ্রের ৬৩টি কক্ষে ভোটগ্রহণ করা হবে।

তারাবতে পৌর নির্বাচনে চারজন মেয়র প্রার্থী লড়ছে। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী নাসিরউদ্দিন এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হলেন স্থানীয় সাংসদের স্ত্রী হাসিনা গাজী। এখানে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হলেন শফিকুল ইসলাম চৌধুরী। এখানে মেয়র প্রার্থী ছাড়াও কাউন্সিলর পদে ৫২ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া সকল প্রার্থীই তারাব পৌরসভার সবকটি ভোটকেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ দাবি করে আসছেন।

তারাব পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ৭৮ হাজার ৮৯৭, পুরুষ ভোটার সংখ্যা ৪১ হাজার ৪২৯ নারী ভোটার সংখ্যা ৩৭ হাজার ৪৬৮। এখানে মোট কেন্দ্র ৩৭টি, বুথের সংখ্যা ২২২টি।

এদিকে, অভিযোগ রয়েছে গতবারের তারাব পৌরসভার নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থন নিয়ে মেয়র পদে নির্বাচিত হয় সাদেকুর রহমান সাদেক। আর তিনি অঢেল সম্পদের মালিক হওয়ায় সময়ের তালে এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান ও সোনারগাঁয়ের সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা ম্যানেজ করে।

একপর্যায়ে প্রায় ৩০/৪০ লাখ টাকা ব্যয় করে সোনারগাঁ পানামের একটি মাঠে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করেন সাদেক। সেই সমাবেশের পর সাদেক নিশ্চিত তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে আবার পৌরসভার নির্বাচন করবে। সাদেক বেশি স্বপ্ন দেখলো সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি। তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেলেও সাদেককে দুই সাংসদের সমর্থন বহাল থাকে। শামীম ওসমান প্রকাশ্যে সাদেকের পক্ষে না থাকলেও গোপনে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে সাদেকের পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

আর জাতীয় পার্টির সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা প্রকাশ্যে রয়েছেন। সাদেক নির্বাচনে জয় পরাজয় কিছু বোঝেন না। শুধু আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলে রাব্বিকে পরাজিত করে মাঠ ছাড়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, সাদেকুর রহমানকেই প্রথমে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে গত নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে সাদেকুর রহমানের সখ্যতা প্রমাণিত হওয়ায় তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। এছাড়া স্থানীয় সাংসদ সাদেকুর রহমানের পক্ষে কাজ করছেন। এসব নিয়ে আওয়ামী লীগে রয়েছে অস্তিত্বের প্রশ্ন। সে হিসেবে যেকোনো মূল্যে ফজলে রাব্বিকে জয়ী করতে হবে।

রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের মাঝে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসিনা গাজী স্থানীয় সাংসদ স্ত্রী হিসেবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সকল ধরনের প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনো ধরনের নিয়মকে তোয়াক্কা না করে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। সাংসদ গাজীর অঢেল সম্পদের মালিক হওয়ায় ভোটারদের টাকা দিয়ে ক্রয় করে নিজের স্ত্রী নির্বাচিত করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী নাসির উদ্দিন ভূইয়া ভোটারদের টাকা বিলি করে ভোটারদের হাত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসার তারিফুজ্জামান জাগো নিউজকে জানান, নির্বাচন কমিশনার সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। যারাই আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না। দুটি পৌরসভার সব কয়টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে আমি গ্রহণ করছি। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ মোবাইল টিম কাজ করবে।

মো. শাহাদাত হোসেন/এমজেড/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।