আমির ইস্যুতে বিভক্ত পাকিস্তান ক্রিকেট


প্রকাশিত: ০৩:৫৪ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫
এই ক্যাপটা কি আবার পরতে পারবেন আমির!

পাকিস্তান ক্রিকেটে বিতর্কের নাম এখন মোহাম্মদ আমির! তাকে ঘিরে আপাতত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে পুরো পাকিস্তান ক্রিকেট। কেউ বলছেন তাকে দলে নেয়া উচিৎ, আবার কেউ বলছেন- তার মত ক্রিকেটারকে দলে ফেরানো ঠিক হবে না। এ নিয়ে নেতৃত্ব পর্যন্ত ছাড়তে চাইলেন পাকিস্তানের ওয়ানডে দলের অধিনায়ক আজহার আলি। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি পিসিবি চেয়ারম্যানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
 
২০১০ সালে লর্ডসের সেই টেস্টে স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারির পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আমিরের পাঁচ বছরের সাময়িক বিদায়জুড়ে কম বিতর্ক হয়নি। আর এবার যে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক প্রত্যাবর্তনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে, এখনও বিতর্ক তার পিছু ছাড়ছে না।

পাকিস্তানের সর্বকালের দুই সেরা ক্রিকেট আইকন আমিরের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। একটি টিভি টক শোতে ইমরান খান আর ওয়াসিম আকরাম তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে দিয়েছেন। ইমরানের মত, আমিরকে এখনই দলে ফিরিয়ে আনা উচিত। তার বরং দুঃখ হচ্ছে আমির-বিরোধী শিবিরের কথা ভেবে। আক্রাম আবার বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে আমিরই দেশের সেরা বোলার।’

দুই ক্রিকেট আইকন পাশে দাঁড়িয়েছেন বলে আমিরের সামনে রাস্তা যে গোলাপের পাপড়ি বিছানো, সেটা মোটেও নয়। জাতীয় দলের যে দু’জন ক্রিকেটার তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে সরব, সেই মোহাম্মদ হাফিজ বা আজহার আলি কিন্তু আমির বিষয়ে এখনও সুর নরম করেননি। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড খেলোয়াড়দের দিয়ে একটা মুচলেকা সই করাতে চায় যে, আমিরের দলে ফেরা নিয়ে কারও আপত্তি নেই; কিন্তু আজহার বা হাফিজ কেউই ওটা সই করতে চাইছেন না।

এ দু’জনের মধ্যে বেশি সরব ওয়ানডে অধিনায়ক আজহার আলি। আজ (মঙ্গলবার) বোর্ড ও খেলোয়াড়দের বৈঠকে আজহার বোর্ড চেয়ারম্যানকে পদত্যাগ পত্র দিয়েছিলেন। তার যুক্তি, যে দলে আমিরের মতো কলঙ্কিত ক্রিকেটার থাকবে, সে দলকে আমি নেতৃত্ব দিতে পারব না। যদিও আজহারের পদত্যাগ পত্র প্রত্যাখ্যান করেছেন পিসিবি চেয়ারম্যান শাহরিয়ার খান। বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে, সিদ্ধান্তও প্রত্যাহার করেছেন আজহার আলি।

পিসিবি আবারও সতর্কতা হিসেবে শোয়েব মালিককে বিকল্প অধিনায়ক হিসেবে প্রায় তৈরি রেখেছে বলেই খবর। আবারা আগেরদিনই পিসিবির পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, দলে আমিরের মেন্টর হবেন শোয়েব আখতার। দু’জনে পাকিস্তান সুপার লিগে একই টিমে (করাচি) খেলবেন। শোয়েব প্রকাশ্যে বলেছেনও যে, আমির তার ছোট ভাইয়ের মতো।

টিভি টক শোতে যখন ইমরান আর ওয়াসিম তরুণ পেসারের সমর্থনে একমত, তখন আর একটা টক শোতেই আমের-প্রসঙ্গে ধুন্ধুমার লড়াই বেধে গেল অন্য দুই সাবেকের মধ্যে। রামিজ রাজা এবং মোহাম্মদ ইউসুফ। এই দুই সাবেক অধিনায়কের ঝগড়া ব্যক্তিগত আক্রমণের পর্যায়েও নেমে এসেছিল!

রামিজ বরাবরই আমির-বিরোধী। ইউসুফ আবার আমিরের পক্ষে। তো এ প্রসঙ্গে আলোচনা চলতে চলতে ইউসুফ হঠাৎ বলে বসেন, ‘রামিজ কোনও ক্রিকেটারই নয়। ও তো জাতীয় দলে সুপারিশে ঢুকেছিল।’ যা শুনে ক্ষিপ্ত রামিজ পাল্টা বলেন, ‘ইউসুফের মিথ্যেয় পাক ক্রিকেটের অনেক ক্ষতি হয়েছে।’

এত কিছুর পরেও কিন্তু আমিরের প্রত্যাবর্তন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। নতুন বছরে পাকিস্তান যে নিউজিল্যান্ড সফরে যাচ্ছে, সেখানে সে না থাকলেই হবে বরং অবাক করা বিষয়। কারণ আর কিছুই নয়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং পিসিবির চিফ অব প্যাট্রন নওয়াজ শরিফ স্বয়ং আমিরকে ফেরানোর পক্ষে। বিদেশের ভিসা নিয়ে আমির সমস্যায় পড়তে পারেন, এমন একটা গুজবও ঘুরপাক খাচ্ছিল; কিন্তু সে সব কিছুই হয়নি। নিউজিল্যান্ড ইমিগ্রেশন দফতর বলে দিয়েছে, আমিরকে ভিসা দিতে তাদের কোনও আপত্তি নেই।
পাকিস্তানের মানুষও কিন্তু মনপ্রাণ দিয়ে আমিরের প্রত্যাবর্তন চায়। উনিশের আমের যে ভুল করেছিল, সেটা কেউ মনে রাখতে চায় না। সে দেশের মানুষ বরং মনে রেখেছে ওর প্রতিভা। যা ক্রিকেট মাঠে নতুন করে দেখতে মুখিয়ে আছে গোটা দেশ।

আমিরের পক্ষে
ইমরান খান: আমিরকে অবশ্যই একটা দ্বিতীয় সুযোগ দেয়া উচিৎ।
ওয়াসিম আক্রাম: এই মুহূর্তে দেশের সেরা ফাস্ট বোলার।
মোহাম্মদ ইউসুফ: আমেরের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য হাফিজদের নিশ্চয়ই পেছন থেকে তাতানো হচ্ছে।
পাক রাজনৈতিক মহল: আমিরের জন্য ভিসার ব্যবস্থা করার কাজ শেষ।

আমিরের বিপক্ষে
ইনজামাম-উল হক: আমির ফিরলে ক্রিকেটের থেকে বাইরের নজর থাকবে বেশি।
রমিজ রাজা: কেন ফেরানো হবে? যারা ফেরানোর বিরোধিতা করছে, তারা যথেষ্ট সাহস দেখাচ্ছে।
আজহার আলি, মোহাম্মদ হাফিজ: আমের ফিরলে খেলতে রাজি নন।
জাভেদ মিয়াঁদাদ: দ্বিতীয় সুযোগ পাওয়ার যোগ্য নয়।

আইএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।