একটি বনভোজনের ইতিবৃত্ত

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:১২ এএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫

অসুস্থতার কারণে দীর্ঘ একমাস ছুটি কাটিয়ে যখন জাগো নিউজে এলাম, তখন অফিসজুড়ে উৎসব উৎসব ভাব। বনভোজনে যাচ্ছে জাগো নিউজ পরিবার। এই পরিবারের এটিই প্রথম বনভোজন। এতবড় আয়োজন আর তাতে পরিবারের সবচেয়ে দুরন্ত মেয়েটি থাকবে না, তাই কি হয়! অসুস্থতা ভুলে আমিও তাই বনভোজনের আয়োজনে লেগে গেলাম। এত এত মানুষের পুরো একদিনের খাওয়া, ঘোরাঘুরি, বিনোদন, প্রতিযোগিতা, পুরস্কার প্রদান, যাওয়া এবং ফিরে আসা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়! আমি অবাক হয়ে দেখলাম, আমার সুদক্ষ সহকর্মীরা কী নিপুণভাবেই না সবকিছু সম্পন্ন করে ফেললেন!

JAGONEWS

সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে পিকনিক স্পটের দিকে যখন রওয়ানা হলাম, ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল নয়টা। স্পট খুব বেশি দূরে নয়, ঢাকার অদূরে গাজীপুরের শ্রীপুর। ভেন্যুর নাম ‘মোগল রিসোর্ট’। ওখানেই হবে আমাদের বনভোজন। গাড়ি স্টার্ট নিতেই সবাই মিলে আনন্দে হইচই করে উঠলো। অনলাইন পোর্টালের কাজ, ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করতে হয়, আজকে আর সেই তাড়া নেই। যত খুশি আনন্দ করো, হইচই করো, কেউ কিছু বলবে না! নিউজ দেয়ার তাড়া নেই, আপলোডেরও তাড়া নেই। রিপোর্টার, সাব এডিটর, ওয়েব এডিটর সবার কাজ আজ একটাই- আনন্দ করা। পেশাগত শৃঙ্খল খুলে একদিনের জন্য বাঁধনহারা হয়ে যাওয়া।

Jagonews

বনভোজনে গিয়ে সবচেয়ে বেশি মধুর বিড়ম্বনায় পড়েছেন সেন্ট্রাল ডেস্কের সহ সম্পাদক বুলবুল ভাই। বেচারা সদ্যই বিয়ে করে বাড়িতে বউ রেখে ঢাকায় ফিরেছেন। আর তাতেই সহকর্মীদের দারুণ কৌতুহল। বুলবুল ভাইকে প্রায় সব কৌতুকের প্রধান চরিত্র বানিয়ে যে যেভাবে পারে কৌতুক বলতে লাগলো। সেসব কৌতুক শুনে হেসে কুটিকুটি সবাই। ভালো মানুষ বুলবুল ভাইও রাগ না করে সেই হাসিতে যোগ দিয়েছেন। কৌতুক শেষ হলে গান ধরলেন বুলবুল ভাই। এবার তার সঙ্গে গলা মেলালেন বাকি সবাই। এর মাঝেই বিতরণ করা হলো প্রত্যেকের জন্য একটি করে টিশার্ট ও সকালের নাস্তা। সবার খাওয়া শেষ হওয়ার পরে দেখা গেল জুনিয়র পলাশ খেয়েই চলেছেন। খাবারের একটি প্যাকেট শেষ হতেই আরেক প্যাকেট বের করছেন। এভাবে ননস্টপ খাওয়া, গান, কৌতুক আর হইচইয়ের মধ্যেই আমরা বনভোজনের স্থানে গিয়ে পৌঁছলাম।

JAGONEWS

মোগল রিসোর্টে আগের দিন বিকেল থেকেই ছিলেন সিনিয়র সহ-সম্পাদক আনোয়ার ভাই ও সহকারী বার্তা সম্পাদক সোহাগ ভাই। খাবার আর রান্নাবান্নার বিষয়টি তদারকি করার জন্যই তাদের এই আগেভাগে যাওয়া। তার সুফলও হাতেনাতে মিললো। পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে পেলাম গরম গরম ভাপা পিঠা আর বিভিন্ন ভর্তাসহ চিতই পিঠা। ও হ্যাঁ, ঝালমুড়ির কথা বলতে তো ভুলেই গেছি। কোনটা রেখে কোনটা খাবো ভাবতে ভাবতে এক ঠোঙা ঝালমুড়ি নিয়ে নিলাম। আর তখনই ডাক পড়লো, আমাদের প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচটি শুরু হয়ে গেছে। আপাতত ধারাভাষ্যকার আমি একাই। ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে পড়লাম আরেক মুশকিলে। সামনে কোনো স্কোর কার্ড নেই, বোলারের হাতের দিকে তাকাবো নাকি ব্যাটসম্যানের ব্যাটের দিকে তাকাবো, নাকি আম্প্যায়ারের সংকেত দেখবো, নাকি স্কোর গুনবো! মাঠে কী হচ্ছে তা আন্দাজে বলতে গিয়ে কিছুটা তালগোল পাকিয়ে ফেললাম। খেলা হচ্ছিল জাগো নিউজ রিপোর্টার্স বনাম জাগো নিউজ এডিটর্স। এখানে আবার আরেক মুশকিল। সবাই আমার নিজের লোক। কাকে রেখে কাকে সমর্থন দেই! নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে গিয়ে দু’দলেরই প্রশংসা করছিলাম। কিন্তু একদলের প্রশংসা করলে আরেক দল তেড়ে আসে! সে এক মধুর যন্ত্রণা!

JAGONEWS

নির্ধারিত আট ওভার ব্যাটিং শেষে প্রতিপক্ষকে ৭৩ রানের টার্গেট দিয়ে মাঠ ছাড়লো জাগো এডিটর্স। সুব্রত মণ্ডলের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে জয়ের বন্দরে প্রায় পৌঁছে গেল জাগো রিপোর্টার্স। বলে বলে ছক্কা মারতে লাগলেন সুব্রত, এ যেন বাংলার ক্রিস গেইল! জাগো এডিটর্সের অধিনায়ক আরিফুল ইসলাম আরমান ভাই যখন চিন্তিত মুখে এবং জাগো রিপোর্টার্সের অধিনায়ক সাঈদ আরমান ভাই যখন অনেকটাই নিশ্চিন্ত তখনই মনিরুজ্জামান মনি ভাইয়ের দুর্দান্ত এক বলে ক্লিন বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেন সুব্রত মন্ডল। ক্রিকেটকে বলা হয় গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা, সেদিন তা আরো একবার প্রমাণ হলো। জাগো রিপোর্টার্সের শেষ বলে দরকার সাত রান। আর সেই শেষ বলটি ডট হওয়ায় ছয় রানে জয় লাভ করলো জাগো এডিটর্স। এরপর  জাগো নিউজের অপর টিমের সঙ্গে আরেকটি ম্যাচ খেললো প্রাণ মিডিয়া টিম। সে ম্যাচটিতে অবশ্য জিতেছে  প্রাণ মিডিয়া টিম। এরপর এলো বিবাহিত বনাম অবিবাহিতদের ফুটবল খেলা। অবিবাহিতদের বিয়েতে উৎসাহী করতেই কী না জানি না, ১-০ গোলে জিতে গেল বিবাহিতদের দল! বিবাহিতদের পক্ষে একমাত্র গোলটি করেন প্রাণ আরএফএল গ্রুপের প্রশাসন বিভাগের ব্যবস্থাপক মমিন ভাই।

JAGONEWS

মহিলাদের জন্য ছিল বালিশ খেলা। আর সে খেলার জন্য না চাইতেই বেশকিছু পুরুষ স্বেচ্ছাসেবক পাওয়া গেল। তাদের সহযোগিতায় বেশ ভালোভাবেই সম্পন্ন হলো খেলাটি। বিজয়ী তিনজনকে পেয়ে ছুটতে হলো সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজনের দিকে। না না, তার আগে অবশ্য দুপুরের খাবার সেরে নিলাম সবাই মিলে। সরু চালের গরম ভাত। সঙ্গে ছিল টাকিমাছের ভর্তা, শিমের ভর্তা, রুই মাছ ভাজা, শিং মাছের ঝোল, মুরগী ভূনা, খাসির মাংসের কালিয়া, মুগডাল, সবজি, সালাদ, লেবু, পিঁয়াজ, কাঁচা মরিচ আর কোমল পানীয়।

JAGONEWS

ম্যাজিক বক্স খেলাটিতে কাঁচের জার থেকে উঠে আসছিল একটি করে চিরকুট। তাতে ছন্দে ছন্দে লেখা ছিল জাগো নিউজের বিভিন্নজনের মজার সব বৈশিষ্ট্য। ম্যাজিক বক্স খেলায় সামান্যর জন্য পুরস্কার হাতছাড়া হওয়ায় মন খারাপ হলো আরিফুল ইসলাম আরমান ভাইয়ের। তার মন ভালো করতেই আমরা তার জন্য সারপ্রাইজ হিসেবে কেক নিয়ে উপস্থিত হলাম। সারপ্রাইজ ছিল ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সুজন মাহমুদ ভাইয়ের পক্ষ থেকেও। ২৫ ডিসেম্বর, বনভোজনের দিনটিই আরমান ভাইয়ের জন্মদিন। উপস্থিত সবাই মিলে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালাম।

JAGONEWS

ছিল নববিবাহিতদের জন্য বিশেষ পুরস্কার, নারী ও শিশু অতিথিদের জন্যও পুরস্কার। সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার পরে এলো র‌্যাফেল ড্রয়ের পালা। বিভিন্নজন বিভিন্ন পুরস্কার জিতলো। পুরস্কার ছিল বিশটি। তবে প্রতিবার পুরস্কার ঘোষণার পরই সবাই মিলে যেভাবে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছে তাতে বোঝা গেল, সবাই-ই সমান সমান খুশি। লটারিতে পুরস্কার হিসেবে একটি সিলিং ফ্যান পেলেন চিফ নিউজ এডিটর মহিউদ্দিন সরকার ভাই। পুরস্কার দেয়ার সময় ভাবির সঙ্গে ভাইয়া হাত মেলাতেই সবাই আনন্দে হইহই করে উঠলো। প্রথম পুরস্কার ভিশন ২৩ ইঞ্চি এলইডি টিভির বিজয়ীর নাম যখন ঘোষণা হবে তার আগেই বিশাল এক শব্দ! চেয়ার ভেঙে পড়ে গেছেন আমাদের বিশেষ প্রতিবেদক, দীর্ঘদেহী মানুষ মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল ভাই! হাসির রোল থামতেই জানা গেল প্রথম পুরস্কার বিজয়ীর নাম। সে আর কেউ নয়, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের কমিউনিকেশন ম্যানেজার জিয়াউল হক, আমাদের জিয়া ভাই।

JAGONEWS

বিকেলে নাস্তার জন্য ছিল চটপটি আর ফুসকার ব্যবস্থা। কিছুই খেলাম না। সন্ধ্যাটা আমার কাছে বিষন্ন মনে হলো। আনন্দের সময়গুলো কত দ্রুতই না ফুরিয়ে যায়। ফেরার পথে সবাইকে একটা করে মগ, লাচ্ছি আর চকোলেট দেয়া হলো। সবাই আবার বুলবুল ভাইকে প্রধান চরিত্র করে কৌতুক বলতে লাগলো। তবু আমার মন ভালো হলো না। একটি পুরো দিনকে স্মৃতির ফ্রেমে বাঁধাই করে আবার ফিরে যাচ্ছি কর্মমুখর ইট-পাথরের শহরে। এসব ভেবে ভেবে আরো বিষন্ন হয়ে পড়লাম। বিষন্নতাকে শিল্প করে তুলতে আমার জুড়ি নেই!

এসইউ/এমএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।