বারডেম হাসপাতালের গলার কাঁটা ‘বিনামূল্যের চিকিৎসা’!
রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে রোগীদের ‘বিনামূল্যের চিকিৎসা’ এখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি অনুসারে হাসপাতালের মোট শতকরা ৩০ ভাগ রোগীকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকার ফলে আর্থিক ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।
গত অর্থবছরে বারডেম হাসপাতাল সরকারি অনুদান পেয়েছে মাত্র ১৪ কোটি টাকা। কিন্তু সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্নভাবে প্রাপ্ত বিনামূল্যের রোগীর চিকিৎসাবাবদ ব্যয় হয় ৪২ কোটি টাকারও বেশি।
জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে বারডেম হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শহিদুল হক মল্লিক বারডেম হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবার সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরেন।
শহিদুল হক মল্লিক জানান, বারডেম হাসপাতাল সরাসরি কোন সরকারি অনুদান পায় না। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি (বাডাস) গত বছর মোট ২৫ কোটি টাকার সরকারি অনুদান পেয়েছিল। অনুদানপ্রাপ্ত টাকা থেকে বাডাস বারডেমকে ১৪ কোটি টাকার অনুদান দেয়।
বারডেম ১ ও বারডেম ২ হাসপাতাল মিলিয়ে প্রতিমাসে লক্ষাধিক রোগীকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। জুলাই থেকে অক্টোবর এ চারমাসে শুধুমাত্র সমাজকল্যাণের রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাবাবদ গড়ে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। বিনামূল্যের সেবার মধ্যে রয়েছে ইনসুলিন, সকল ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বেড প্রদান।
তিনি আরো জানান, বর্তমানে বারডেম ১ ও ২ এ দুটি হাসপাতালের মোট বেড সংখ্যা ৬৯৮টি। তন্মধ্যে বারডেম ১-এ ৫৭৬টি ও বারডেম ২ (মহিলা ও শিশুদের জন্য) এ ১২২টি শয্যা রয়েছে। এ দুটি হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারী মিলিয়ে সর্বমোট ২ হাজার সাতশ’জন। সরকার ঘোষিত নতুন পে-স্কেল অনুসারে বেতন ভাতাখাতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার ফলে প্রতিষ্ঠানটি সুচারুভাবে পরিচালনা বিশেষত অর্থসংস্থানে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বারডেম হাসপাতালের পরিচালক জানান, আগে তাদের বেতনভাতা বাবদ প্রতিমাসে মাত্র ৪ কোটি টাকা ব্যয় হতো। বর্তমানে তা প্রায় দ্বিগুন বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৭ কোটি টাকা। আগামী ৩০ জুন ২০১৬ তে তা প্রতিমাসে ১০ কোটি ও জুলাই মাসে ১৩ কোটিতে বেড়ে দাঁড়াবে। ফলে অর্থসংস্থান করতে গিয়ে তাদের বিভিন্নভাবে আয় বৃদ্ধি ও অযাচিত ব্যয় সংকোচন করতে হচ্ছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিনামূল্যে শতকরা ৩০ ভাগ চিকিৎসাসেবা দেয়ার চুক্তি প্রসঙ্গে বিশদভাবে জানতে চাইলে তিনি জানান, ১৯৫৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ডা. মো. ইব্রাহিমের উদ্যোগে বারডেম হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। ডা. ইব্রাহিমের স্বপ্ন ছিল টাকার অভাবে একজন ডায়াবেটিক রোগীও ফিরে যাবে না।
ওই সময় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির নামে শাহবাগ ও সেগুনবাগিচায় জমি বরাদ্দ ও হাসপাতালের ভবন নির্মাণে আর্থিক সহায়তা প্রদান করার প্রক্রিয়া চালু হয়। মাত্র ৫০ বেড নিয়ে ইনডোর হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। তখন আউটডোরে মাত্র শ‘দুয়েক রোগী হতো। হাসপাতালে আগত মোট রোগীর শতকরা ৩০ ভাগকে বারডেম কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করবে এই মর্মে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
তিনি জানান, প্রায় ৬০ বছর আগে যে প্রেক্ষাপটে (ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা ও হাসপাতাল বেড ও অন্যান্য সুবিধাদি) সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল আজ সেই প্রেক্ষাপট ভিন্ন। বর্তমানে বারডেম হাসপাতালে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধিসহ আর্থিক ব্যয় বেড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৬৯৮ শয্যার হাসপাতালের মোট বেডের প্রায় অর্ধেকই প্রতিদিন বিনামূল্যের রোগীর জন্য ছেড়ে দিতে হয়। শতকরা ৩০ ভাগ বিনামূলের চিকিৎসার রোগীদের মধ্যে একটি বিরাট অংশ বারডেম হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ছেড়ে দিতে হয়।
জানা যায়, হাসপাতালের প্রতিটি স্টাফের বিপরীতে পরিবারের ছয় সদস্যের (স্বামী, স্ত্রী, বাবা, মা ও ছেলে-মেয়ে) জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য হেলথ কার্ড সুবিধা দেয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া অবসরপ্রাপ্ত একজনের বিপরীতে পরিবারের দুইজন এ সুবিধা পায়। হাসপাতাল স্টাফ, অবসরপ্রাপ্ত ও সমাজকল্যাণ রোগী মিলিয়ে অর্ধেক বেডেই বিনামূল্যে চিকিৎসা চলে।
মাস |
সমাজকল্যাণ থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসাপ্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা |
ব্যয়কৃত টাকার পরিমান |
অক্টোবর |
১,২৯,৭৭৪ |
৫,১৩,৫০,০০০ |
সেপ্টেম্বর |
১,১৯,২১৩ |
৪,৭৬,৩০,০০০ |
আগস্ট |
১,৪১,৬২২ |
৪,৯৮,৯৩,০০০ |
জুলাই |
৯৪,২২৯ |
৪,৩৫,০০,০০০ |
এমইউ/জেডএইচ/এআরএস/এমএস