আখাউড়ায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণা
হযরত শাহ সৈয়দ আহাম্মদ গেছু দারাজ (র.) ওরফে কেল্লা বাবার মাজারের কারণে দেশজুড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরসভার সুখ্যাতি অনেক দিনের পুরনো। আখাউড়ায় রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রেলওয়ে জংশন। এ জংশনের সঙ্গে রয়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ তিন বিভাগীয় শহর ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা।
জানা যায়, ১৯৯৯ সালের ১২ ডিসেম্বর আখাউড়া উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নের প্রায় ৮.৩৩ বর্গমি. আয়তন নিয়ে ৯টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে গঠিত হয় আখাউড়া পৌরসভা। এ পৌরসভার অধিকাংশ মানুষই পেশায় ব্যবসায়ী ও চাকুরিজীবী। আগামী ৩০ ডিসেম্বর টানা চতুর্থবারের মতো আখাউড়া পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে পুরো আখাউড়া উপজেলায় এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। পৌর এলাকার রাজপথ, পাড়া-মহল্লার অলি-গলি সবখানেই শোভা পাচ্ছে প্রার্থীদের পোস্টার। নির্বাচনের আর মাত্র দিন পাঁচেক বাকি, আর তাই এখন চলছে প্রার্থীদের শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণা। পাড়া-মহল্লার বাসা-বাড়ি রাস্তা-ঘাটসহ সবখানেই এখন প্রার্থীদের অবাধ বিচরণ।
পৌষের কনকনে শীত উপেক্ষা করে মেয়র প্রার্থীরা দিন-রাত ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে-দ্বারে। তবে প্রচার-প্রচারণায় পিছিয়ে নেই সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। ভোটের আশায় বিরামহীনভাবে তারাও ছুটছেন ভোটারদার কাছে। চাইছেন ভোট আর দিচ্ছেন পৌরবাসীর উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি।
এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে ‘নৌকা’ প্রতীকে লড়ছেন বর্তমান মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা তাকজিল খলিফা কাজল ও বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে লড়ছেন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মো. মন্তাজ মিয়া। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ‘মোবাইল ফোন’ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন মশিউর রহমান বাবুল, ‘রেল ইঞ্জিন’ প্রতীক নিয়ে সালাউদ্দিন হোসেন সুমন এবং ‘নারিকেল গাছ’ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন অ্যাডভোকেট সোহেল ভূঁইয়া। তবে স্থানীয়রা বলছেন মূলত লড়াইটা হবে ‘নৌকা’ আর ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাকজিল খলিফা কাজল জাগো নিউজকে বলেন, আমি ভোটারদের দ্বারে-দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছি। তারা আমাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমর্থন দিচ্ছেন। আমি আশা করছি নির্বাচনে আমি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো। আমি নির্বাচিত হলে সকলের সহযোগিতা নিয়ে এমন একটি আধুনিক পৌরসভা গঠন করবো যাতে করে দেশের বাকি পৌরসভাগুলোর কাছে আখাউড়া পৌরসভা অনুকরণীয় হয়ে থাকে।
তবে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাজী মো. মন্তাজ মিয়া অভিযোগ করে বলেন, আমার পক্ষে কর্মী-সমর্থকরা প্রচার-প্রচারণা চালাতে গেলেই তাদের যৌথ বাহিনীর ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। তবে নির্বাচন যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় তাহলে তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন।
তবে ভোটররা বলছেন, প্রার্থীরা যত প্রতিশ্রুতিই দিক না কেনো, এবার দলীয় প্রতীক দেখে নয় সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকেই নির্বাচিত করবেন তারা।
আখাউড়া পৌর এলাকার কয়েকজন ভোটার জাগো নিউজকে বলেন, ভোটের আগে অনেকেই উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চান। কিন্তু ভোট দিয়ে নির্বাচনে তাদের বিজয়ী করার পর আর তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই এবার শুধু প্রার্থীর দলীয় প্রতীক দেখেই নয় বরং যিনি সৎ ও যোগ্য এবং প্রকৃতপক্ষেই পৌরবাসীর উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করবেন তাকেই ভোটের মাধ্যমে মেয়র নির্বাচিত করবেন তারা।
তবে কে ধরছেন আখাউড়া পৌরসভার হাল কিংবা কে হচ্ছেন পৌরসভার পরবর্তী মেয়র তা জানতে ভোটার ও প্রার্থীদের অপেক্ষা করতে হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
উল্লেখ্য, আগামী ৩০ ডিসেম্বর ১১টি ভোট কেন্দ্রে আখাউড়া পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। পৌর এলাকার মোট ভোটার সংখ্যা ২৪ হাজার ৯৫০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ হাজার ৪৫৮ জন ও নারী ভোটার ১২ হাজার ৪৯২ জন।
আজিজুল আলম সঞ্চয়/এসএস/পিআর