বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা উপেক্ষিত


প্রকাশিত: ০৫:৫৯ এএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫

২০১৫ সালে দেশের আলোচিত ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম সরকারের ৮ম জাতীয় বেতন কাঠামো গঠন। এ বেতন কাঠামো তৈরি নিয়ে সরকার যেভাবে একটি মহল থেকে প্রশসংসা কুড়িয়েছেন তেমনি একটি মহল থেকে সমলোচিতও হয়েছেন। বিশেষ করে দেশ গড়ার কারিগরের ভূমিকায় কাজ করা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছিলেন এ বেতন কাঠামোয় একেবারেই উপেক্ষিত। শিক্ষকরা বেতন কাঠামো প্রস্তাব করার পর থেকেই আপত্তি জানান। মূলত এ বেতন কাঠামোর ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে শিক্ষকদের মর্যাদাহানির বিষয়টি ছিল বহুল আলোচিত।

১৪ মে থেকে লাগাতার বিবৃতি প্রদান, প্রতিবাদী মানববন্ধন, কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছেন শিক্ষকরা। দেশের ৩৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ আন্দোলন চলে। আন্দোলনটি পরিচালিত হয় বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃত্বে।

নিজেদের দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রাথমিকভাবে শিক্ষকরা মানববন্ধন ও শিক্ষামন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর যথাক্রমে গত ১৫, ১৮ ও ২১ জুন স্মারকলিপিও প্রদান করেন। এছাড়াও সরকারের উচ্চপদস্থ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সাথে দীর্ঘ আলোচনায় দাবিসমূহ পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন-ভাতাদির আলোকে তুলে ধরা হয়। এরপর কয়েক দফায় অর্থমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীর সাথে বৈঠক, কর্মবিরতি, মানববন্ধনসহ অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন শিক্ষকরা। তবুও এর কোনো সুরাহ হয়নি। এমনকি দাবিসমূহ নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বারবার সাক্ষাতের অনুমতি চাইলেও একটি মহলের ইশারায় সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন দেশ গড়ার এ কারিগররা। যদিও ইতোপূর্বে কখনো এমন হয়নি।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমলাদেরসহ সঙ্গবদ্ধ একটি চক্র দেশটাকে পেছনের দিকে ঠেলে দিতে, দেশের শিক্ষাঙ্গনকে ধ্বংস করতে কাজ করে যাচ্ছে। কারণ তারা বুঝতে পেরেছে যে দেশেকে ধ্বংস করতে হলে শিক্ষাঙ্গনকে ধ্বংস করতে হবে। তাই তারা সঙ্গবদ্ধভাবে প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করে দেশের সর্বস্তরের শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে।’

এরই মধ্যে ৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সভায় শিক্ষকদের দাবিসমূহ আমলে না নিয়ে ৮ম জাতীয় বেতন কাঠামো অনুমোদন দেয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ হন শিক্ষকরা। সর্বশেষ ৬ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শিক্ষকরা। সেখানে অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের তিনটি বিষয়ে আশ্বস্ত করে আন্দোলনে না যাওয়ার কথা বলেন। যার দরুণ শিক্ষকরা আন্দোলন থেকে সরে আসেন। কিন্তু ১৫ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের ঠিক আগ মুহূর্তে রাত ৮টায় নতুন বেতন কাঠামো বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। যাতে বহুল আলোচিত টাইম স্কেল এবং সিলেকশন গ্রেড বাদ রাখা হয়। এরই প্রেক্ষিতে ২০ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে এর অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরা হয়।

বিবৃতিতে শিক্ষকরা বলেন, ‘গত ৬ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের তিনটি বিষয়ে সুস্পষ্ট আশ্বাস দিয়েছিলেন। যার মধ্যে ছিল- (১) অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য সপ্তম জাতীয় বেতন কাঠামোর অনুরূপ  সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল থাকবে। এক্ষেত্রে কোনো ভাবেই সপ্তম বেতন স্কেলে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা কমানো হবে না।

(২) অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে সিনিয়র সচিবদের জন্য যে সুপার গ্রেড সৃষ্টি করা হয়েছে, এই সুপার গ্রেডে সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একটি অংশকে উন্নীত করা হবে।

(৩) অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রারম্ভিক বেতন সপ্তম গ্রেডে সম্ভব না হলে ন্যূনতম অষ্টম গ্রেড থেকে শুরু হবে।

কিন্তু, তিনটি প্রতিশ্রুতির প্রথম দু’টি সম্পূর্ণ বরখেলাপ এই বেতন কাঠামোতে করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষকরা। এমনকি বেতন কাঠামোতে জাতীয় অধ্যাপকদের সিনিয়র সচিবদের পর্যায়ে আনা হয়েছে। যা এই বরেণ্য ব্যক্তিদের অপমান করা হয়েছে এবং পে-রুলে আনার এই প্রচেষ্টার মধ্যদিয়ে জাতীয় বেতন কাঠামোকে আরো বিতর্কিত করা হয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষকরা। সর্বজন শ্রদ্ধেয় এ শিক্ষকদের এই বেতন কাঠামোতে অন্তর্ভুক্তি অনাকাঙ্ক্ষিত ও জাতির জন্য লজ্জাজনক বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে ফেডারেশনের সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘জাতীয় অধ্যাপকরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নিয়োগ পান না। তারা সরকারিভাবেই নিয়োগ পান।

এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।