ছন্দে থাকলে শেষ চারেও পৌঁছা সম্ভব: পাইলট
ভারত, নিউজিল্যান্ড এবং পাকিস্তান অনেক বেশি শক্তিশালী দল। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের একদম সুপার পাওয়ার হিসেবে পরিগণিত। এই তিন পরাশক্তিকে ব্র্যাকেটবন্দী করেও কারো কারো মনে জাগে প্রশ্ন, আচ্ছা! বাংলাদেশ কী আফগানিস্তানের সাথে পারবে?
বলার অপেক্ষা রাখে না র্যাংকিং, রেটিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আফগানরা। তাই তাদের হারানো নিয়েও আছে সংশয়। সে কারণেই অনেকেরই সন্দেহ, মূল পর্বে অন্তত একটি প্রতিষ্ঠিত দলকে হারাতে পারবে কী মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল?
ভক্ত ও সমর্থকদের মধ্যে যারা প্রিয় জাতীয় দলকে নিয়ে এমন সংশয় প্রকাশ করছেন, তাদের জন্য আছে আশাবাদী হওয়ার মত খবর। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট মনে করেন, ‘আসল কথা হলো সময়মত ছন্দ খুঁজে পাওয়া। আর বাংলাদেশ যদি বাছাই পর্ব থেকে মোমেন্টাম খুঁজে পায়, তাহলে অনেক দুর যেতে পারবে। এমনকি সেরা চারে চলে যাওয়ায় অসম্ভব নয়।’
পাইলটের কথা, আসল হলো মোমেন্টাম। তা পেলে বাংলাদেশ বেস্ট ফোরে যেতে পারবে। অসম্ভব কিছু না।
জাগো নিউজের সাথে একান্ত আলাপে জাতীয় দলের এ সাবেক অধিনায়ক যোগ করেন, টি-টোয়েন্টি হলো এমন এক ফরম্যাট যেখানে মোমেন্টাম পাওয়া গেলে বেশ ভাল খেলা যায়। বাংলাদেশ প্রথম পর্বের ম্যাচগুলোয় যদি ভালভাবে জিতে কনফিডেন্স নিয়ে এবং ছন্দ পেয়ে পরের রাউন্ড মানে মূল পর্বে খেলতে নামে তাহলে অবশ্যই ভাল খেলতে পারবে।’
২০ ওভারের ফরম্যাটে শক্তি ও সামর্থ্যের ফারাকটা কম। এ কথা জানিয়ে পাইলট বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হলো, ২০ ওভারের ম্যাচে নির্দিষ্ট দিনের অ্যাপ্রোচ, অ্যাপ্লিকেশন আর পারফরমেন্সটা অনেক বড়।’
হঠাৎ ম্যাচের চালচিত্র পাল্টে যায়। টি-টোয়েন্টি যে এক মুহুর্তে বদলে যায়, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পাইলট আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উপমা টেনে বলেন, টি-টোয়েন্টিতে কাগজে কলমের হিসেব আর শক্তি সামর্থ্যই শেষ কথা নয়। এখানে যে হিসেব-নিকেশ করে আগানো কঠিন, তার একটা ছোট্ট উদাহরণ দেই কাগজে-কলমে মোটেই আহামরি দল ছিল না হায়দরাবাদ। মোস্তাফিজ, রশিদ খান আর ওয়ার্নার দিয়েই তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। অথচ ব্যাঙ্গালুরুর দিকে তাকান বিরাট কোহলি আর এবি ডি ভিলিয়ার্সের মত বিশ্বসেরা উইলোবাজকে নিয়েও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি।
বাংলাদেশের এই দল কী সেরা চারে থাকার মত? পাইলটের জবাব, অবশ্যই ক্যাপাবল। আমি মনে করি, আমাদের এই দলের সেরা চারে পা রাখার সামর্থ্য আছে। আমাদের দলে মোস্তাফিজের মত বোলার আছে। যার বৈচিত্র্য আছে। আমাদের বোলিং লাইনআপেই বৈচিত্র্য আছে। মোস্তাফিজ আছে। সাকিব আছে। অফস্পিনার শেখ মাহদিও আছে। কাজেই বোলিংয়ে বৈচিত্র্য আছে। আর আমি এই বোলিং বৈচিত্র্যটাকেই মূল্যায়ন করি। তা নাহলে বলতাম, নাহ! বোলিং দুর্বল। এই দলকে দিয়ে হবে না।
নিজ দলের সম্ভাবনার পক্ষে যুক্তি দাঁড় করিয়ে পাইলট বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদের কয়েকজন অভিজ্ঞ ও পরিণত পারফরমার আছে। যারা যে কোন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে। মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ আর সাকিব টপ লেভেলেও অনেক পরিণত। তাদের সামর্থ্যও আছে বেশ। টপ অর্ডার থেকে আমি লিটন দাস, নাইম ও সৌম্যর কাছ থেকে একটু বেশি ভাল ব্যাটিং নৈপুণ্য চাই।’
পাইলটের আশা ২০১৯-এর বিশ্বকাপে সাকিব যে অসাধারণ ব্যাটিং-বোলিং করেছেন। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অন্য কেউ বিশেষ করে লিটন দাস তেমন ব্যাটিং করুক।
তার ভাষায়, ‘সাকিবের ওিই অসামান্য ব্যাটিং আমাদের পুরো দলকে বিশ্বকাপে ভাল খেলতে সহায়তা করেছে। দল হিসেবে ভাল খেলে একাধিক বিশ্বশক্তিকে হারানো সম্ভব হয়েছে। আমার আশা এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওপরের দিকে লিটন, নাইম ও সৌম্যর মধ্যে থেকে কেউ একজন সাকিব হয়ে উঠুক। এমন দু’একজনের খুব ভাল সময় দরকার। সেটা লিটন দাস বা নাইম ইসলামের ব্যাট থেকেই আসতে পারে। আমার তো মনে হয়, লিটন দাসের একটা অসাধারণ টুর্নামেন্ট হয়ে থাকতে পারে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেটার ওপর নির্ভর করে বাকিরা যদি ভাল সাপোর্ট দেয়, তাহলে মনে হয় না শেষ চারে পা রাখা অসম্ভব।’
টপ ফোরে যেতে হলে অন্তত দুটি ম্যাচ জিততেই হবে। তিনটা ম্যাচ জেতারও দরকার পড়তে পারে। আসলে কয়টা ম্যাচ জেতা সম্ভব? পাইলটের কথা, ‘এটা বলেকয়ে জেতা সম্ভব না। সেটাও নির্ভর করবে আমরা কতটা ভাল খেলবো আর কতটা ছন্দে থাকবো- তার ওপর। আফগানিস্তান কিন্তু ভয়ানক টি-টোয়েন্টি দল। তাদের ব্যাটিং ক্লিক করলে আফগানরা সত্যিই বিপজ্জনক দল। বোলিং লাইনআপ সুপার এক্সিলেন্ট। স্পিন ট্র্যাক পেয়ে গেলে আফগানিস্তান সত্যিই অন্যরকম হয়ে উঠতে পারে।’
তামিম অসাধারণ প্লেয়ার। তবে এখন আর তামিমকে নিয়ে বেশি কথা বলতে রাজি নন পাইলট। তাতে বরং সহযোগিরা জন্য অস্বস্তিতে ভুগতে পারেন। এমনটা জানিয়ে পাইলট শেষ করেন এভাবে, যেটা এখন নেই। সেটা নেই। যা আছে, তার ১০০ ভাগ যাতে পাওয়া যায় সে চেষ্টাই করতে হবে।
সৌম্য-লিটন দাস আর নাইমকে কিভাবে ভালভাবে কাজে লাগানো যায়? সোহানের কাছ থেকে কী করে সেরাটা বের করা যায়, তারা যাতে মুশফিক, সাকিব ও মাহমুদউল্লাহর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পারফরম করতে পারে- সেটাই হবে মূল কাজ।
এআরবি/আইএইচএস