অন্তত দুটি ম্যাচে জয় পাবে বাংলাদেশ: আশরাফুল

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৯:২৯ এএম, ১২ অক্টোবর ২০২১

তার হাত ধরেই এসেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম জয়। ১৪ বছর পর এবার কী সে অধরা জয় আবার দেখা দেবে? মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল কতদুর যাবে এবার? কেমন হবে তাদের পারফরমেন্স? দল সাজানো কী ঠিক হলো? কাদের ওপর নির্ভর করবে টিম বাংলাদেশের ভাগ্য? বিশ্বকাপে তার বাজির ঘোড়া কারা? সব মিলিয়ে টাইগারদের সম্ভাবনাই বা কতটা? জাগো নিউজের সাথে একান্ত আলাপে এসব প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল।

কেমন ছিল সে আন্তরিক কথোপকোথন? আসুন দেখি...

জাগো নিউজ: ১৪ বছর মূল পর্বে জেতে না বাংলাদেশ। এই দল কী পারবে, সে না পারার বন্ধাত্ব ঘোচাতে? এবার কী মূল পর্বে জয়ের দেখা মিলবে? আপনার প্রত্যাশা কী?

আশরাফুল : আসলে স্বপ্ন তো দেখি সেমিফাইনাল পর্যন্ত যাওয়ার। তবে মন চাইলেই তো আর হবে না। বাস্তবতার কথা ভাবলে মনে হয় এবং আমি দুটি ম্যাচ জেতার আশা করছি।

জাগো নিউজ: কোন দুটি ম্যাচ?
আশরাফুল: আশা করি আফগানিস্তান আর আয়ারল্যান্ডকে হারাতে পারবো আমরা। মানে বাছাই পর্ব থেকে যদি আয়ারল্যান্ড উঠে আসে, তাহলে আফগানদের সাথে আইরিশরাও হবে মূল পর্বে ভারত, পাকিস্তান এবং নিউজিল্যান্ডের সাথে আমাদের প্রতিপক্ষ। আমি ওই দুটি ম্যাচ জয়ের আশা করি।

জাগো নিউজ: আফগানিস্তান তো রেটিং-র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে, তারপরও জয়ের আশা করেন?

আশরাফুল: আফগানিস্তান যদিও আমাদের চেয়ে এগিয়ে, তারপরও আমি আশাবাদী। কেন যেন মনে হচ্ছে আমরা এবার জিতবো। এই ওয়ার্ল্ডকাপে সেমিফাইনালে খেললে খুব ভাল লাগবে। তারচেয়ে বড় কিছু হতেও পারে না। তবে বাস্তবতার নিরিখে চিন্তা করলে বলতে হবে ওই দুই ম্যাচ জেতাই সম্ভব। আমি ওই দুই ম্যাচের দিকেই তাকিয়ে।

জাগো নিউজ: যে দল সাজানো হয়েছে, সেটা কেমন হলো?

আশরাফুল: আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে বাধ্য হচ্ছি, যে দল খেলতে যাচ্ছে তার বাইরেও যে প্লেয়ার থাকতে পারে বা আছে- তা কারো ব্রেনেই ছিল না। কোচ, নির্বাচক কিংবা টিম ম্যানেজমেন্ট কারো ভাবনায়ই ছিলনা যে এর বাইরেও কেউ দলে থাকতে পারে। আর কারো দিকে তাকানো যায়; কিন্তু আসলে আছে। অন্তত জনা দুয়েক বিকল্প পারফরমার আছে। যাদের কথা ভাবা যেত। যাদের বিবেচনায় আনা যেত।

জাগো নিউজ: তারা কারা?
আশরাফুল: আমার মনে হয় ওপেনিংয়ে রনি তালুকদার আর পেস বোলিংয়ে কামরুল ইসলাম রাব্বিকে বিবেচনায় আনা যেত। রনি তালুকদার এই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে কয়েক বছর নিয়মিত পারফরম করেছে; কিন্তু কোন ডাক পায়নি। কামরুল ইসলাম রাব্বি গত দুই লিগ ও বিপিএলে দারুন বোলিং করেছে। স্লোয়ার দিচ্ছে খুব ভাল; কিন্তু বিবেচনায় আসেনি। তাদের খুঁটিয়ে দেখা যেত।

যে ২১ জন ক্রিকেটারের মধ্যেই আসলে বিশ্বকাপের সিলেকশন হয়েছে। বর্তমান পারফরমন্সে ধরলে বেশ কয়েকজন অফফর্মের পারফরমার দলে। লিটন দাসের কথা ধরেন, শেষ ৭ ম্যাচে হায়েস্ট মোটে ৩৩। সৌম্য সরকার লাস্ট ৬ ইনিংসে সর্বোচ্চ মাত্র ১৬ রান। মুশফিকুর রহিম শেষ ৫-৬টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচেরও গড় স্কোর ১০-১২। আপনি যদি ওইভাবে চিন্তা করেন, তাহলে দলে বেশ কিছু প্লেয়ার আছেন যাদের নাম ডাক বেশি। নাম দিয়ে চিন্তা করলে সলিড দল। এক্সিলেন্ট টিম; কিন্তু কারেন্ট পারফরমেন্স বিবেচেনায় দলে অফফর্মের প্লেয়ার বেশি।

জাগো নিউজ: আপনি কি তাহলে এ দল নিয়ে চিন্তিত?
আশরাফুল: নাহ মোটেই চিন্তিত না। কারণ, আমরাতো আর বলছি না যে চ্যাম্পিয়ন হতে যাচ্ছি। যেহেতু আমাদের কোন বড়সড় টার্গেট নেই। তাই দল নিয়ে চিন্তিত না।

জাগো নিউজ: অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের সাথে সিরিজ জয়ের প্রভাব পড়বে কতটা?
আশরাফুল: জয়টা আমাদের পক্ষে আছে। বাকি সব কিছু আমাদের বিপক্ষে। নিউজিল্যান্ডের সাথে আমরা শেষ ম্যাচটি খেলেছি মোটামুটি ভাল উইকেটে। ওই পিচে কিউইদের একটি গড়পড়তা মানের ক্রিকেটারে সাজানো নাম সর্বস্ব জাতীয় দলের সাথে ১৬০ রানের টার্গেট তাড়া করতে গিয়ে আমরা পারিনি। সেদিক থেকে আমি মনে করি ব্যাটিং-বোলিং দু’বিভাগেই দুর্বলতা থেকে যাবে।

জাগো নিউজ: তাহলে কী করলে ভাল হতো?
আশরাফুল: আমার অনুভব হলো, আমরা নিউজিল্যান্ডের সাথে যে উইকেটে শেষ ম্যাচ খেলেছি, ঠিক ওই উইকেটে যদি অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১০টি ম্যাচই খেলতাম, তার মধ্যে সিরিজ বিজয়ী না হয়ে যদি দুটি করে ম্যাচও জিততে পারতাম, তাহলে অনেক উপকার হতো। একটা অন্যরকম কনফিডেন্স থাকতো। উইনিং যোগ হয়েছে; কিন্তু মনে হয় না কারো ব্যক্তিগত পারফরমেন্সে কোন উন্নতি যোগ হয়েছে।

জাগো নিউজ: বিশ্বকাপে আপনি কাদের দিকে তাকিয়ে আছেন?

আশরাফুল: অফ ফর্মের প্লেয়ার হলেও লিটন, সৌম্য, মুশফিক- তিনজনই দারুণ প্লেয়ার। এক কথায় দুর্দান্ত পারফরমার। সৌম্য, লিটন আর সাকিব খুব ইম্পরট্যান্ট প্লেয়ার। আমার ধারনা এই তিনজনকেই টপ অর্ডারে খেলানো হবে। নাইম শেখকেও খেলানো হতে পারে। তবে ভাল উইকেটে লিটন দাসের সাথে সৌম্যই হবে রাইট চয়েজ।

প্র্যাকটিস ম্যাচগুলোতে সৌম্যকে ট্রাই করা উচিৎ। ভাল উইকেটে সৌম্য ভাল করবে বলে আমার বিশ্বাস। আমার ধারনা টপ থ্রি-তে সৌম্য, লিটন আর সাকিবের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। বোলিংয়ে মোস্তাফিজ অনেক ভাল ফর্মে আছে।

জাগো নিউজ: বোলারদের নিয়ে কিছু বলেন?

আশরাফুল: বোলারদের জন্য কাজটা ডিফিকাল্ট হবে। কারণ, তারা শেষ ১০ ম্যাচ যে পিচে খেলে গেছে সেখানে কিছু করতে হয়নি। হাতের কারুকাজ, বৈচিত্র্য কিছুই করতে হয়নি। তারা একটা জায়গায় বল ফেলেছে। সফল হয়েছে; কিন্তু আদর্শ উইকেটে তা চলবে না। ওই কৌশল হবে বুমেরাং। টি-টোয়েন্টিতে এক জায়গায় বল করা মানে অনিবার্য্য মৃত্যু। বিশ্বকাপে তো আর তা হবে না। সেখানে উইকেট পেতে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হবে।

জাগো নিউজ: আইপিএলে যে উইকেট দেখা যাচ্ছে, সেটাই থাকবে? না বদল হবে?

আশরাফুল: আমার মনে হয় কিছু কিছু জায়গা বা ভেন্যুতে হয়তো উইকেট অন্যরকম হবে। উইকেট বেটার হলে আমাদের জন্য খারাপ। পাওয়ার হিটার কম। ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি পিচে আমাদের বোলাররাও বিপাকে পড়বে। আমাদের জন্য ডজি উইকেটই ভাল।

এআরবি/আইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।