‘ভোট পাওয়া এত সহজ না’
রোববার সন্ধ্যায় বরগুনার পাথরঘাটা পৌরসভার লিকার পট্টির শাহিনের চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন জনাদশেক মানুষ। আলোচনার বিষয় পৌর নির্বাচন। তাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে চা পান করতে করতে এবার কেমন মেয়র চান জানতে চাওয়া হয়। জবাবে একজন বললেন, আমরা কোনো আশ্বাস নয়, এবার কাজের বাস্তবায়ন চাই।
গত পাঁচ বছর ধরে আমরা শুধু পৌর করই দিয়ে যাচ্ছি। বিন্দুমাত্র কোনো সুযোগ সুবিধা পাইনি। অনেক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি শুনেছি। এখন এসবের বাস্তবায়ন চাই।
এর কিছুক্ষণ পর পাথরঘাটা পৌরসভার রাসেল স্কয়ার মোড়ে গিয়ে নির্বাচনের আমেজ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে রিকশা চালক আবদুস সালাম (৩০) জাগো নিউজকে বলেন, সব দলই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তাই পাথরঘাটায় নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। এখন আমরা ভোটের অপেক্ষায় আছি।
বুঝে-শুনে ভোট দেবেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, অনেক সময় ভোট কেন্দ্রে গিয়েও মন ঘুরে যায়। আসলে যোগ্য লোককে ভোট না দিয়ে অযোগ্য লোককে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে তার মাশুল দিতে হয় বলেও জানান তিনি।
রিকশা চালক রুবেল (২৫) বলেন, পাথরঘাটা পৌরসভার রাস্তাঘাট খুবই খারাপ। এছাড়াও বর্ষার সময় এসব রাস্তায় পানি জমে থাকে। আর যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনাও পড়ে আছে পাথরঘাটা পৌরসভার রাস্তুাগুলোর উপর। এসবের জন্য রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালানো খুবই কষ্টকর।
তিনি আরও বলেন, গত নির্বাচনেও অনেক উন্নয়নের আশ্বাস দিয়ে একজন পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের পর তার আশ্বাস বাস্তবায়ন হয়নি। তাই এবারও তিনি বুঝে-শুনে ভোট দেবেন বলে জানান। এসময় আবদুস সালাম ও রুবেলের কথায় মাথা নেড়ে সায় দিচ্ছিলেন পাশে বসা অন্যরা।
লিকার পট্টির চায়ের দোকানগুলোতে বিভিন্ন এলাকার খেটে-খাওয়া মানুষ সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পালা করে জড়ো হন। দীর্ঘ সময় ধরে ভোটের আলাপে মেতে ওঠেন তারাও। শুধু লিকার পট্টি ও রাসেল স্কয়ার না, পাঘরঘাটা পৌরসভার প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডের পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান, হোটেল, হাটবাজার, বিপণিবিতানসহ সর্বত্র আড্ডার মূল বিষয় এখন আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন।
এই আগ্রহ পাথরঘাটা পৌর এলাকার নারী ভোটারদের মঝেও। রুবী আক্তার (৩৫) নামে পাথরঘাটা পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের এক নারী ভোটার জাগো নিউজকে বলেন, ভোট দেবো, এইটাতো আনন্দের। প্রার্থীরা বাড়িতে এসে যে যার মতো করে ভোট চেয়ে যাচ্ছেন। তবে ভোট পাওয়া এত সহজ না। এবার যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দেব।
পাথরঘাটা পৌরসভায় কে হবেন নতুন পৌর পিতা? বড় দুই দলে নেই কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী। আর এ দুজনের অভিজ্ঞতাও রয়েছে। তবে, এ পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মল্লিক মো. আইউব। গত নির্বাচনে তিনি বিএনপির সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনোয়ার হোসেন আকনকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নানাভাবে বিতর্কিত হন। তার বিরুদ্ধে স্বজন প্রীতি, চাঁপা টেন্ডার ও পৌর তহবিলের অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে অনাস্থা দিয়েছিল পাথরঘাটা পৌরসভার সকল কাউন্সিলররা।
এসবের কারণে সংবাদ শিরনামও হয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও পৌরসভার কাঙ্খিত উন্নয়ন করতেও ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। যার কারণে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক পৌর মেয়র মো. আনোয়ার হোসেন আকনকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই এতটুকুও।
পৌর এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের একটি ছোট্ট হোটেলে জমে উঠেছিল ভোটের আলাপ। সেই হোটেলে নাশতার করার সময় মেয়র প্রার্থীদের চুলচেরা বিশ্লেষণ করছিলেন কয়েকজন মৎস্য ব্যবসায়ী। তাদের একটাই কথা, বর্তমান মেয়র আমাদের কথা দিয়েছিলেন ভাঙা রাস্তা সারিয়ে দেবেন। কিন্তু তা না করে উল্টো সারা বছর দুর্ভোগের শিকার করেছেন। এখন তিনি ভোট চাইতে এলে আগে আমরা অতীতের প্রতিশ্রুতির অগ্রগতি জানতে চাইবো।
এ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীরা ভোটারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাচ্ছেন। এসময় প্রার্থীরা ভোটারদের দাবি আদায়ের জন্য নানা আশ্বাস দিচ্ছেন।
পাথরঘাটা বাজারের ব্যবসায়ী লতিফ হাওলাদার জাগো নিউজকে বলেন, যিনি মেয়র নির্বাচিত হবেন, তিনি শহরের রাস্তাঘাট ও ড্রেন-কালভার্ট উন্নয়নের পাশাপাশি শহরকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন, তাকেই ভোট দেবেন তিনি।
পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাট শ্রমিক রফিক মিয়া জানান, আমরা গরীব মানুষ। আমাদের তেমন কিছু চাওয়া-পাওয়ার নাই। আমরা যেন কাজ করে দু`বেলা দু`মুঠো ভাত খেতে পারি এটাই চাই। তিনি আরও বলেন, যারা নির্বাচিত হন তারা নির্বাচনের পরে তাদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, জনগণের কথা ভাবার সময় তারা পান না।
উল্লেখ্য, উপকূলবর্তী উপজেলা পাথরঘাটায় ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পৌরসভা। পরে পৌরসভাটি তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হয়। এ পৌরসভার বর্তমান ভোটার ১১ হাজার ৪শ` ২১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ৫ হাজার ৭শ` একজন এবং পুরুষ ভোটার ৫ হাজার ৭শ` ২০জন। পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের একক, বিএনপির একক প্রার্থীসহ তিনজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৩ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
মো. সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এমজেড/এমএস