ভায়োকানোর জালে রিয়ালের ১০ গোল


প্রকাশিত: ০৭:২৭ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৫

বার্নাব্যুর গ্যালারি তখনও ভরে ওঠেনি। অনেক সিটই ফাঁকা পড়ে আছে। রাফায়েল বেনিতেজের স্টাইল পছন্দ নয় বলে দর্শকরাও মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করছিল। তারপরও খেলার তৃতীয় মিনিটে প্রথম গোল দেওয়ার পর ১০ এবং ১২- এই দুই মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল হজম করে বসলো রিয়াল মাদ্রিদ।

আরেকটি হারের শঙ্কায় তখনই পেয়ে বসেছিল বার্নাব্যু দর্শকদের। যে কারণে গ্যালারি থেকে মুহুর্মুহু ধুয়ো ধ্বনি ভেসে আসছিল বেনিতেজের নামে; কিন্তু কেউ তখনও ভাবতে পেরেছিল, ৯০ মিনিট শেষে এই ম্যাচটার চিত্র কী দাঁড়াতে পারে!

ভাবার কথাও নয়। এমন অভাবনীয় দৃশ্য তো কদাচিৎও আসে না। সেই ১৯৪০ সালে একবার দেখেছিল বার্নাব্যুও দর্শকরা। ৭৫ বছর পর আবারও একই দৃশ্যের মুখোমুখি হওয়ার কথা তো বার্নাব্যুতে উপস্থিত ৬২ হাজার দর্শক স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি। পারার কথাও নয়। অনেকেই হয়তো এমন দৃশ্য আগে কখনও ঘটেছে বলেও জানেন না। ৭৫ বছর আগের ঘটনা না জানারই কথা।

খুব সহজেই ৯০ মিনিট পরবর্তী দৃশ্যটা চোখ বুলিয়ে নেয়া যায়। ২-১ গোলে পিছিয়ে পড়া রিয়াল মাদ্রিদ ৯০ মিনিটের খেলা শেষ করলো ১০-২ গোলে রায়ো ভায়োকানোকে হারিয়ে।

  

এমন অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটাও কী সম্ভব! খেলা না দেখা হঠাৎ কেউ রিয়াল মাদ্রিদ ভার্সেস রায়ো ভায়োকানো ম্যাচের ঘটনা শুনলে তো অবাক হয়ে যাবে। পাগলের প্রলাপ বলেও কেউ কেউ এটাকে ছুড়ে ফেলে দিতে চাইবে! আগের ম্যাচেই যারা ভিয়ারিয়ালের মত দলের কাছে হেরেছিল, তারাই আবার ১০ গোল দেবে প্রতিপক্ষেও জালে!

কিন্তু বাস্তবতা তো আর কেউ অস্বীকার করতে পারবে ন। ২টি লাল কার্ডের কারণে ১০ জনের দলে পরিণত হওয়া রায়ো ভায়োকানোর জালে গ্যারেথ বেলের চারটি, করিম বেনজেমার হ্যাটট্রিক, রোনালদো জোড়া এবং দানিলো দিয়েছেন এক গোল। সবশেষে ১০-২ গোলে সফরকারীদের হারিয়েছে রাফায়েল বেনিতেজের শিষ্যরা। এই জয়ের ফলে বার্সেলোনার সঙ্গে ব্যবধান কমিয়ে ২ পয়েন্টে নিয়ে আসলো রিয়াল। ১৬ ম্যাচ শেষে রিয়ালের পয়েন্ট ৩৩। ১৫ ম্যাচ শেষে ৩৫ পয়েন্ট করে নিয়ে শীর্ষে রয়েছে বার্সেলোনা এবং অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ।

১০-২ গোলে ভায়োকানোকে হারালেও ৭৫ বছর আগে গড়া রেকর্ডটা ভাঙতে পারলো না রিয়াল। ১৯৪০ সালে বার্সেলোনাকে ১১-১ গোলে হারিয়েছিল লজ ব্লাঙ্কোজরা। সেটাই ক্লাব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড।

ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই গোলের সূচনা করে রিয়াল মাদ্রিদ। বেলের পাস থেকে বল পেয়ে ভায়োকানোর রক্ষণ ভাঙেন দানিলো এবং ক্লাবে যোগ দেয়ার পর থেকে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন তিনি। রিয়ালের এগিয়ে যাওয়ার আনন্দ মাত্র ৯ মিনিট স্থায়ী হলো। এরপরই ম্যাচের রঙ বদলে যায়। স্বাগতিকদের জালে ২ মিনিটের ব্যবধানে পর পর দুইবার বল জড়িয়ে দেয় ভায়োকানো।

১০ মিনিটে আন্তোনিও আমায়া এবং ১২ মিনিটে রিয়ালের জালে বল জড়ান জোজাবেদ। পিছিয়ে থেকেও রিয়ালের মত ক্লাবের বিপক্ষে তাদেরই মাঠে এগিয়ে যাওয়ার আনন্দ বেশিক্ষণ থাকেনি ভায়োকানোর। খেলার ১৫তম মিনিটেই টিটোকে সরাসরি লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেন রেফারি। অপরাধ, টনি ক্রুসকে দুই পায়ের হার্ড ট্যাকল।

খেলার আধা ঘণ্টার মধ্যে আরও একটি লাল কার্ড এবং অবধারিতভাবেই ভায়োকানোর বিপক্ষে। ২৮ মিনিটের ঘটনা এটি। সেই টনি ক্রুসকে ফাইল করার অপরাধে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড (+ লাল কার্ড) দেখেন রাউল বিয়েনা। তার আগেই অবশ্য রিয়ালকে সমতায় ফেরান গ্যারেথ বেল। খেলার ২৫ মিনিটে দানিলোর ক্রস থেকে দারুন এক হেডে গোল করেন বেল।    

এর একটু পরই, খেলার ৩০ মিনিটে সার্জিও রামোসের শাট টেনে ধরে ভায়োকানোর ডিফেন্ডার। বক্সের ভেতর ঘটনা। ফলে রেফারি দিলেন পেনাল্টির বাঁশি। স্পট কিক নেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। তার মাটি কামড়ানো শট চলে যায় ভায়োকানোর জালে।

সফরকারী দলের চেয়ে তখন দুইজন বেশি নিয়ে খেলছিল রিয়াল। ফলে একের পর এক আক্রমণ করে যাচ্ছিল তারা। আর আক্রমণ ঠেকিয়ে যাচ্ছিলেন ভায়োকানোর খেলোয়াড়রা। তখন প্রশ্ন দেখা দেয়, শেষ পর্যন্ত কত গোল দেবে রিয়াল!

৪১তম মিনিটেই দলের চতুর্থ গোল করে ফেলেন গ্যারেথ বেল। প্রায় ৩৫ গজ দৌড়ে বল নিয়ে এসে ভায়োকানোর গোলরক্ষক ইয়োয়েলকে পরাস্ত করেন তিনি। দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হওয়ার একটু পরই গোল পেয়ে গেলেন করিম বেনজেমা। হামেস রদ্রিগেজের দারুন এক পাস থেকে ৪৮ মিনিটে গোলটি করেন বেনজেমা।

বেনজেমার গোলের এক মিনিট পরই রোনালদোর দারুন একটি চেষ্টা রুখে দেন ভায়োকানো গোলরক্ষক; কিন্তু ৫৩ মিনিটে আর বাঁচতে পারেনি। ভায়োকানোর জাল খুঁজে নেয় ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর শট।

খেলার ৬১ মিনিটে স্প্যানিশ লা লিগায় নিজের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক পূরণ করে নেন বেল। রাইট উইং থেকে রোনালদোর ক্রস থেকে গোলটি করেন তিনি। খেলার ৭১ মিনিটে নিজের চতুর্থ গোল করেন ওয়েলস স্ট্রাইকার বেল। এই গোলেও দারুন অবদান ছিল রোনালদোর।

এরপরই অবশ্য বেলকে তুলে নেন কোচ বেনিতেজ। তিনি যখন মাঠ ছাড়ছিলেন, তখন পুরো গ্যালারি উঠে দাঁড়িয়েছিল তাকে কুর্নিশ করার জন্য। বেল উঠে যাওয়ার পর রোনালদো বেশ কয়েকবার সুযোগ পেয়েছিলেন হ্যাটট্রিকটা পূরণ করার জন্য। কিন্তু ভায়োকানো গোলরক্ষক ইয়োয়েলের দৃঢ়তায় সেটা আর সম্ভব হয়নি।

রোনালদো না পারলেও ৭৯ এবং ৯০তম মিনিটে দুই গোল করে বসেন করিম বেনজেমা এবং বেলের পর হ্যাটট্রিক পূরণ করেন বেনজেমাও। গোল দুটিতে অবদান ছিল লুকা মড্রিচ এবং মাতেও কোভাসিসের।

আইএইচএস/এআরএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।