তীব্র শীতে দুর্ভোগে খেটে খাওয়া মানুষ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩:০১ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৫

হিমালয় কন্যা খ্যাত পঞ্চগড়ে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। ঘন কুয়াশার কারণে দিনে যানবাহন চলাচল করছে হেডলাইট জালিয়ে। কনকনে শীতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে রিকশা-ভ্যান চালকসহ খেটে খাওয়া মানুষ। তারা পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিনযাপন করছেন। হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়েরিয়াসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। শীত মোকাবেলায় এখনো সরকারি বা বেসরকারিভাবে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

জানা গেছে, কয়েকদিন ধরে সকাল থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকে আকাশ। সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাস। দিনের বেলায় কখনো কখনো সূর্যের দেখা মিললেও তাপ ছড়ানোর আগেই আবারো ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় সূর্য। ঘন কুয়াশায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। দিনের বেলায় হেডলাইট জালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। রাতভর বৃষ্টি মতো তুষার ঝড়ছে।

রিকশা, ভ্যান আর টমটম চালকদের দৈনন্দিন আয় কমে গেছে। ঠান্ডার কারনে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া যাত্রীরা রিকশা-ভ্যানে উঠছে না। গরীব ও দুঃস্থ মানুষজন খড়কুটো জালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। জেলায় কোনো আবহাওয়া অফিস না থাকায় তাপমাত্রার সঠিক পরিমাপ জানা যায়নি। তবে স্থানীয় এটি বেসরকারি সংস্থার তথ্যমতে বর্তমানে এখানে রাতে ৬ থেকে ৭ এবং দিনের বেলা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠানামা করছে।

এদিকে, বৃদ্ধ ও শিশুদের জন্য বাড়তি সতর্কতা নিয়েও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। সর্দি-কাশি লেগে থাকছে। হাসপাতালে শীত ও শীতজনিত রোগে আক্রান্তদের ভিড় বাড়ছে। গত তিনদিনে সরকারি হাসপাতাল ও শহরের বেসরকারি বিভিন্ন ক্লিনিকে শতাধিক শিশু ভর্তি হয়েছে। এদের অধিকাংশ ডায়রিয়া, অ্যাজমা, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত।

Cold-Pic
অন্যদিকে জেলার দুই লাখ গরীব ও দুঃস্থ মানুষকে শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচাতে সরকারি বা বেসরকারিভাবে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। এখনি শীতকাতর মানুষের পাশে দাঁড়াতে না পারলে তীব্র শীতে দুঃস্থদের দুর্ভোগ আরো চরমে পৌঁছাবে।

শহরের রামের ডাংগা মহল্লার রিকশাচালক সপিয়ার রহমান বলেন, ঠান্ডার কারণে যাত্রীরা রিক্সায় উঠতে চায় না। আগে আধাবেলা রিকশা চালিয়ে দেড় থেকে দুইশ টাকা পর্যন্ত আয় হতো। বর্তমানে সারাদিন মাত্র ৫০ থেকে ৭০ টাকা আয় হয়। পরিবার নিয়ে বড়ই কষ্টে আছি।

পঞ্চগড় নুরুল আলা নুর কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান বলেন, উত্তরের এই সীমান্ত জেলায় বরাবরে অন্য যে কোনো এলাকার তুলনায় বেশি শীত অনুভূত হয়। কিন্তু বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহায়তার শীতবস্ত্র এলাকায় আসে শীত মৌসুম শেষের দিকে। তখন সেই সহায়তায় উপযুক্ত কাজ হয় না। এজন্য সঠিক সময়ে শীতবস্ত্র নিয়ে শীতকাতর এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আকুল আবেদন করছি।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, তীব্র শীতের কারনে সদর হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আমরা যথাসাধ্য চিকিৎসা ও পরামর্শ দিচ্ছি। সদর হাসপাতলে বর্তমান ভর্তিকৃত রোগীদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত।

বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ঠান্ডা এবং বাশি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি প্রচুর পরিমানে শীতকালীন ফলমূল ও সবজি খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কারণ এই মৌসুমের শীতকালীন সবজি ও ফলমূল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

সফিকুল আলম/এআরএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।