আগের চেয়েও সফল এবারের বিপিএল: পাপন

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:২৬ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৫

২০১২ সালে মাঠে গড়ানোর পর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) তিনটি আসর শেষ করে ফেলেছে। কাগজে-কলমের হিসেব ধরলে আরও একটি আসর হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু ফিক্সিংয়ের কালো থাবা আর ফ্রাঞ্চাইজি মালিকদের পাওনা আদায় না করার কারণে ২০১৪ সালে মাঠে গড়াতে পারেনি বিপিএলের তৃতীয় আসর। একবছর অপেক্ষার পর, এ বছরই মাঠে গড়ালো সেই আসরটি।

তবে মাঠে গড়ানোর আগে অনিশ্চয়তাও কম ছিল না। পুরনো ফ্রাঞ্চাইজিদের পাওনা পরিশোধ, নতুন ফ্রাঞ্চাইজি পাওয়া, তাদের কাছ থেকে নিশ্চয়তা নেওয়া, যেন আগের মত কোন অভিজ্ঞতা না হয়। এ নিয়ে নিজেদের তৈরী আইনই বেশ কয়েকবার ভেঙেছে বিসিবি। অজুহাত হিসেবে তারা বলেছিল, ক্রিকেটের স্বার্থেই করা হচ্ছে এসব। সবশেষে সব শঙ্কা আর অনিশ্চয়তা কাটিয়ে মাঠে গড়ালো বিপিএলের তৃতীয় আসর। নানা ঘটন আর অঘটনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বিপিএলের তৃতীয় আসর।

তাও প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেলো। অবশেষে আয়োজক বিসিবি আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের সাফল্যগাথা মানুষকে জানানোর জন্য আয়োজন করলো সংবাদ সম্মেলন। সেখানেই বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন দাবি করলেন, আগের দুই আসরের চেয়েও সফল হয়েছে এবারের আয়োজন। দু’একটা বিপত্তি বাদ দিয়ে এবারের বিপিএলকেই সবচেয়ে গোছালো এবং শৃঙ্খল ছিল বলে দাবি করলেন।

বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘আগের দুই আসরের চেয়ে এবারের বিপিএল অনেক বেশি গোছালো ও শৃংখলাপূর্ণ ছিল। হয়তো দুই-একটা বিপত্তি ছিল; কিন্তু সব মিলিয়ে এবারের বিপিএল বেশ ভালোভাবেই শেষ করতে পেরেছি আমরা। ৬৫ জন বিদেশি ক্রিকেটার খেলে গেছেন। ৬ জন কোচ, কোচিং স্টাফরা ছিলেন। সবাই বিপিএলের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তারা বিপিএল নিয়ে দারুণ ইতিবাচক। দর্শদের কাছ থেকেও অকল্পনীয় সাড়া পেয়েছি। প্রতিটা ম্যাচে আমরা প্রচুর দর্শক দেখেছি। প্রায় সব গ্যালারিই ভরা ছিল। এটাও প্রমাণ করে এবারের বিপিএল তাদের আকৃষ্ট করেছে।’

তবে বিপিএল আয়োজনের টোটাল চ্যালেঞ্জকে একটু বিরক্তিকরই বললেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, `আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে বিপিএলটা একটু পেইনফুল। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর এই একটা ব্যাপারই পেইনফুল ছিল। দলগুলো এসে কথা দিয়ে যায় যে, টাকা দিয়ে দেবে; কিন্তু পরে আর দেয় না। কি আর করব বলেন!’

যতই বিপিএলকে সফল আয়োজন বলুন না কেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট, এবারের আসরে অনেকগুলো লো স্কোরিং ম্যাচ দর্শকদের মধ্যে বিরক্তির চরম সীমায় উঠে গিয়েছিল। এ বিষয়টা কিভাবে দেখছে বিসিবি এবং আগামী মওসুমে ভেন্যু বাড়ানো হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘প্রতিদিন দুটি করে ম্যাচ হওয়াতে উইকেট আসলে সেভাবে তৈরি করা যায়নি। তবে আমার মনে হয় উইকেটটা দেখেশুনে খেলার মতো ছিল। সাঙ্গাকারার ব্যাটিং দেখেন। সে প্রায় প্রতি ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরি বা রান পেয়েছে। তবে এমন উইকেট ছিল না যে গিয়েই আপনি চার-ছয় মারবেন। এটা আমাদের জন্য একটা শিক্ষা হতে পারে। ভবিষ্যতে কোথাও এমন উইকেট পেলে কিভাবে খেলতে হবে ক্রিকেটাররা বুঝতে পারবে। আর ভেন্যু বাড়ানোর বিষয়টা আমাদের মাথায় আছে। অবশ্যই পরের আসরে ভেন্যু বাড়ানো হবে ‘

বিপিএল শুরুর আগে ফ্রাঞ্চাইজি নিয়ে বেশ ঝামেলা হয়েছিল। বিসিবির নিলামে অনেক কোম্পানিই সাড়া দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল ৫টি কিংবা ৬টির বেশি দল আসছে না। যে কারণে, বরিশাল বার্নার্স নামে যে ফ্রাঞ্জাইজিটি ছিল তাদেরকে শেষ মুহূর্তে ডেকে আনা হয়েছে। এবার তারা পরে পেয়েছিল সিলেটের ফ্রাঞ্চাইজি। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ফ্রাঞ্চাজি বিষয়ে আমরা বেশ ভেবে-চিন্তেই এগিয়েছি। এমন কোম্পানিকে আমরা চেয়েছি যাদের টাকা আছে। ভিন্ন কাউকে চাইনি। ওইরকম কোম্পানিদের নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি করতে গেলে দেখা যাবে তাদের কারো কাছেই টাকা নেই। বা তারা ক্রিকেটই বোঝে না ‘

আগের ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর কাছে এখনও অনেক টাকা বকেয়া রয়ে গেছে বিসিবির। বিষয়টা সম্পর্কে বিসিবি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তিনটি কোম্পানির কাছে আমাদের পাওনা আছে। পাওনা আদায়ে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনি ব্যবস্থা নিব। তাদের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করব। তিনটি কোম্পানির কাছে আমাদের প্রায় ২০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।’

এবারের আসরকে সফল বলার আরেকটা কারণ আছে বিসিবি প্রেসিডেন্টের। তিনি জানিয়েছেন খেলোয়াড়দের পাওনা বিষয়টি এবার আর খুব একটা ঝুলে নেই। বিসিবি প্রেসিডেন্ট সংবাদ সম্মেলনে তথ্য দেন এ বিষয়ে, ‘কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এবং চিটাগং ভাইকিংস তাদের সব ক্রিকেটারের শতভাগ পাওনা মিটিয়ে দিয়েছে। রংপুর রাইডার্স বিদেশিদের শতভাগ এবং দেশি ক্রিকেটারদের ৭৫ শতাংশ পাওনা পরিশোধ করেছে। এছাড়া বরিশাল বুলস, ঢাকা ডাইনামাইটস ও সিলেট সুপার স্টার্স সব ক্রিকেটারের ৭৫ শতাংশ পাওনা দিয়ে দিয়েছে।’

বিপিএল দিয়ে জাতীয় দলের প্রস্তুতি কেমন হয়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিবি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘টি-টোয়েন্টির বড় দুটি আসরের জন্য এই টুর্নামেন্ট খুবই সহায়ক হবে বলে আমার বিশ্বাস। যাদের ওপর অনেক আশা ছিল এমন অনেকেই তেমন কিছু করতে পারেনি। আবার পুরোনোরা বেশ কয়েকজন ভালো পারফরম্যান্স করেছে। নতুন কিছু ক্রিকেটার আমাদের চোখে পড়েছে। যেমন, সাব্বির যাকে টি-টোয়েন্টি অন্যতম সেরা ভাবি আমাদের দলের জন্য। সে প্রথম দিকে রানই পায়নি। তবে শেষের দিকে ভালো করেছে। এতে হয়তো সে আত্মবিশ্বাসী নিজের ফর্ম ফিরে পেয়েছে বলে।’

ঢাকা ডাইনামাইটস দর্শকদের নিয়ে গ্যালারিতে যে কাণ্ড ঘটিয়েছিল এ বিষয়ে বিসিবির পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিসিবি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি ওই সময় বক্সে ছিলাম। ভেবেছিলাম ঢাকার দল এসেছে। তাই গেট খুলে দেয়া হচ্ছে; কিন্তু দেখলাম মানুষ হুড়হুড় করে ঢুকছে। আমি তাদেরকে বের করে দিতে বলেছি। তাদেরকে পরে ৪ নম্বর গেট দিয়ে বের করে দেয়া হয়েছে। অবশ্যই আমি এ বিষয়টি দেখে বিস্মিত হয়েছি। আমরা চেষ্টা করেছি একই ঘটনা যেন বারবার না হয়।’

বিপিএলের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, বিপিএল গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান আফজালুর রহমান সিনহা, সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক, বিসিবির পরিচালক মঞ্জুর কাদের, জালাল ইউনুস, শেখ হোসেল, মাহবুব আনাম এবং লোকমার হোসেন ভুঁইয়া।

আইএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।